ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সন্তানের লাশের অপেক্ষায় বৃদ্ধ বাবা-মা

সোহেল মিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সন্তানের লাশের অপেক্ষায় বৃদ্ধ বাবা-মা

সন্তানের লাশের অপেক্ষায় বৃদ্ধ বাবা-মা (ইনসেটে- মফিজ খান)

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : যে বয়সে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আনন্দে জীবন-যাপন করার কথা সেই বয়সে এসে এখন সন্তানের লাশের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে হচ্ছে বৃদ্ধ বাবা-মার। ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে যে যুবক পাড়ি জমিয়েছিল প্রবাসে, সেই যুবক এখন লাশ হয়ে পড়ে আছে বিদেশের মাটিতে। যুবকের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যায় একটি দরিদ্র পরিবারের।

 

লিবিয়া উপকূলের কাছে নৌকা ডুবিতে ২৪জন নিখোঁজ বাংলাদেশিদের মধ্যে হতভাগ্য ওই যুবকের নাম মফিজ খান (২৬)। মফিজ রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাবুপাড়া ইউপির দুর্গাপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক নজরুল ইসলাম খানের ছেলে।

 

৭ বছর আগে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে মিশর গিয়েছিলেন মফিজ খান ।  সেখান থেকে মাস দুই হলো তিনি লিবিয়ায় যান। মফিজ খানের ছোট ভাই বক্কার খান থাকেন ইতালিতে। ছোট ভাইয়ের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সাগর পথে রওনা হয় সে। কিন্তু সেখানেই  নৌকা ডুবিতে করুণ মৃত্যু হয় মফিজের।

 

সোমবার বিকালে মফিজের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার  বাড়িজুড়ে চলছে শোকের  মাতম। সন্তানের লাশের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন বৃদ্ধ বাবা-মা।

 

পরিবারের সদস্যরা জানান, ৩ বছর  আগে মফিজ  বেড়াতে এসেছিলেন বাড়িতে । ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে ৩ ছেলে ২ মেয়ের মধ্যে সবার বড় মফিজ। তাকে দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিদেশ পাঠিয়েছিল এই পরিবার । ১ বছর আগে মফিজ তার ছোট ভাই টুটুলকে লিবিয়ায় নিয়ে যান। ছোট ভাইকে লিবিয়ায় নেওয়ার পর সেখানে অবস্থানরত বাঙালি দালালের মাধ্যমে পাঠায় ইতালিতে। সর্বশেষ ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে সে নৌকা যোগে ছোট ভাই টুটুলের কাছে যাবার জন্য রওয়ানা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবিতে মৃত্যু হয় তার।

 

নিহত মফিজের মা আলেয়া বেগম বলেন , ‘গত সোমবার  ছেলের সাথে তার শেষ কথা হয়েছিল । মফিজ বলেছিল ঈদুল আযহায় নাও আসতে পারি। একটি কাজ সম্পন্ন করে তবেই বাড়ি আসবে।’

 

নিহত মফিজের বাবা নজরুল ইসলামের  দাবি, তার বড় ছেলে মফিজকে যেন শেষ বারের  মতো একবার দেখতে পারেন। সরকারের কাছে দাবি করেন যেন তার সন্তানের লাশটি তাকে এনে দেওয়া হয়।

 

নিহত মফিজের চাচাতো ভাই লিবিয়া হতে আসা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘লিবিয়া থাকাকালীন তিনি দেখেছেন কত কষ্ট করে মানুষ  জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইতালিতে যায়। সেখানে রয়েছে অসংখ্য বাঙালি দালাল। যারা কম টাকা নিয়ে লিবিয়া থেকে ইতালিতে পৌঁছে দেয় নৌকার মাধ্যমে।’ লিবিয়া থেকে ইতালিতে নৌকাযোগে যেতে ৭২ ঘন্টা সময় লাগে বলেও জানান তিনি।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ রাজবাড়ী/১ সেপ্টেম্বর ২০১৫/সোহেল মিয়া /টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়