অ্যাসাইনমেন্টের চাপে ‘চিড়ে-চ্যাপ্টা’ অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা
জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
করোনায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘হোম-অ্যাসাইনমেন্ট’ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে, এজন্য কোনো অর্থ নেওয়া যাবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরই আলোকে দেশের অন্যান্য এলাকার মতো মানিকগঞ্জেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট নিচ্ছে স্কুলগুলো। তবে, অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন অ্যাসাইনমেন্টের টাকার চাপে তারা ‘চিড়ে-চ্যাপ্টা’ হয়ে পড়েছেন। আর অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বলছেন, অ্যাসাইনমেন্টে নয়, বকেয়া আদায় করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার হরিরামপুর উপজেলার এম এ রাজ্জাক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও রামকৃষ্ণপুর এম এ জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে আস্যাইনমেন্টের জন্য অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এর পরিমাণ ৫০০ থেকে প্রায় ২০০০ টাকা পর্যন্ত বলেও অভিভাবকরা জানান। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, এই টাকা অ্যাসাইনমেন্টের নয়, চলতি বছরের বেতনসহ বিভিন্ন খাতের বকেয়া আদায় করা হচ্ছে।
আন্ধারমানিক এলাকার নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিয়াম বলে, ‘বিদ্যালয় আমার কাছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা চেয়েছে। এত টাকা দেওয়ার মতো আমার বাবার সামর্থ্য নেই। তাই ৫০০ টাকা দিয়েছি। বিনিময়ে কোনো রসিদ দেই নেই, তবে একটা প্রশ্নপত্র দিয়েছে। বাকি ৮৫০ টাকা দ্রুত পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।’
মানিকনগর গ্রামের বাসিন্দা সুনিতা সাহা বলেন, ‘আমার নাতনি রামকৃষ্ণপুর এম এ জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণিতে পড়ে। তার কাছে স্কুল থেকে ১ হাজার ৯৮০ টাকা চেয়েছে। আমি ৫০০ টাকা দিয়েছি। বাকি টাকা অ্যাসাইনমেন্ট শেষ হওয়ার আগেই দিতে বলেছে। ’
আন্ধারমানিক গ্রামের গোপীনাথ দত্ত বলেন, ‘আমার ছেলে এম এ রাজ্জাক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। অ্যাসাইনমেন্ট, পরীক্ষার ফি ও বেতন বাবদ ২ দফায় ১ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করেছি। তবে, এসব টাকার কোনো রশিদ দেয়নি। ’
অ্যাসাইনমেন্টের জন্য টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন এম এ রাজ্জাক আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ওসমান মিয়া। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু বকেয়া বেতনের টাকা নেওয়া হচ্ছে।’
রামকৃষ্ণপুর এম এ জলিল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আছলাম হোসেন বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বকেয়া বেতন নেওয়া হচ্ছে। তবে অ্যাসাইনমেন্টের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না।’
জানতে চাইলে হরিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিগার সুলতানা চৌধুরী বলেন, ‘অ্যাসাইনমেন্টের জন্য টাকা না নিতে দুই দফা মিটিং করা হয়েছে।’ কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
/এনই
আরো পড়ুন