‘ওরা জেনেশুনে ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে’
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
‘‘কোম্পানির লোকজন আমার ভাইকে জনতার হাতে তুলে না দিয়ে পুলিশের কাছে দিতে পারতো। তাহলে ভাইয়ের এমন নির্মম মৃত্যু হতো না। ওরা জেনেশুনে ভাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।’’
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) বিলাপ করতে করতে কথাগুলো বলছিলেন নিহত দীপু চন্দ্র দাসের বোন চম্পা দাস।
তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাই বিএ পাস। সে বাটন মোবাইল ব্যবহার করে। ধর্ম নিয়ে তার যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। নবীকে নিয়ে কটূক্তি করার মতো মানুষ সে নয়।’’
‘‘উৎপাদন বৃদ্ধি নিয়ে শ্রমিক ও মালিকদের সঙ্গে তার বিরোধ থাকার কথা শুনেছি। সেই কারণেই হয়তো তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে,’’ বলেন চম্পা দাস।
বৃহস্পতিবার রাতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে বিক্ষুব্ধ জনতা দীপু চন্দ্র দাসকে (২৮) পিটিয়ে হত্যা করে লাশ গাছের ডালের সঙ্গে বেঁধে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
দীপু চন্দ্র দাস (২৮) জেলার তারাকান্দা উপজেলার মোকামিয়া কান্দা গ্রামের রবি চন্দ্র দাসের ছেলে। ভালুকার জামিরদিয়া পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানিতে তিনি চাকরি করছিলেন।
নিহতের বাবা রবি চন্দ্র দাস বলেন, ‘‘পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিল দিপু। কয়েক বছর হয়েছে বিয়ে করছে। আমার ছেলেটা কোন অন্যায় করে থাকলে তার একটা হাত-পা ভেঙে পুলিশের হাতে তুলে দিতো। তাও তো আমার ছেলেটা প্রাণে বাঁচতো। এ ভাবে ছেলের মৃত্যু কোনো দিন কল্পনাও করিনি।’’
নিহতের স্ত্রী মেঘনা রানী বলেন, ‘‘আমার একমাত্র সন্তান বাবা হারা হয়েছে। অভাবের সংসারে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো? হত্যার যেনো বিচার হয় এটাই চাওয়া।’’
এ প্রসঙ্গে পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কোম্পানির ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে কারখানার গেইটে গিয়ে দেখা করতে চাইলে অনুমতি মেলেনি।
তবে কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ড ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘‘দীপু চন্দ্র দাসকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমা চাননি। যার কারণে কোম্পানির ভেতর এবং বাইরে জানাজানি হলে লোকজন গেইটের সামনে এসে জড়ো হয়ে ভাঙচুর চালায়। পরে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে তাকে জনতার হাতে তুলে দেয়।’’
ভালুকা মডেল থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘‘এ ঘটনায় ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে অর্ধপোড়া লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘শতশত মানুষের মধ্যে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। পরে পুলিশ দুই ঘণ্টার চেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।’’
পরিবারের লোকজন অভিযোগ করলে মামলা নেওয়া হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
ঢাকা/মিলন//