ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পরির সঙ্গে আমি || রণজিৎ সরকার

রণজিৎ সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ৩ জুলাই ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পরির সঙ্গে আমি || রণজিৎ সরকার

মন খারাপ। ভীষণ মন খারাপ আমার। অন্যদিনের চেয়ে আজ একটু বেশি মন খারাপ। পরীক্ষার আর কদিন মাত্র বাকি। টেবিলে বই-খাতা রেখে চেয়ারে বসে আছি। কলমটা দাঁত দিয়ে কামড়াচ্ছি। পড়ায় মন বসছে না। কিছু ভালো লাগছে না আমার। চেয়ার থেকে উঠলাম। জানালার পাশে গিয়ে গ্রিল ধরে দাঁড়ালাম। বাইরের দিকে তাকালাম। দেখতে পেলাম মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। হয়তো বৃষ্টি নামবে। আকাশের অবস্থা আর আমার মনের অবস্থা একদম মিলে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই টিপটিপ বৃষ্টি পড়তে শুরু করল।

 

বৃষ্টির ফোঁটাগুলো হাত দিয়ে ধরতে চাচ্ছি কিন্তু সাহস পাচ্ছি না। যদি জ্বর-সর্দি হয়। তাহলে তো পড়ালেখায় আরো মন বসবে না। পরীক্ষা খারাপ হবে। রেজাল্টও ভালো হবে না আমার। তাই, নানা চিন্তা করে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ধরার ইচ্ছা থাকলেও সাহস পেলাম না। কিছুক্ষণ পর কে যেন বলল, ‘ছোট্টসোনা, তোমার নাম কী?’

 

চমকে উঠলাম। ভয়ে এদিক-ওদিক তাকালাম, কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। শুধু বৃষ্টির ফোঁটা ছাড়া তার আশপাশে আর কেউ নেই। মন আরো খারাপ হয়ে গেল আমার। ভাবলাম, আমার পেছনে হয়তো ভূত লেগেছে। সে জন্যই হয়তো পড়ালেখায় মন বসছে না।

 

আবার শুনতে পেলাম, ‘ ভয় নেই, নামটা বলো তোমার।’
ভয়ে ভয়ে বললাম, আমার নাম পাপন।
‘সুন্দর নাম তোমার। এত সুন্দর নাম কে রেখেছেন? ’
কে রেখেছে তা তো জানি না আমি। আজ জেনে নেব। আচ্ছা, তুমি কে? তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না। আমার খুব ভয় লাগছে। তুমি কি মোটা? তোমার দাঁতগুলো কী লম্বা লম্বা? তুমি কি দৈত্য-দানবের মতো?

 

‘তোমাকে একটু পরে বলি আর আমাকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমি তোমার সব জানি। তোমার আজ ভীষণ মন খারাপ!’
হ্যাঁ, তুমি বুঝতে পারলে কী করে!

 

‘আমি বললাম না, তোমার সব জানি। তোমার মন খারাপ সে জন্যই তো তোমার কাছে এলাম। আমি জানি তুমি খুব ভালো ছেলে, আর আমি ভালো ছেলেমেয়েদের কাছেই যাই।’
আচ্ছা, তুমি কী আমাকে দেখা দেবে না। কণ্ঠ শুনে বিশ্বাস করব কেমন করে। তুমি ভালো না খারাপ। তুমি দেখা দেবে না?

 

‘আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি। তুমি মুখে কলম নিয়ে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছ। ছোট্টসোনা তুমিও আমাকে দেখতে পাচ্ছ। কিন্তু বুঝতে পারছ না।’

 

রেগে গিয়ে বললাম, আগে দেখ দাও, তারপর তোমার সঙ্গে কথা বলব, তার আগে নয়। এই বলে বসে পড়লাম।

 

আবার বলল, ‘পাপন, তোমার খুব রাগ বুঝি! রাগ করো না। বলছি বলছি, খুব তাড়াতাড়ি বলছি।’
তাড়াতাড়ি বলো, না বললে কিন্তু ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ব।
‘বলছি, তবে শর্ত আছে।’
কী শর্ত? তুমি কী আমাকে চুরি করবে!

 

‘না না, সে রকম কিছু না। শুধু কথা দাও আর কখনও রাগ করবে না, পায়ে পড়ে কারও সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করবে না, পড়ালেখায় একদম ফাঁকি দেবে না। আর এমনিতেই কখন মন খারাপ করবে না। তোমার যখন মন খারাপ হবে, তখন আমি বিভিন্ন রূপে তোমার কাছে হাজির হব।’

 

এখন বলো, তুমি আমার কাছে কোন রূপে হাজির হয়েছ? তাড়াতাড়ি বলো। এই দৌড় দিলাম কিন্তু রুমের দিকে।
‘না না, পাপন যেও না, যেও না। বলছি বলছি। আমি এখন হচ্ছি তোমার বৃষ্টিপরি।’
অবাক হলাম, কী! বৃষ্টিপরি!

 

বৃষ্টিপরি একটা পাথর দিয়ে বলল, ‘এইটা যত্ন সহকারে রেখে দেবে, যখন খুব মন খারাপ হবে তখন এই পাথরের চুমু দেবে, সঙ্গে সঙ্গে তোমার কাছে হাজির হব। তবে এই কথাটা কাউকে বলো না কিন্তু।’
আচ্ছা, বলব না কাউকে। তুমি আসবে তো?
‘অবশ্যই। আজ যাই পাপন, তুমি স্মরণ করা মাত্র চলে আসব।’
আসবে কিন্তু।
‘অবশ্যই। বাই।’

 

চলে গেল বৃষ্টিপরি। কিছুক্ষণ চুপচাপ।  মন ভালো হলো আমার। মনোযোগ সহকারে পড়ালেখা করতে বসলাম।


 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ জুলাই ২০১৫/রণজিৎ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়