ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ জুট মিলের সরঞ্জাম ধ্বংসের পথে

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ২০ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৬:৪৯, ২০ জানুয়ারি ২০২৩
খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ৯ জুট মিলের সরঞ্জাম ধ্বংসের পথে

ছবি সংগৃহীত

বিগত আড়াই বছর ধরে নেই কোনো কোলাহল, তাঁতের খটখট শব্দ, আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যস্ততা। সবকিছুই পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। এ চিত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুট মিলের। 

এদিকে, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আঞ্চলিক কার্যালয়টিও যেন এক নিঝুম বাড়ি। কার্যালয়ের ১৪টি কক্ষের সাতটিই বন্ধ। বাকি ৭টি কক্ষে দাপ্তরিক কাজ চললেও পড়েছে ঝুলকালি। অভ্যর্থনা কক্ষটির চেয়ার, টেবিল, সোফাতেও জমেছে ধুলো-ময়লা। কবে মিলগুলো চালু হবে জানে না বিজেএমসির কেউ।

বিজেএমসি সূত্র জানায়, ক্রমাগত লোকসানের কারণে ২০২০ সালের ২৫ জুন খুলনা অঞ্চলের ৯টিসহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি জুট মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এরপর ২০ জুলাই মিলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে দীর্ঘ আড়াই বছর বন্ধ হয়ে আছে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুট মিল। এই দীর্ঘ সময়ে অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে মিলগুলোর ৫ হাজার ৮৩টি তাঁত। 

বিজেএমসির সূত্রমতে, উক্ত তাঁতগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া মিলগুলোর মোট জমি রয়েছে ৫৫০ একর। এই বিশাল জমির অধিকাংশই পড়ে আছে অব্যবহৃতভাবে।

সূত্রমতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুট মিল বন্ধ থাকলেও মিলগুলোর পেছনে সরকারের প্রতি বছর ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বর্তমানে ৯টি জুটমিলের ১ হাজার ৪৩জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। ২০২০ সালের ২০ জুলাই মিলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেড় বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ৬৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ হিসেবে গত আড়াই বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা। এছাড়া মিলগুলোর নিরাপত্তায় বিজেএমসির ২২৯ জন নিরাপত্তারক্ষী ও ৯৮ জন আনসার নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের পেছনেও প্রতি বছর খরচ হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। 

খুলনার খালিশপুরে বিজেএমসির আঞ্চলিক কার্যালয়ের মধ্যে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে রেললাইন

এদিকে, বন্ধের পর ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেড় বছরে বিদ্যুৎ বিল বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। মিলগুলোর যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ বিজেএমসির খাতায় এখনো তোলা হয়নি। 

ক্রিসেন্ট জুট মিলের ৩ নম্বর ইউনিটের তাঁত বিভাগের শ্রমিক ছিলেন মো. ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অর্ধাহারে-অনাহারে আমার পরিবারের দিন কাটছে। পুনরায় মিল চালু হলে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারতাম।’

বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের আহবায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘বন্ধের সময় সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মিলগুলোর যন্ত্রপাতি সংস্কার (বিএমআরই) করে তিন মাসের মধ্যে পুনরায় চালু করা হবে। এরপর প্রায় তিন বছর হতে চললেও মিলগুলো চালু করা হয়নি। অনেক শ্রমিক এখনো তাদের পরিপূর্ণ বকেয়া পাওনা পায়নি। অনেক স্থায়ী শ্রমিকের সঞ্চয়পত্র এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। অনেক শ্রমিকের বিরুদ্ধে মিল কর্তৃপক্ষের দায়ের করা মামলাও প্রত্যাহার করা হয়নি। অনেক শ্রমিক এখনো অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অবিলম্বের যন্ত্রপাতি সংস্কার করে প্রতিদিন নিয়মিত মজুরির ভিত্তিতে মিলগুলো চালু করতে হবে সরকারকে।’ 

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ে কর্মরত এক কর্মচারী নাম প্রকাশে না করার শর্তে বলেন, মিলগুলো বন্ধের আগে দৌলতপুর ও খালিশপুর জুট মিল দুটি বেসরকারি খাতে চলছিল। তখন ওই মিল দুটিতে কোনো লোকসান ছিল না। সরকার ইচ্ছা করলে বেসরকারি খাতে দিয়েও খুলনা অঞ্চলের মিলগুলো চালাতে পারে। এতে সরকারের যেমন লোকসান গুনতে হবে না, আবার শ্রমিক-কর্মচারীরাও খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারবে।

বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আঞ্চলিক সমন্বয়কারী (লিয়াজোঁ কর্মকর্তা) গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বন্ধ মিলগুলো বেসরকারি খাতে পুনরায় চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। লিজ (ভাড়া) দেওয়ার জন্য বেশকিছু টেন্ডারও পড়েছে। বর্তমানে সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। এ কাজগুলো শেষ হলে কয়েকটি মিল চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়