ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

১২ লাখ টাকা দাম হাঁকানো ষাঁড় বিক্রি হয় ৪ লাখে

মো. আবু কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৬, ২৫ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২২:২৮, ২৫ জুলাই ২০২১
১২ লাখ টাকা দাম হাঁকানো ষাঁড় বিক্রি হয় ৪ লাখে

টাঙ্গাইলে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুত করা বড় বড় গরুগুলোর কয়েকটি বিক্রি হয়েছে। আবার কয়েকটি বিক্রি হয়নি। যেগুলো বিক্রি হয়েছে খামারিরা বলছেন, তারা ন্যায্য দাম পাননি। আর যেগুলো বিক্রি হয়নি সেগুলো নিয়ে খামারিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।

আলোচিত এসব গরুগুলো বাহারি নামে পরিচিতি করেন খামারিরা এ সব গরু নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও হয়। 

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ছিলিমপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের কৃষক মো. শফিকুল ইসলামের খামারে চার বছর আগে জন্ম নেওয়া ষাঁড়টির ওজন ছিল ৪০ মণ। বাহামা সংকর জাতের 'টাঙ্গাইলের বস’ নামের গরুটির দাম চাওয়া হয় ১২ লাখ টাকা। তিনি ষাঁড়টি ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। 

শফিকুল ইসলাম বলেন, গরুটি লালনপালন করতে অনেক খরচ হয়। সেই তুলনায় দাম পাননি। এত বড় ষাঁড় আর কখনও লালনপালন করবেন না তিনি। 

দেলদুয়ার উপজেলার ফাজিলহাটী ইউনিয়নের বটতলা গ্রামের প্রবাসী কামরুজ্জামানের স্ত্রী জয়নব বেগমের খামারে প্রস্তুত করা হয় ৩১ মণ ওজনের হিরো আলমকে। কোরবানি উপলক্ষে রাজধানীর গাবতলীর হাটে উঠানো হয় সেটি। সেখানে ছয়দিন ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। কেউ কাঙ্ক্ষিত দাম বলছিল না। দুশ্চিন্তায় পড়েন জয়নব বেগম। ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি ৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। সেটির ১২ লাখ টাকা দাম হাঁকানো হয়। 

জয়নব বেগম বলেন, ষাঁড়টি ২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা দিয়ে কেনেন। এরপর দীর্ঘদিন লালনপালন করতে হয়। সবমিলিয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয় তার। ষাঁড়টির বিক্রি করে তিনি ন্যায্য দাম পাননি। ভবিষ্যতে এত বড় গরু প্রস্তুত করবেন না বলে জানান জয়নব বেগম। 

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার মিরিকপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা জোবায়ের ইসলাম জিসান দুটি ষাঁড় প্রস্তুত করেন। এর একটির নাম শাকিব খান। ৩১ মণ ওজনের শাকিব খানের দাম ধরেন ১৩ লাখ টাকা। অপর ষাড় ডিপজলের ওজন ছিল ৩০ মণ। দাম ধরা হয় ১২ লাখ টাকা। ২ বছর ৭ মাস আগে এই খামারেই জন্ম নেয় ষাড় দুটি।

শাকিব খানের দাম উঠে ৮ লাখ টাকা, আর ডিপজলের দাম ওঠে ৭ লাখ টাকা। শাকিব খানকে ১১ লাখ টাকা এবং ডিপজলকে ১০ লাখ টাকা হলে বিক্রি করে দিতেন খামারি।  

খামারের মালিক জোবায়ের ইসলাম জিসান বলেন, দাম না ওঠায় এ বছর ষাঁড় দুটি বিক্রি করেননি। তিনি আরও এক বছর পাপন করে আগামী বছর কোরবানির ঈদের সময় বিক্রির উদ্যোগ নেবেন।

টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের ভেঙ্গুলিয়া গ্রামের কলেজ ছাত্রী হামিদা আক্তার তার খামারে এবার ঈদকে সামনে রেখে প্রস্তুত করেন দুটি ষাড়। এর মধ্যে ৩৮ মণ ওজনের মানিকের দাম চান ১৪ লাখ টাকা, আর ৩৭ মন ওজনের রতনের দাম চান ১৩ লাখ টাকা। 

চার বছর আগে হলিস্টিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় দুটি তার খামারে জন্ম নেয়। তখন আদর করে এদের নাম রাখা হয় মানিক ও রতন। খামারি হামিদা আক্তার জানান, খামারে ষাঁড় দুটির ২০ লাখ টাকা দাম ওঠে। কিন্তু গরু ব্যবসায়ীরা বাকিতে নিতে চাওয়ায় তিনি বিক্রি করেননি।  

পরে ঈদের আগে ষাঁড় দুটি ঢাকার গাবতলী পশুরহাটে নিয়ে যান। সেখানে মানিকের দাম ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠে। কিন্তু বিক্রি করেননি। পরে বাধ্য হয়ে রতনকে ঈদের দিন ভোরে মাত্র ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। মানিককে আরও এক বছর লালনপালন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হামিদা আক্তার। 

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী এলাকার দুলাল হোসেন ঈদকে কেন্দ্র করে বাংলার রাজা নামে ষাড় প্রস্তুত করেন। এটির ওজন ছিল ৩১ মণ। বছর খানেক আগে স্থানীয় হাট থেকে ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি ৪ লাখ টাকায় কেনেন তিনি। ঈদের আগে এটির দাম হাঁকান ১৩ লাখ টাকা। তবে ক্রেতারা ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত বলেন। দুলাল হোসেন বিক্রি করেননি। বাজার ভালো হলে ভালো দামে বিক্রি করার আশা তার। 

দুলাল হোসেন চকদার বলেন, তিনি খামারে শতাধিক ষাড় লালনপালন করেন। কিন্তু দাম না পাওয়ায় তিনি হতাশ। ভবিষ্যতে এত বড় গরু আর লালনপালন করবেন না। 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়