ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ছিনতাইয়ের ছড়াছড়ি || তাপস রায়

তাপস রায় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ২ ডিসেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছিনতাইয়ের ছড়াছড়ি || তাপস রায়

অলংকরণ : সংগৃহীত

মাছরাঙাও তক্কে তক্কে থাকে।

কোথা থেকে উড়ে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই জানের ওপর জুড়ে বসে; জল থেকে তুলে নেয় শিকার। ছোঁ মেরে ছিনিয়ে নেওয়ার এই ছলায় মানুষও আছে। বনমোরগের প্রত্যাশায় ঝোঁপের আড়ালে ঘাপটি মেরে থাকে যেমন শিয়াল, তেমনি কিছু মানুষকেও মটকা মেরে থাকতে দেখা যায়। উভয়েই থাকে সুযোগের অপেক্ষায়। সুযোগ পেলেই শোনা যায় তাদের মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন-ওই থাম, মোবাইল, মানিব্যাগ না মাথা- কোনডা দিবি ক?

 

যুগ যুগ ধরে আমরা এভাবেই ছিনতাইকারীর হাত থেকে রক্ষা পেতে টিক চিহ্ন দিয়ে আসছি। কিন্তু আর না! বদলে গেছে জামানা, বদলেছে ছিনতাইয়ের ছল। রিস্ক বেড়েছে ছিনতাইকারীদেরও। শুনেছি কোনটা ইমিটেশন, কোনটা গিনি সোনা- বোঝার জন্য তারাও এখন সঙ্গে কষ্টিপাথর রাখে। কেননা গহনাপ্রিয় রমণী শিখেছে চোরের ওপর বাটপারি।

এই তো সেদিন, সুরুৎ করে কে যেন পাশ কাটিয়ে পিছলে গেল। আসলে উড়ে গেল ঠিক ওই মাছরাঙার মতোই। রব উঠল-ধর ধর।

আমার বুক ধরফরিয়ে উঠল। তাকিয়ে দেখি হ্যাঁ ঠিক ধরে ফেলেছে তৌহিদি জনতা। ওই মৌচাক মার্কেটের সামনেই মৌমাছির মতো জমল মানুষ। যারা সপরিবারে ছিল তারা স্ব দায়িত্বে দূর থেকে উঁকি দিতে লাগল। যাদের তাড়া ছিল তারা কাজ ভুলল। আর যারা কোনো কাজেই ছিল না তারা কাজ পেয়ে লাফিয়ে উঠল। যে কোনোদিন চোখ তুলে চায়নি সে-ও চোখ রাঙিয়ে বলল-চোখ তুলে ফেল ব্যাটার।

 

জনতা তখন এরচেয়ে বেটার কিছু খুঁজছে। এর মধ্যে এক মেয়েকে দেখা গেল খোপা থেকে চুলের কাটা এগিয়ে দিতে। তাই দেখে কাটা মাছের মতো লাফিয়ে উঠল ছিনতাইকারী। ওদিকে সাদাসিধে ছেলেটা পারলে তাকে পিষে ফেলে পা দিয়ে। সেই পা ধরেই চলল মিনতি; মিনিটের পর মিনিট। কিন্তু মন আর গলে না।

এবার উদয় হলো উদ্ধারকারী। ঠিক হামজার মতো ভেঁপু তার গলায়- লজ্জা করে না ছিনতাই করতে?

একথা শুনে ছিনতাইকারী ছেলেটা একটুও বিব্রত না হয়ে দ্বিগুণ তেজে জবাব দিল- ওই মিয়া, লজ্জা তো করার কথা আপনের। দেইখা মালদার পার্টিই মনে হইলো, প্লাস্টিকের মোবাইল লইয়া ঘুরেন!

আসলে সেই ভদ্রলোক ছেলের জন্য খেলনা মোবাইল কিনে বাসায় ফিরছিলেন।

ভাবুন অবস্থাটা, এরপর আছে মোবাইল প্যান্ট। দুই ঠ্যাঙ অথচ চৌদ্দ পকেট। বলিহারী ডিজাইন। প্যান্টের কোন পকেটে যে কি রাখা মালিকই ঠিকমত মনে রাখতে পারে না, সেখানে ছিনতাইকারী কোন ছার। এ কারণেই ছিনতাইকারীরা এখন কমান্ডো স্টাইলে আদেশ দেয়্- চিল্লাবি না, কি কি আছে বাইর কর।

আপনি যদি এই সময় সঠিক উত্তরের পাশে দ্রুত টিক চিহ্ন দিতে পারেন তবেই রক্ষা, নচেৎ অক্কা।

 

রণে-বনে, জলে-জঙ্গলে সর্বত্রই ছিনতাইকারীর অবাধ বিচরণ। শিশু থেকে বৃদ্ধ, বাঁদী থেকে বেগম সবাই এর শিকার। কেউ অফিসে বসে ফাইল ঠেকিয়ে ছিনতাই করে, কেউ পিস্তল ঠেকিয়ে রাজপথে। আবার সেই রাজপথ যখন ছিনতাই হয়ে যায় তখন জ্বলে ওঠে আগুন। ভোট ছিনতাই করে ক্ষমতায় যাওয়া যায় কিন্তু ছিনতাই করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না। অথচ জোর করে ভালোবাসা পেতে ব্যর্থ হয়ে যুবক হাতে তুলে নেয় এসিড। প্রেমিক থেকে মুহূর্তেই সে হয়ে ওঠে পশু। নিমিষেই ছিনতাই হয়ে যায় তার বোধ, শুভবুদ্ধি।

নির্জন রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের ছায়া দেখেও ইদানীং চমকে উঠতে হয়্। ভাবছেন এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে বিমানে চড়ে বিদেশ পাড়ি জমাবেন। সেখানেও এই জালিম আছে। বিমানসহ আপনি নিজেই তখন ছিনতাই হয়ে যেতে পারেন।

 

বছরের মাঝামাঝি সময়ের দুর্ঘটনা। সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে সেদিন উত্তেজনার পারদ চরচর করে চড়ছে; এক্কেবারে টু দি পাওয়ার ফোর। কর্তৃপক্ষ পড়েছে মহাফাঁপরে। কারণ বিমান হাইজ্যাক করে তাদের বিমানবন্দরে নামিয়েছে দুষ্কৃতিকারী। তার সঙ্গে বোমা আছে। দাবি না মানলে ফুট্টুস; উড়িয়ে দেওয়া হবে বিমান।

কী তার দাবি? দাবি, স্ত্রী তার সঙ্গে দীর্ঘদিন যোগাযোগ রাখছে না। সে অনেক চেষ্টা করেছে। হন্যে হয়েও ফল শূন্য। এখন স্ত্রীকে তার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে হবে।

অগত্যা স্ত্রীকে অনুরোধ করে আনা হলো বিমানবন্দরে। ছাড়া পেল যাত্রীরা। তবে সাইফ আল দ্বীন মুস্তাফা অর্থাৎ সেই ছিনতাইকারী জেল থেকে এখনও ছাড়া পেয়েছে কিনা জানি না।

তাই বলছি, ভাগ্য সব সময় এতো ভালো না-ও হতে পারে। সব সময়ই যে ছিনতাইকারী মানিব্যাগের সব টাকা রেখে দাতা মহসীন মুডে খুচড়া নোট হাতে গুঁজে দিয়ে বলবে ‘সোজা বাড়ি যাবি’ এমন ভাবা বোকামি। সুতরাং সময় থাকতে দেহের যত চিপা আছে সেখানে কিছু টাকা হলেও সযত্নে রেখে দিন। বিপদে এই অধমের লেখাটা দেখবেন ঠিক মনে পড়বে। 

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ডিসেম্বর ২০১৬/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়