‘বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে নিয়ে উদ্বিগ্ন নই, বরং আশাবাদী’

জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেছেন, ‘নতুন প্রজন্মের সিংহভাগই নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সুষ্পষ্ট ধারণা এবং পরিকল্পনা নিয়েই বড় হচ্ছে। দেশের মানুষও একটি নির্দিষ্ট সময়ান্তরে ভালো কিছুর স্বপ্ন নিয়েই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।’

বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় টরন্টোয় পাঠক, ভক্ত, শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে এক লেখক আড্ডায় তিনি এ কথা বলেন। 

কানাডার বাংলা পত্রিকা ‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক  শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালনায় টরন্টো ফিল্ম ফোরামের মাল্টিকালচারাল সেন্টারে অনুষ্ঠিত এই লেখক আড্ডায় কবি আসাদ চৌধুরী সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি এনায়েত করীম বাবুল এতে সমাপনী বক্তব্য রাখেন। 

আনিসুল হক তার বক্তব্যে নিজের লেখক হয়ে ওঠার কাহিনী বর্ণনার পাশাপাশি সম্প্রতি সমাপ্ত উপন্যাস,  সমসাময়িক কবি-লেখকদের  সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে নিজের  ভাবনা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা  এবং বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। 

খান আদিব আল আশিক-এর গিটারের সঙ্গে ফাতমা সুমাইয়া খান বিদুর কণ্ঠে আনিসুল হকের লেখা কবিতা আবৃত্তি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। টরন্টোর শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষে আতিকুর রহমান কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক এবং কবি আসাদ চৌধুরীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। 

নতুন প্রজন্ম সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে লেখক আনিসুল হক বলেন, ‘তরুণদের বড় একটি অংশই বই এবং অন্যান্য টেক্সট পড়েন। বিভিন্ন ফোরামে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করেন। এর মাধ‌্যমে তাদের পড়াশোনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।’

আনিসুল হক, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার ছয় খণ্ডের উপন্যাস ‘রক্তে আঁকা ভোর’ এর প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এই উপন্যাসের কাজ শুরু করেন। এই উপন্যাসে তিনি বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল একটা সময়কে যতোটা পেরেছি তুলে আনার চেষ্টা করেছি।’ 

বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকতা এবং মিডিয়া নিয়ে এক প্রশ্নে আনিসুল হক বলেন, ‘মিডিয়ার কাজ হচ্ছে সরকারকে পাহারা দিয়ে রাখা। গণতন্ত্রের স্বার্থেই মিডিয়াকে এটি করতে হয়। কার্যকর গণতন্ত্রে সবসময়ই মিডিয়া এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ ভূমিকা রাখে। এতে সরকারই উপকৃত হয়।’ 

তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোসহ বাংলাদেশের অধিকাংশ মিডিয়া পাহারা দেওয়ার সেই কাজটি করে যাচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রকে পাহারা দেওয়ার ক্ষেত্রে কখনো কখনো নরম অবস্থান নিতে হয়। সেটি বাস্তবতার কারণেই করতে হয়।’

কবি আসাদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে কথা সাহিত্যিক আনিসুল হকের মেধা এবং প্রতিভার প্রশংসা করে বলেন, ‘লেখক হিসেবে আনিসুল হক জনপ্রিয় কিন্তু তার সবচেয়ে বড় গুণ তার বিনয়। অকপটে অন্য লেখকের প্রশংসা করা এবং অগ্রজদের সম্মান করার ক্ষেত্রে তিনি অকৃপণ।’ 

আনিসুল হকের ‘রক্তে আঁকা ভোর’ উপন্যাসকে  মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে অসাধারণ কাজ হিসেবে অভিহিত করে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, ‘ইতিহাসকে আশ্রয় করে উপন্যাস লেখার ক্ষেত্রে আনিসুল হক ইতিহাসের প্রতি সত্যনিষ্ঠ থেকেছেন।’  

‘নতুনদেশ’ এর প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, ‘সাহিত্য এবং সাংবাদিকতায় দাপটের সঙ্গে বিচরণের মাধ্যমে আনিসুল হক নিজেকে স্বতন্ত্র স্বত্ত্বা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। মুক্তিযুদ্ধে ভাবধারায় নাগরিকদের মানস গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।’