ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধ ‘অন্তর্দাহ’ ও  অনির্বাণ চেতনা প্রসঙ্গে

মঞ্জু সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ২০ ডিসেম্বর ২০২২  
মুক্তিযুদ্ধ ‘অন্তর্দাহ’ ও  অনির্বাণ চেতনা প্রসঙ্গে

বাংলাদেশের অস্তিত্ব যতদিন থাকবে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চার অনিবার্য প্রাসঙ্গিকতা অস্বীকার করতে পারবে না কেউ। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা? জিনিসটা ইতোমধ্যে বহুল ব্যবহারে ভোঁতা হয়ে গেছে। গত পঞ্চাশ বছরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহার হয়েছে বিস্তর। এই চেতনার দোহাই দিয়ে জিনিসটাকে কারা কীভাবে বিকৃত, বীভৎস ও কিম্ভূতকিমাকার চেহারা দিয়েছে, ফায়দা লুটেছে কারা বেশি এবং জনগণকে কী পরিমাণে বঞ্চিত, বিভ্রান্ত ও বিভক্ত করা হয়েছে, তার সঠিক মূল্যায়ন পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাস লেখা ছাড়া সম্ভব নয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধ কিংবা জনমুক্তির বিষয়টা প্রথমত রাজনীতির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চাতেও তাই রাজনৈতিক দল ও দলীয় প্রধান নেতারাই হয়ে ওঠেন মহানায়ক।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যেহেতু এখন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দলীয় সরকার অধিষ্ঠিত, স্বাধীনতা রজতজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে তাই দলীয় স্বার্থ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একাকার হয়ে গেছে। স্বাধীনতা মানেই স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, আর জাতির জনক মানেই যেন জনগণের মুক্তি!

মুক্তিযুদ্ধকে বাঙালি জাতির হাজার বছরের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল ঘটনা হিসেবে স্মরণ করা হয় বিশেষ বিশেষ দিবসে। একইসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণাসঞ্চারি নেতা বঙ্গবন্ধু মুজিবকে জাতির জনক নয় শুধু, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে অভিহিত করেছেন বহু বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মানুষ। কখনো-বা মনে হয় গোটা রাষ্ট্রযন্ত্র এবং দলীয় শক্তি যেন এই সত্যকে ধ্রুবসত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠায় তৎপর। অন্যদিকে মুক্তিকামী জনতার লড়াকু ঐক্য, ত্যাগ, স্বপ্ন ও সংগ্রামী চেতনার কথা গদবাধা উক্তিতে আটেচারে স্মরণ করা হয় বটে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় এবং আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে এই মূল সত্যের প্রতিফলন ঘটছে কতোটা? এক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য নাকি ব্যর্থতার পাল্লাটাই ভারী?

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্য নিয়ে গবেষক ও সাহিত্য-সমালোচকরা এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন। ভবিষ্যতেও করবেন। আমি নিজেকে যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফসল তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী লেখক হিসেবে বিশ্বাস করি, আত্মস্মৃতিমূলক এ লেখাটাতে তাই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের স্মৃতি সংক্ষেপে স্মরণ করব।

লেখক হিসেবে আমি রাজনীতিমনস্ক অবশ্যই, নিজেকে রাজনীতি সচেতন রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু জাতীয়বাদী, বাম কি বিপ্লবী কোনো রাজনৈতিক দলে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলাম না কোনোদিন, এখনো নই। দলীয় রাজনীতি না করেও দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি মূল্যায়ন করে গবেষণামূলক লেখালেখিতে উৎসাহ বোধ করি না। চেষ্টাও করিনি কখনো।  যৌবনের শুরুতে বাঙালিসুলভ  আবেগাক্রান্ত হয়ে কবিতা লিখলেও কবি হিসেবে খ্যতি-প্রতিষ্ঠা মেলেনি। কবিতা লিখে রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দ দূরে থাক, আল মাহমুদ-শামসুর রাহমানদের ধারেকাছে যেতে পারব না বুঝে কবিতা লেখা ছেড়ে দিয়েছিলাম যৌবনকালেই। অতঃপর শুধু গল্প উপন্যাসই লিখে গেছি। কিন্তু অর্ধ শতাব্দিকাল লেখালেখি করেও অতৃপ্তির ভারে প্রায়শ নিজেকে মনে হয় ব্যর্থ লেখক। তবে জীবনযাপনের যে অভিজ্ঞতার চাপে গল্প-উপন্যাস লেখা, সেইসব অভিজ্ঞতার স্মৃতির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা স্মরণে এলে গর্ব বোধ করি, উদ্দীপ্ত বোধ করি এখনো। এর  কারণ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক স্বরচিত গল্প-উপন্যাসগুলিতে নিহিত আছে মনে করি। নতুন করে মুক্তিযুদ্ধ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সম্পর্কের কথা বলতে গেলে ঘুরেফিরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্প-উপন্যাসের কথা আসবে। আমার প্রায় সব লেখার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত জীবন-অভিজ্ঞতার সঙ্গে সাহিত্যের দূরত্ব কম মনে হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্প-উপন্যাসগুলির ক্ষেত্রে এ কথা আরো বেশি সত্যি।

ব্যক্তি-মানুষের চরিত্র গঠনে তার পরিবার ও শৈশব-কৈশোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ব্যক্তির চিন্তাচেতনা ভালোমন্দ রসদ পায় তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও সমাজ থেকেই। আমার জন্ম পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র ছয় বছর পরে, ঘোরতর মফস্বলী গ্রামের সামন্তবাদী এক পরিবারে। পিতা গ্রামপ্রধান। জন্মের পরই দেখেছি একদিকে ধু-ধু শস্যশ্যামলা কৃষিক্ষেত্র, বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধ প্রকৃতি। আমাদের বাড়ির চারদিকেই কুড়েঘরে বসবসকারী প্রজাতুল্য অনেক দরিদ্র মানুষ। এসব দেখেশুনে শৈশবে নিজের মুক্তির স্বপ্ন হিসেবে বিস্তর ভূসম্পত্তির মালিক পিতার চেয়েও অধিক সম্পদশালী ও ক্ষমতাবান এক জমিদার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। শৈশবের এই স্বপ্ন কৈশোরে মুক্তিযুদ্ধের জাতীয়তাবাদী চেতনায় রূপান্তরিত হতে থাকে গ্রাম ছেড়ে জেলাশহরের স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে। সময়টা ছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের শাসনকাল। কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের উত্তেজনা কালেও স্কুলে পাকসার জমিন সাধবাদ গেয়ে পাকিস্তানি সংহতি রক্ষার কাতারে থেকেছি। অন্যদিকে পাকিস্তানবিরোধী চিন্তাচেতানায় উদ্দীপ্ত হতে শুরু করেছিলাম শহরের রাজনৈতিক মিছিল-মিটিং ও উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে। হাইস্কুলের নাইন-টেনে পড়ার সময়ে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে কলেজ ছাত্রদের মিছিলমিটিং-এ যোগ দিয়ে আইয়ুব খানের গদিতে একসাথে আগুন জ্বালানোর উত্তেজনায় শরিক হয়েছিলাম। জেলের তালা ভেঙে শেখ মুজিবকে মুক্ত করার স্লোগানেও গলা মিলিয়েছি।

জেলার বিখ্যাত এক ছাত্রনেতা ঊনসত্তরের মিছিল-আন্দোলনের সময়ে আমাদের হাইস্কুলে ঢুকে স্কুলের ছাত্রদেরও মিছিলে নামিয়েছিল। স্কুলেও ছাত্রলীগের কমিটি বানিয়ে আমাকে করেছিল সভাপতি। শহরে পরিবার ছাড়া ছিলাম বলে পারিবারিক শাসনমুক্ত স্বাধীনতা ভোগ করেছি। আরো বেশি স্বাধীনতা ভোগের রাজনৈতিক স্বপ্নে স্কুল-পড়াশোনা শিকেয় তুলে মিছিলে ও রাজনৈতিক মিটিং-এ যাই। দেশ, জাতি, স্বাধীকার, মুক্তি ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন মাথায় ঢুকতে শুরু করেছিল সেই সময়েই। দেশাত্মবোধক কবিতাও লিখতাম। পরিচয়সূত্রে  জেলার বিখ্যাত ছাত্রনেতা হারেস ভাই জনসভায় একবার আমাকে কবিতা পড়ার সুযোগ করে দিয়ে বেশ উৎসাহ দিয়েছিলেন। 

সত্তর সালে নির্বাচনের আগে শেখ মুজিব জনসভা ও কর্মীসভা করার জন্য রংপুরে গিয়েছিলেন। টাউন হলে কর্মীসভার ভিড়ে উপস্থিত ছিলাম নিজেও। যাকে এখন বলা হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, সেই নেতার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার সুযোগ পেয়ে কী যে পুলকিত হয়েছিলাম! কাছে থেকে দেখা ও শোনা নেতার ভাষণের কিছু কথা স্মৃতিতে আজো অম্লান। ব্যক্তিগত এইসব স্মৃতি নিয়ে রচনা করেছি ‘একটি হ্যান্ডশেক ও হাজার দীর্ঘশ্বাস’ গল্পটি।

সত্তরেই স্কুলের গণ্ডী পেরিয়ে কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। এরপর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, জাতীয় জীবনের সেই অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে যেভাবে একটা বছর কাটিয়েছি, যত ঘটনা কাছে থেকে দেখেছি এবং নিজের জীবনেও যা ঘটেছে, সেসব স্মৃতিচারণ করতে গেলেও মনে হয় হাজার পৃষ্ঠার বই হবে। মোদ্দা কথাটি হলো, জাতির জীবনে যেমন, তেমিন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও তার পটভূমি আমার ব্যক্তিজীবনেরও শ্রেষ্ঠ সময়। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাই  আমার লেখক চরিত্রকে নির্ধারণ করে দিয়েছে বললে অত্যুক্তি হয় না।

মুক্তিযুদ্ধে শরিক হয়েও শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে কোনো অপারেশনে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তবে অস্ত্র ট্রেনিং-এর জন্য কুচবিহার টাপুরহাট ইয়ুথ ক্যাম্পে ডিসেম্বের বিজয় দিবস পর্যন্ত অপেক্ষার সময়টাতেই, স্বাধীন দেশে কলমযোদ্ধা হিসেবে কাজ করার অঙ্গীকারটি পোক্ত হয়েছিল। সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বীরত্ব দেখাতে না পারার হীনমন্যতাও বিখ্যাত কলমযোদ্ধা হওয়ার স্বপ্ন দিয়ে পুষিয়ে নিতে চেয়েছিলাম বোধহয়। ফলে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধ পরবর্তী সমাজবাস্তবতা ঘুরে ফিরে আমার অনেক গল্প-উপন্যাসের বিষয় হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন দেশের সংবিধানে যেমন রাষ্ট্রের আর্দশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তথা জাতীয়তা, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র রাষ্ট্রের চার স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল, তেমনি  মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকেই লেখক হিসেবে একাত্তরে মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে একাত্মতার স্মৃতি ও মানুষের মুক্তির প্রশ্নটি নিজের লেখালেখির অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে। এখন দেখা যাক সাফল্য এসেছে কতটুকু।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার প্রথম বই একটি কিশোর উপন্যাস, নাম ‘যুদ্ধে যাওয়ার সময়’। বইটি লিখিয়ে নিয়েছিলেন সাহিত্য প্রকাশের কর্ণধার, প্রাবন্ধিক ও বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। নবীন প্রজন্মের পাঠকদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনায় উদ্ধুব্ধ করতে কিশোর গ্রন্থামালা সিরিজ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। আমি তখনো ছোটদের উপযোগী কোনো লেখা না লিখলেও মফিদুল ভাইয়ের প্রস্তাব মেনে মুক্তিযুদ্ধে নিজের অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতার স্মৃতির উপর ভর করে লিখেছিলাম বইটি। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয়। নিজের কিশোর সন্তানকে উৎসর্গীকৃত বইটির উৎসর্গ পাতায় লিখেছিলাম, সুজন, স্বাধীনতার মানে বুঝলে তুমিও মুক্তিযোদ্ধা। 

বোঝাতে চেয়েছিলাম বোধহয়, স্বাধীনতা অসম্পূর্ণ এবং মুক্তির যুদ্ধ শেষ হয়নি এখনো। মফিদুল ভাইসহ কিশোর ও প্রবীণ পাঠক অনেকেরই পছন্দ হয়েছিল বইটি। দ্বিতীয় সংস্করণও হয়েছে সাহিত্য প্রকাশ থেকে। আগামী প্রকাশনী লেখকের সকল গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়ায় সম্প্রতি সেখান থেকেও বেরিয়েছে বইটির পরিমার্জিত সংস্করণ।

‘যুদ্ধে যাওয়ার সময়’র প্রশংসা শুনেই হয়তো শিশু একাডেমীর অগ্রজপ্রতিম লেখক বিপ্রদাশ বড়ুয়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে আরো একটি কিশোর উপন্যাস লিখিয়ে নিয়েছিলেন। ‘একাত্তরের বোবা ভূত’ নামে বইটি  শিশু একাডেমীর সংস্করণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা বইটি পুনঃমুদ্রণ করেনি। বাংলাপ্রকাশ থেকে বইটির দুটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। এভাবে প্রকাশক ও সম্পাদকের ফরমায়েশে শিশু-কিশোর উপযোগী বেশকিছু গল্প-উপন্যাস  লেখা হলেও আমার মূল ক্ষেত্র বড়দের কথাসাহিত্য। নিজেকে যেহেতু সিরিয়াস লেখক ভাবি, উদ্দীষ্ট পাঠকও থাকে নিজের টাইপের। ‘অপারেশন জয়বাংলা’ নামে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। দীর্ঘ দুই দশক পরে সম্প্রতি বইটির পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশ করেছে আগামী। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া, স্বাধীনতাত্তোর দেশের সমাজবাস্তবায় গ্রাম কি শহরের পটভূমিতে যত গল্প-উপন্যাস লিখেছি, মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ কিংবা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রভাব নানাভাবে কাজ করেছে বলে মনে হয়।  প্রথম উপন্যাস ‘তমস’ থেকে সর্বশেষ ‘উজানাযাত্রা’ পাঠ করলেও পাঠক এ সত্য আঁচ করতে পারবেন। 

সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে ভিত্তি করে নিজের সেরা একটি কালজয়ী উপন্যাস রচনার আকাঙ্ক্ষা জন্মেছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পরিকল্পিত বৃহৎ উপন্যাসটির খসড়া লিখতে শুরু করেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের অব্যাবহিত পরে। এই খসড়াগুলি বিভিন্ন ঈদসংখ্যায় খন্ডাকারে বিভিন্ন নামে প্রকাশিত হয়েছিল। জেগে ওঠার সময়, শরণার্থী, স্বাধীনতার স্বাদ এবং আরো দু’একটি খসড়া কী নামে যেন কোন পত্রিকায় বেরিয়েছিল, ঠিক মনে পড়ছে না। ঈদসংখ্যাগুলো সংগ্রহেও নেই। সমস্যা হলো, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী মহৎ উপন্যাসটি রচনার জন্য যে একনিষ্ঠ শ্রম ও সময় দরকার ছিল, তা পার্টটাইম লেখকজীবনে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ঈদসংখ্যায় লিখে টাকা রোজগারের জন্য তড়িঘড়ি করে লেখা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত উপন্যাসের খন্ডাংশ কিংবা খসড়াগুলো বই হতে দেইনি। রেখে দিয়েছিলাম একনিষ্ঠ শ্রম ও সময় দিয়ে সম্পাদনা ও পুনর্লিখনের অপেক্ষায়। অবশেষে সুযোগ এলো সর্বশেষ সাংবাদিকতার চাকরি ছেড়ে নিজেকে স্বাধীন ও সার্বক্ষণিক লেখক ঘোষণার পর। বিভিন্ন সময়ে লেখা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাসের খসড়া ও খন্ডগুলি কম্পিউটারে একত্রিত করে নতুন করে পুনর্লিখনের কাজ শুরু করি। বছর দুয়েক টানা শ্রম দেয়ার পর তৈরি হলো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার একমাত্র বড় উপন্যাস ‘অন্তর্দাহ’র পাণ্ডুলিপি। 

স্বাধীনতার চার দশকে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ততদিনে কয়েক শত গল্প উপন্যাস লেখা হয়েছে। দেশের প্রতিষ্ঠিত সব লেখকই এক বা একাধিক মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন। আমি নিজেও তত দিনে বেশ কিছু ছোটগল্প ও তিনটি কিশোর উপন্যাস লিখে ফেলেছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত সব গল্প-উপন্যাসের ভিড়ে ‘অন্তর্দাহ’ উপন্যাসটিকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবার একাধিক সঙ্গত কারণ আছে। প্রথম কারণটি হলো, উপন্যাসটির লেখক স্বয়ং আমি। দ্বিতীয়ত, এই উপন্যাসের বিষয়, ঘটনা ও চরিত্র উঠে এসেছে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে। তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমি আমার শ্রেষ্ঠ উপন্যাসটি রচনার কথা ভেবে আসছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে। কাজেই নিজের দীর্ঘকালীন স্বপ্ন ও সাধনার ফসলকে তুচ্ছ কিংবা ব্যর্থ উপন্যাস ভাবার মতো উদারতা কজন লেখকের থাকে?

আমাদের দেশে লেখক ও প্রকাশকের মাঝে সম্পাদক বলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পেশাজীবী থাকে না। প্রকাশনা শিল্পে সম্পাদকের পরামর্শে অনেক বিশ্বখ্যাত লেখকের পান্ডুলিপিও সংশোধিত বা পুনর্লিখনের কাজ হয়েছে। কিন্তু এ দেশে প্রকাশকরা সাধারণত লেখকের নাম, ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা নগদ স্বার্থের দিক বিবেচনা করে তড়িঘড়ি গ্রন্থ প্রকাশ করে থাকেন। বইয়ের প্রচ্ছদের দুদিকের ফ্লার্পে ‘লেখক ও বই পরিচিতিটা’ও  লেখককেই লিখে দিতে হয়। সঙ্গত কারণে অন্তর্দাহের বই পরিচিতর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাসের ভিড়ে নিজের বইটিকে উজ্জ্বল সংযোজন বলেছি। প্রকাশকের কাছেও সেভাবেই উপস্থাপন করে কার কাছে বেশি অগ্রিম রয়্যালটি আদায় করতে পারব ভাবছিলাম যখন,  সে সময় একদিন  ‘কালি ও কলম’ পত্রিকা সম্পাদক আবুল হাসনাত ফোন করলেন। পত্রিকা ছাড়াও বেঙ্গল পাবলিকেশন্স-এর দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। আমার কাছে আগেও একটি পান্ডুলিপি চেয়েছিলেন। হাসনাত ভাইকেই প্রথম বললাম অন্তর্দাহের কথা। তিনি আগ্রহ দেখালে পনেরো পার্সেন্ট অগ্রিম রয়্যালটির কথাও জানিয়ে দিলাম। তিনি পান্ডুলিপিটি দেখতে চাইলেন। ইমেইলে পাঠালাম সফট কপি।

হাসনাত ভাই নিজে পড়লেন কিংবা পড়িয়েছেন আরো কাউকে। দিন কয়েক পরে বুঝলাম, বেশ পছন্দ হয়েছে তার। ঠিক হলো এক হাজার কপি ছাপবেন। ফাইনাল প্রুফ দেখে দেয়ার জন্য নিজে অফিসে যাওয়ার সময় আমাকেও গাড়িতে নিয়ে গেলেন নিজের অফিসে। এয়ারপোর্টের কাছে ছিল তখন বেঙ্গল গ্রুপের অফিসটি। সম্পাদক মন্ডলির সভাপতি আনিসুজ্জামান অনুপস্থিত থাকায় তাঁর টেবিলে বসে ফাইনাল প্রুফ দেখে দিয়েছি। দুপুরে অফিসের ক্যান্টিনে অফিসের শিল্পী ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে চমৎকার পরিবেশে লাঞ্চ, আর কফি পানের সঙ্গে প্রুফ দেখাও শেষ হলো। দুই বিখ্যাত শিল্পীর মধ্যে শিল্পী কাইয়ূম চৌধুরীর করা প্রচ্ছদ নিয়ে ২০১২ সালের বইমেলায় বেরুলো বইটি। চারশতাধিক পৃষ্ঠার বইটি গেটআপ-মেকাপ তথা প্রকাশনা মানের দিক থেকে আমার অন্যান্য উপন্যাসের চেয়ে নিজের কাছেও সেরা মনে হলো। হাসনাত ভাই একটি ভালো উপন্যাস প্রকাশের আনন্দে বেশ যত্ন নিয়ে করেছেন বইটি। মানের দিক থেকে  ‘অন্তর্দাহ’ সেই বছর প্রকাশিত একুশের বইমেলার মধ্যে সেরা বই বিবেচিত হওয়ায় ‘প্রকাশক চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ও লাভ করায় খুশি হয়েছিলেন হাসনাত ভাই। 

আমি তখন ঢাকার বাইরে  টেলিফোন ছাড়া ছিলাম বলে অনেক চেষ্টার পর আমাকে সুখবরটি জানিয়েছিলেন। নিজে তেমন খুশি হইনি, কারণ এই পুরস্কারে লেখকের কোনো প্রাপ্তিযোগ ছিল না। তবে হাসনাত ভাইয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক ভাঙিয়ে পাঁচশ কপির রয়্যালটির অগ্রিম চেকও পেয়েছিলাম যথাসময়ে। চেকটি আনার জন্য আমাকে অফিসেও যেতে হয়নি। অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে আমার কলাবাগানের বাসার কাছে লাজফার্মার সামনে গাড়ি থামিয়ে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে চেকটি হস্তান্তর করেন তিনি। ‘অন্তর্দাহ’ রচনা, প্রকাশনা ও প্রাপ্তি বিষয়ে আনন্দদায়ক খবর এটুকু। বাকিটা ক্রমবর্ধমান হতাশা ও অতৃপ্তির। 

প্রকাশক ও লেখকের তরফেও যে কোনো বইয়ের আশু সাফল্য নির্ভর করে তার বিক্রি বা কাটতির উপর। এদিক থেকে আমার প্রকাশিত প্রতিটি উপন্যাসই বড়ই হতভাগা! ‘বেস্ট সেলার’ তকমা একটার ললাটেও জোটেনি। অবশ্য জনপ্রিয় লেখকদের মতো আমার বই হু-হু করে কাটবে, এমন আশা করিনি কখনো। কিন্তু বিক্রেতার সেলফে কোনো বই যদি গাট মেরে বছর বছর ঘুমিয়ে থাকে, এক হাজার কপি দশ বছরেও না ফুরানোর শঙ্কা জাগে, তবে প্রকাশকের মুখ বেজার হওয়াই স্বাভাবিক। জনৈক প্রকাশক বন্ধু ঠাট্টা করে একদিন বলেছিলেন, আমাদের দেশে কবি-লেখকরা বইমেলায় বই বেরুলে মনে করে তার বইটি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু যথাযথ প্রচার ও মূল্যায়নের অভাবে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছেন তারা। প্রকাশকরা এ জন্য প্রধান দায়ী।

লেখক হিসেবে এমন একমাত্রিক সরল ধারণায় বিশ্বাসী নই মোটেও। কৈশোরে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দিবাস্বপ্ন দেখলেও, পরিণত বয়সে নোবেল পাওয়ার যোগ্যতা কি দুর্বলতা নিয়ে মাথা ঘামাইনি বিন্দুমাত্র। তবে অস্বীকার করা যাবে না, দেশে সাহিত্যের মূল্যায়নকারী সচেতন পাঠক ও সৎ সমালোচকের বড়ই অভাব। যেটুকু আছে তা স্পষ্টতই পারস্পরিক পিঠ-চাপড়ানি দোষে দুষ্ট। সমালোচনা-সাহিত্যের এই দীনহীন শাখায় হাতে গোণা যে ক’জন বিদগ্ধ লেখক-সমালোচক অপরের বই নিয়ে আলোচনা বা প্রশংসাসূচক সার্টিফিকেট দিয়ে থাকেন, তাদের কেউই ‘অন্তর্দাহ’ উপন্যাসকে ভালো বা উল্লেখযোগ্য বলেননি। লেখক ও প্রকাশকের তরফেও কিছু বিদগ্ধ পাঠক-সমালোচকের কাছে সৌজন্য বই দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রায় কেউই লিখিতভাবে দূরে থাক, মৌখিক প্রতিক্রিয়াটুকু জানাননি। পড়ার সময় পেয়েছিলেন কিনা কে জানে। 

দেশে বছরের উল্লেখযোগ্য ভালো বই নির্বাচনের জন্য বেশ কিছু বেসরকারি সাহিত্য পুরস্কার চালু রয়েছে। আমি ইতিপূর্বে এরকম বেশ কয়েকটি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছি। প্রতি বছর যে নতুন বই প্রকাশিত হয়, তার ফ্ল্যাপে লেখক পরিচিতিতে প্রাপ্ত সাহিত্য পুরস্কারগুলি বারংবার উল্লেখ থাকে যাতে লেখকের বইটির বিক্রি বাড়াতে পুরস্কার খানিকটা পাঠক-ক্রেতাকে উস্কানি দেয়। সেরকম আশা থেকেই সম্ভবত প্রকাশকের পক্ষ থেকে হাসনাত ভাই ‘অন্তর্দাহ’ উপন্যাসটিকে দেশে প্রচলিত প্রায় সকল পুরস্কার কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। একবার ফোনে কলকাতার আনন্দ পুরস্কারের জন্যও বইটি জমা ও বিবেচিত হওয়ার কথা বলেছিলেন আমাকে। অবাক হয়ে বলেছিলাম, ‘আনন্দ পুরস্কার’ আমাকে দেবে কেন আর আমি নেবই-বা কেন? সাক্ষাতে বিস্তারিত বলবেন বলেছিলেন হাসনাত ভাই। কিন্তু এ নিয়ে আর কোনোদিন কথা হয়নি। তবে দেশের একটি দামী বেসরকারি পুরস্কারের জন্য বইটি শর্টলিস্টে ছিল বলে শুনেছি। ‘প্রথম আলো’ ও ‘সমকাল’ পত্রিকার উদ্যোগে পরিচালিত পুরস্কারের জন্যও বইটি শর্টলিস্টে ছিল। সেই বছর ‘প্রথম আলো’ বর্ষসেরা পুরস্কারের বিচারক কমিটির মধ্যে ঘনিষ্ঠ লেখক বন্ধু ওয়াসি আহমেদ ছিলেন। তিনি ফোনে আক্ষেপ করেছিলেন, ‘অন্তর্দাহ’কে পুরস্কার দিতে না পারার জন্য। 

আক্ষেপে মিহি আনন্দ, দুঃখ, নাকি রাগ মিশে ছিল ঠিক জানি না। কারণ ওয়াসি প্রথম আলোর বিচারক হয়েছেন পরেও। আর আমার উপন্যাসটি নিয়ে ভালো-মন্দ কিছু বলেন নি। অন্যান্য বিচারকের মধ্যে সেলিনা হোসেন, সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, আসাদ চৌধুরী, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীসহ আর কে কে যেন ছিলেন শুনেছিলাম, ঠিক মনে নেই।  যা হোক, বিচারকমণ্ডলীর কেউই আমার ‘অন্তর্দাহ’কে পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত মনে করেননি। কিন্তু বিচারক হওয়ার দায় হিসেবে বিদগ্ধ পাঠকমণ্ডলী যদি কষ্ট করে বইটি পড়ে থাকেন, পাঠক-দুর্ভিক্ষের কালে সেটাই বা কম বড় পুরস্কার কিসে?

আসলে পুরস্কার পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কোনো লেখকই লেখেন না। স্বীকৃতি-পুরস্কার পেলে সবারই ভালো লাগে সত্য, অভিজ্ঞতা থেকে জানি, সীমিত আয়ের লেখকের পুরস্কারের অর্থ বেশ কাজেও লাগে। কিন্তু পুরস্কার যে সাহিত্যের ভালো-মন্দ নির্ণয়ের নিরপেক্ষ ও নির্ভরযোগ্য মাপকাঠি নয়, এ নিয়ে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই আমার। অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, আমি নিজের বইয়ের জন্য নোবেল পুরস্কারের মতো বড় পুরস্কার কিংবা বিদগ্ধ সাহিত্য সমালোচকের কোনো সমালোচনাকে একটুও পাত্তা দেই না আর। লিখতে লিখতে এবং লেখা বই হয়ে বেরুনোর পর সেই বইয়ের দুর্বলতার দিকগুলো সম্পর্কে এত সচেতন হয়ে উঠি যে, প্রকাশের পর কোনো বই দ্বিতীয়বার পড়ে দেখিনি আর। অবশ্য দ্বিতীয় সংস্করণে প্রয়োজনীয় পরিমার্জনা ও ফাইনাল প্রুফ দেখার কারণে পড়তে হয়। নিজের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা বেশি বুঝি বলে এবং খুঁতখুঁতে স্বভাবের কারণেও লেখক হিসেবে সদাই অতৃপ্ত থাকি। এমনকি নিজেকে ব্যর্থ লেখক মেনে নিতেও সংকোচ বোধ করি না। এ কথা ‘অন্তর্দাহে’র ক্ষেত্রেও সত্য। 

না-পাক বিদগ্ধ পাঠকের স্বীকৃতি কিংবা পুরস্কার, কয়েকজন সাধারণ পাঠক তাদের সংক্ষিপ্ত পাঠ-প্রতিক্রিয়ায় ভালো লাগার কথা বলেছেন। ‘অন্তর্দাহ’কে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক পঠিত উপন্যাসের মধ্যে সেরা উপন্যাস বলেছেন কেউ-বা। পাঠক-দুর্ভিক্ষের এ দেশে সাধারণ পাঠকের ভালো লাগার সরল স্বীকৃতি এবং নিজের সীমাহীন অতৃপ্তি ও অন্তর্দাহ থেকে আগামীতে যদি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নতুন ধরণের একটি উপন্যাস লেখার সময় ও সুযোগ পাই, নিঃসন্দেহে সেই লেখারও প্রেরণা আসবে নিজের ভিতরের মুক্তিযুদ্ধের অনির্বাণ চেতনা থেকেই।

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়