ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

পবার সেই ওসির বিরুদ্ধে এবার মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পবার সেই ওসির বিরুদ্ধে এবার মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ

পবা থানার ওসি আলমগীর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : রাজশাহীর পবা থানার আলোচিত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীরের বিরুদ্ধে এবার মামলা-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।

 

একটি অপহরণ মামলায় বাদীর অজ্ঞাতসারে অতিরিক্ত পাঁচজনকে আসামি করায় বাদী আদালতে গিয়ে হলফনামা দিয়েছেন।

 

এদিকে আদালতে হলফনামা দেওয়ায় ওসি আলমগীর ক্ষিপ্ত হয়ে বাদীকেই নির্যাতন ও জেলে ঢোকানোর হুমকি দিচ্ছেন। আর ওসির ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মামলার বাদী। এমনকি অপহৃতরা অপহরণকারীদের আস্তানা থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও ওসির ভয়ে তারাও আদালতে যেতে পারছেন না।

 

অভিযোগে জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট রাতে রাজশাহীর পবা উপজেলার গহমাবোনার সেলিমের ছেলে রাজন (২২ ) ও দেওয়ান আলীর ছেলে শফিকুলকে (২৩) পদ্মা নদীতে মাছ ধরার কথা বলে নিয়ে গিয়ে তাদের অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখা হয়।

 

এ কাজে জড়িতরা হচ্ছে খোলাবোনা এলাকার আবদুল জব্বারের ছেলে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী কামাল (৩৫) ও হাসিবুল, একই এলাকার আবদুস সালামের ছেলে আলমগীর (২৮), মোজাম্মেলের ছেলে দিপা এবং সাম মোহাম্মদের ছেলে মিজান (৩৭)। 

 

তারা রাজন ও শফিকুলকে ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে তাদের পরিবারের কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে।

 

এদিকে ছেলেকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে মো. সেলিম গত ২৪ আগস্ট ওই পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে পবা থানায় মৌখিকভাবে এজাহার দেন। থানার ওসি আলমগীর নিজেই বাদীর মৌখিক এজাহার লিপিবদ্ধ এবং একটি মামলা রেকর্ড করেন। মামলা নম্বর- ২৪ তাং-২৪/৮/২০১৫।

 

মামলার বাদী মো. সেলিম অভিযোগ করেন, ‘আমি আমার ছেলেকে অপহরণের অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি। পরে পুলিশের লিখে দেওয়া এহাজারে শুধু স্বাক্ষর করি। ওসি মামলা রেকর্ডের আগে তাদেরই লিখে দেওয়া এজাহার আমাকে পড়ে শোনান। তাতে পাঁচ আসামির নামই আমাকে শোনানো হয়। কিন্তু মামলা রেকর্ডের পর আমাকে এজাহারের কোনো কপি দেওয়া হয়নি।

 

পরদিন আমি আদালত থেকে মামলার এজাহার ও প্রাথমিক তথ্য বিবরণী তুলে জানতে পারি ওসি আলমগীর আমার দেওয়া পাঁচ অপহরণকারীর নামের বাইরে হরিপুরের আবদুল মালেকের ছেলে হাসান আলী (৪৮) ও বেড়পাড়ার সামসুর ছেলে টাইমসহ (৩২) অজ্ঞাত আরো পাঁচজনকে আসামি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।’ 

 

মামলার বাদী সেলিম আরো বলেন, ‘আমি আমার ছেলে রাজন ও শফিকুলকে অপহরণের দায়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করলেও ওসি অসৎ উদ্দেশ্যে বাকি সাতজনকে আসামি করেছেন। ফলে আমি গত ২৬ আগস্ট নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে আদালতে হলফনামা প্রদান করি। হলফনামায় আমি জানাই, অপহরণ মামলায়  আমি হাসান ও টাইমসহ অজ্ঞাত পাঁচজনকে বা আর কাউকে আসামি করিনি।’

 

এদিকে এরই মধ্যে ওসি আলমগীর প্রধান আসামি কামাল ও তার ভাই বাজিতকে গ্রেফতার করেন। অন্যদিকে ২৭ আগস্ট গোদাগাড়ী থানার ওসি এই মামলার আরো এক আসামি হাসান আলী ওরফে হাসান ঘাটিয়ালকে ফেনসিডিল পাচারের প্রস্তুতিকালে বিদিরপুর থেকে গ্রেফতার করেন।

 

অভিযোগে জানা গেছে,  গ্রেফতারকৃতদের থানায় নির্যাতন না করার শর্তে ওসি আলমগীর তিনজনের পরিবারের কাছ থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আদায় করেন।

 

এ ছাড়া গ্রেফতারকৃত আসামিদের পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করলেও ওসি রিমান্ড শুনানির জন্য আদালতে যাননি। আদালত গত ২৮ আগস্ট দ্বিতীয় দিনের মতো রিমান্ড শুনানির জন্য মামলাটি আদালতের তালিকায় রাখলেও দ্বিতীয় দিনেও ওসি আদালতে যাননি।

 

উল্লেখ্য, আলোচিত এই অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি নিজেই। শেষ পর্যন্ত আদালত রিমান্ডের আবেদন বাতিল করে দেন।

 

গ্রেফতারকৃতদের পরিবারসহ এলাকাবাসী জানান, রিমান্ডের আবেদন করলেও ওসির সঙ্গে আসামিদের পরিবারের সমঝোতা হওয়ায় তিনি আর রিমান্ড শুনানি করতে আদালতে হাজিরই হননি।

 

এদিকে এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্টরা অভিযোগে বলেন, বাদীর দেওয়া নামের বাইরে দুই আসামি হাসান ও টাইমের ব্যাপারে বাদী আদালতে হলফনামা দেওয়ার পর থেকে ওসি আলমগীর বাদীকে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। বাদীকে মামলায় জড়িয়ে দিয়ে ওসি গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছেন বলে বাদী অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া ভিকটিমরা গত ২৯ আগস্ট পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও ওসির ভয়ে তাদের আদালতে হাজিরও করতে পারছেন না বাদী।

 

এলাকাবাসীর অভিযোগ থেকে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে পবা থানায় ওসির দায়িত্ব নেওয়ার পর হরিপুরের ফেনসিডিল পাচারকারীদের থানায় ডেকে এবং তাদের ফোন করে ওসি আলমগীর মাসোহারা নির্ধারণ করে দেন। অধিকাংশ মাদক ব্যবসায়ী ওসির ডাকে সাড়া দিলেও হাসান ঘাটিয়াল ও টাইম তার ডাকে সাড়া দেননি। আর এই ক্ষোভেই বাদীর অগোচরে তাদের এই অপহরণ মামলায় আসামি করা হয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর আসামিরা সবাই আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।

 

অভিযোগের ব্যাপারে ওসি আলমগীরের সঙ্গে ল্যান্ডফোন এবং মোবাইল ফোনে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ জন্য অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

 

তবে এ ব্যাপারে এএসপি (সদর-সার্কেল) আবদুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলা গ্রহণের এখতিয়ার সম্পূর্ণ ওসির। তবে বাদীকে না জানিয়ে যদি কাউকে আসামি করা হয় এবং বাদীপক্ষ থেকে যদি অভিযোগ করা হয়, তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

 

প্রসঙ্গত, ওসি আলমগীরের বিরুদ্ধে হয়রানি করে টাকা আদায় ও গ্রেফতার বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ আদায় ছাড়াও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলার অভিযোগে পুলিশের সিকিউরিটি সেলে একাধিক অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে।



রাইজিংবিডি/রাজশাহী/৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/তানজিমুল হক/সনি/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়