গণঅভ্যুত্থান, জন আকাঙ্ক্ষা ও সংস্কার
শেখ রফিক || রাইজিংবিডি.কম
খেয়ে-পরে একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই— এই চিৎকার, এই আর্তনাদ আজও প্রতিধ্বনিত হয় কৃষকের ক্ষেতে, শ্রমিকের ফ্যাক্টরিতে, মজুরের স্লোগানে ও চাকরিজীবীর স্বপ্নে। তারা চায় শুধু বেঁচে থাকার অধিকার, একটু শান্তি এবং সন্তানের মুখে হাসি। কিন্তু ৫৪ বছরেও কেউ কথা শোনেনি, কথা রাখেনি। থানা-পুলিশ, আদালত, হাসপাতাল— সবই যেন শত্রুর দুর্গ।
ন্যায়বিচার? উন্নত চিকিৎসা? সমান আইন? সবই যেন স্বপ্নের মরীচীকা। রুশো তার সামাজিক চুক্তি গ্রন্থে বলেছেন, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হলো ‘সাধারণ ইচ্ছা’ বাস্তবায়ন। জন রল্স-এর ‘ন্যায়ের নীতিমালা’ অনুযায়ী একটি ন্যায্য সমাজ গড়তে হলে আইনের শাসন ও সুযোগের সমতা অপরিহার্য যা বাংলাদেশে অনুপস্থিত।
গুলির মুখে বুক পেতে, কারাগারের অন্ধকারে নিঃশ্বাস ত্যাগ করে, গুম, খুন, নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা হারায় জীবন, হারায় পরিবার, সমাজ ও দেশ। কিন্তু এই চিৎকার থামবে না যতদিন না মিলবে মৌলিক অধিকার। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা— যেন আজ দুরূহ স্বপ্নের মিছিল। চাল, ডাল, তেলের দাম আকাশ ছুঁয়েছে, দরিদ্রের পাতে ভাত জুটছে না, পুষ্টিহীনতায় দেহ-মন ক্ষয়ে যাচ্ছে। বাসস্থানের সংকটে শহরে-গ্রামে জীবন দুর্বিষহ। শিক্ষার হার বাড়লেও উচ্চশিক্ষা সুদূরপরাহত, দরিদ্রের সন্তান ঝরে পড়ে অর্থের অভাবে, স্বপ্ন ভেঙে যায় অঙ্কুরেই। সরকারি হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা, বেসরকারি খাতে চিকিৎসার অত্যধিক খরচ— দরিদ্রের জন্য স্বাস্থ্যসেবা যেন এক অলীক স্বপ্ন। মানবাধিকার লঙ্ঘন, ন্যায়বিচারের অভাব, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন, মত প্রকাশের শৃঙ্খল— সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন এক অন্ধকার গহ্বর।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান— দুঃখ-দুর্দশার বিরুদ্ধে জনতার লড়াই, একটু শান্তিতে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম। স্বৈরাচারে জাঁতাকল ভেঙে, ভোটের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, গণতন্ত্রের অধিকার, ফিরে পেতে ছাত্র, জনতা, কৃষক, শ্রমিকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের ঐক্যের বাঁধনে গড়া মহা প্রতিবাদ। গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম, স্বপ্নের বাংলাদেশ, এক নতুন দিনের আহ্বান, মানুষের আশা, চাহিদা, স্বপ্নের সমন্বয়, ন্যায়বিচার, সমৃদ্ধি, সুশাসনের প্রতিচ্ছবি, মৌলিক অধিকার, মানবিক মর্যাদা, ন্যায্য সমাজ গড়ার স্বপ্ন ও প্রত্যাশাই জন আকাঙ্ক্ষার মূল। যেখানে মৌলিক অধিকার পূরণ হবে, যেখানে ন্যায়বিচার মিলবে, যেখানে জীবন হবে সুখে-শান্তিতে ভরা এবং প্রাণবন্ত— এমন সংস্কারের আকাঙ্ক্ষায় ছাত্র-জনতা জীবন উৎসর্গ করেছিল।
পাঁচ আগস্ট, চব্বিশের পরে আবার হামলা-মামলা, আগুন, সন্ত্রাস, মব, গুম, হত্যা, খুন, নির্যাতন ও শত শত অমানবিকতা যা অবর্ণনীয়, অনাকাঙ্ক্ষিত এবং জন আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। তবে কি সংস্কারের আকাঙ্ক্ষায় গুড়েবালি? আওয়ামী গুম হয়ে যাওয়া মানুষ এখনো ফিরলো না, ফ্যাসিস্টরা গ্রেপ্তার হলো না এবং বিচারের আওতায় আনা গেল না। দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ হলো না, পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা হলো না, অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত হলো না, রাষ্ট্রপতি অপসারণ হলো না, সংবিধান পরিবর্তন হলো না, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলো না, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বন্ধ হলো না; দুর্নীতি, ঘুষ, চাঁদা, হত্যা-খুন-ধর্ষণ থামল না, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমানো গেল না, মানুষের আয় বাড়লো না, শ্রমিকের বেতন বাড়লো না, সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হলো না, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলো না; জানমালের নিরাপত্তা মেলেনি, মানবাধিকার রক্ষা হলো না, নিরাপদ পানি ও খাদ্যের নিশ্চয়তা হলো না, পরিবেশ দূষণ রোধ করা গেল না, ময়লা-আবর্জনায় ভরা শহর সুন্দর হলো না, মানুষের ব্যবহার পালটানো গেল না।
র্যাব, পুলিশ, আনসারের শুধু পোশাক সংস্কার? পোশাক বদলালে কি মানুষের চরিত্র বদলায়? যদি তা সম্ভব হতো, তবে শুধু পোশাক বদলেই রাষ্ট্র বা সমাজের সবার চরিত্র পাল্টে যেত।
গণঅভ্যুত্থানের স্বপ্ন ছিল একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার জন আকাঙ্ক্ষা। ছাত্র-জনতা, সকল রাজনৈতিক দল, হকার-শ্রমিক-দিনমজুর, চাকুরিজীবী, পথশিশু— সকল শ্রেণির মানুষ একত্রিত হয়েছিল ন্যায়ভিত্তিক সমাজের প্রত্যাশায়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেই চেতনা আজ ব্যাহত, বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন এখনো অপূর্ণ। ফরাসি বিপ্লব-পরবর্তী সময়ের মতোই এখানেও নেতৃত্বের স্বার্থপরতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সংস্কারকে ব্যাহত করেছে। মিশেল ফুকো যেভাবে ক্ষমতা ও জ্ঞানের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেন, তেমনি বাংলাদেশে ক্ষমতাকাঠামো ন্যায়বিচার ও গণতান্ত্রিক চেতনাকে নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। ফুকোর মতে, ক্ষমতার ‘ডিসিপ্লিনারি মেকানিজম’ অপরিবর্তিত থাকলে প্রকৃত পরিবর্তন অসম্ভব।
শুরু থেকে গণঅভ্যুত্থানে নিহত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দিয়েও সরকার কথা রাখেনি। ক্ষমতা গ্রহণের প্রায় বছর হতে চললেও নিহত-আহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি। দুই হাজার ছাত্র-জনতাকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি। দীর্ঘ পনেরো বছর সাত মাসের হত্যা-খুন-ধর্ষণ, লুটপাট, অর্থপাচার ও দুর্নীতির বিচার শুরু করা যায়নি।
অন্যদিকে দুর্নীতি, ঘুষ, চাঁদা, হত্যা-খুন-ধর্ষণ— সবই চলছে সমান তালে। তাহলে এই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা কি বৃথা গেল? এগারো মাসে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। মাজারে হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হত্যা, খুন এবং ধর্ষণের মতো অপরাধে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অদক্ষতা এবং সরকারের দুর্বল নেতৃত্বই মূল কারণ। ফলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। সরকারের অবহেলায় দেশে শান্তি এবং সামাজিক শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে বিপন্ন হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির চক্রান্তকারী, কালোবাজারি এবং মুনাফাখোর সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য সরকারের ব্যর্থতার বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাল, ডাল, তেল এবং অন্যান্য মৌলিক খাদ্যদ্রব্যের মূল্য ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। সরকার বারবার মূল্য নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে গরিব-দুঃখী, সাধারণ মানুষ, বিশেষত নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। এই ব্যর্থতার দায় কার? কে জবাব দেবে জনগণের কাছে? আর কত দিন চলবে এই অবিচার? জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণের দিন কবে আসবে, কবে ফিরবে ন্যায়ের সুদিন?
সংস্কার ছাড়া সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন অসম্ভব। শুধু কাঠামোগত পরিবর্তন যথেষ্ট নয়, প্রকৃত রূপান্তর তখনই হবে, যখন নৈতিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি, সাংস্কৃতিক চেতনা বদলাবে। দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন যথেষ্ট নয়, যতক্ষণ না তা মান্য হয়। শুধু কাঠামো বদলে না, শুধু শিক্ষাব্যবস্থা বদলে না, যতক্ষণ না দৃষ্টিভঙ্গি পালটে যায়; গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না পায়, যতক্ষণ নাগরিকেরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস না রাখে; এ কারণে সমাজ পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি— ব্যক্তির সততা, সমাজের ন্যায্যতা, রাষ্ট্রের ন্যায়ভিত্তিক নীতি প্রণয়ন। শুধু নীতিকথা নয়, প্রথমে সবাই নিজেকে বদলাও, নিজের ভেতরে চেতনা জাগ্রত করো, এটাই প্রকৃত পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি।
একদল বলছে, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন নয়, আরেকদল চাইছে আগে নির্বাচন তারপর সংস্কার। বাস্তবতা হলো— উভয়ই একে অপরের পরিপূরক। সংস্কার ও নির্বাচন দুটিই প্রয়োজন, জনগণ চায় সুষ্ঠু নির্বাচন, তাদের ভোটাধিকার ফিরে আসুক। প্রথমেই নির্বাচন ব্যবস্থায় সংস্কার করে অবাধ ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনুন। নির্বাচন জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেবে, শাসনব্যবস্থার জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। বিচার ব্যবস্থা, পুলিশ, প্রশাসনে সংস্কার জরুরি, সাংবিধানিক পরিবর্তনও প্রয়োজন, কিন্তু রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে কঠিন। তবে দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ হোক, বিশেষ করে পুলিশ ও বিচার বিভাগে আস্থা ফিরিয়ে আনা দরকার। গণতান্ত্রিক সংস্কারের সফল বাস্তবায়ন নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে সম্ভব। রাজনৈতিক দল ও সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে আইনি সংস্কার সম্ভব। জনগণ যখন তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে ফলাফল দেখে, তখন তাদের আস্থা গড়ে ওঠে। দেশে মৌলিক সংস্কারের প্রয়োজন— তবে এটি জনগণের স্বার্থে হতে হবে। কারণ ‘প্রজাতন্ত্রের মালিক হলো জনগণ’, তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে। প্রথমে জনগণের নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে চালু করা, এটি নিশ্চিত করতে হলে নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অপরিহার্য। আগেই বলেছি, সংস্কার ও নির্বাচন একে অপরের পরিপূরক। এটি নিশ্চিত করবে গণতন্ত্রের মূলনীতি ও জনগণের অধিকার।
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ছিল একটি বৈষম্যহীন ও ন্যায্য সমাজের স্বপ্ন—যেখানে নাগরিকেরা নিরাপত্তা, ভোটাধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিতভাবে উপভোগ করবে। ছাত্র, শ্রমিক, কৃষকসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা ও মানবিকতা থাকবে।
গণমানুষের প্রত্যাশায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়, যার নেতৃত্বে রয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংস্কার চাই, নতুন বাংলাদেশ চাই— এই আশা ছিল মানুষের হৃদয়ে। সাধারণ মানুষের কাছে সংস্কারের মানে হলো—জীবনের মানোন্নয়ন। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, কৃষকের ফসলের মূল্য, চাকরির জন্য ঘুষমুক্ত পদ্ধতি, শিক্ষা ও চিকিৎসায় সমতা—এসবই সংস্কারের মাপকাঠি। কিন্তু শ্রমিকের মজুরি বাড়েনি, কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম পায়নি, সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামেনি, বিশুদ্ধ পানি ও নিরাপদ খাদ্য এখনো প্রতিশ্রুতির ফাঁকা খোলস। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পোশাক বদলেছে, কিন্তু চরিত্র বদলায়নি।
রাজনৈতিক সংস্কার মানে নির্বাচনের স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক দলের জবাবদিহি ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। অর্থনৈতিক সংস্কার মানে কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও অংশগ্রহণমূলক প্রবৃদ্ধি। সামাজিক সংস্কার মানে লিঙ্গ, ধর্ম, জাতিগত বৈষম্য দূর করে ন্যায় ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলা। সাংস্কৃতিক সংস্কার মানে প্রগতিশীল, কুসংস্কারহীন সমাজচিন্তা প্রতিষ্ঠা।
আগে প্রয়োজন চিন্তা, নৈতিকতা ও সাংস্কৃতিক চেতনার রূপান্তর। দুর্নীতি রোধে কঠোর আইন কার্যকর করতে হলে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি। গণতন্ত্র রক্ষায় শুধু নির্বাচন নয়; নাগরিকের চেতনায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি দরকার। তাই, চিন্তা-চেতনার সংস্কার ছাড়া সব সংস্কারই ব্যর্থ হবে। সমাজ-রাষ্ট্র পরিবর্তনের মূল চাবিকাঠি—ব্যক্তির মানবিক বিকাশ, চেতনা, সততা ও সুন্দর কর্ম।
বর্তমান ও অতীতের বিভাজন, বিরোধ এবং প্রতিশোধের রাজনীতি বাদ দিয়ে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন। বিরোধীদের প্রতিপক্ষ নয়, বরং সহযোগী হিসেবে দেখা হবে। তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে মামলা, দমননীতি বা শক্তি প্রয়োগের প্রচেষ্টা বাদ দিতে হবে। সব রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতিকে সম্মান জানিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক দর্শন তৈরি করতে হবে। যেখানে প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার, সুযোগ এবং মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়। এখানে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ, পেশা বা অন্য কোনো বৈষম্যের স্থান নেই। সবাই রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অংশীদার।
‘প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ’— এই বক্তব্যকে সত্যি করতে হলে রাষ্ট্রকে জনগণের সাথে নতুন সামাজিক চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হবে। সংস্কার কেবল কাঠামোগত নয়, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক হতে হবে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে নাগরিকদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস প্রমাণ করে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই পারে স্বৈরাচারের মসনদ ভাঙতে। ১৯৬৯, ১৯৯০, ২০২৪— প্রতিটি গণআন্দোলনই নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু সেই ভোর তখনই সত্যি হবে, যখনই ক্ষমতার কেন্দ্রে বসবেন ‘সাধারণ মানুষ’ আর রাষ্ট্র হবে সকলের মৌলিক অধিকারের রক্ষক এবং জনতার প্রকৃত সেবক।
লেখক : গবেষক ও রাজনৈতিক কলাম লেখক