ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শিশুদের নাগালে সর্বনাশা ‘ড্যান্ডি গাম’

সৌরভ পাটোয়ারী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১১, ১৫ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শিশুদের নাগালে সর্বনাশা ‘ড্যান্ডি গাম’

নেশার অতলে ডুবে যাচ্ছে দেশ! নেশা এখন যুবক ও তরুণদের ছাড়িয়ে শিশু-কিশোরদের হাতেও। ফেনীতে শিশুদের হাতে দেখা যাচ্ছে ‘ড্যান্ডি গাম’ নামের সর্বনাশা নেশা।

দল বেঁধে কাঁধে বস্তা বয়ে হাঁটছে কয়েক শিশু। এক হাতে কাঁধের ওপর ফেলে রাখা বস্তাটি সামলাচ্ছে, অন্য হাতে ধরা একটি পলিথিন। ফোলানো পলিথিনের মধ্যে মাঝে মাঝেই মুখ ঢুকিয়ে কিছু একটি শুঁকে নিচ্ছে তারা। যারা বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত তারা জানেন, ওই শিশুরা খেলাচ্ছলে পলিথিনের ব্যাগের ভেতর নাক-মুখ ঢোকাচ্ছে না। এই শিশুরা ভয়াবহ ‘ড্যান্ডি’নেশায় আসক্ত। ফেনী জেলা শহরে শিশু-কিশোরদের মধ্যে ড্যান্ডি আসক্তি দেখা দিয়েছে।

শিশু-কিশোরদের অনেককে সকাল থেকে রাত অবধি ফেনী শহরের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে বা হাঁটা অবস্থায় এই নেশা করতে দেখা যায়। টোকাই কিংবা ভিক্ষাবৃত্তির বেশিরভাগ শিশু এই নেশায় আসক্ত হচ্ছে। হতদরিদ্র হওয়ায় সচেতন মানুষ এদের দিকে তাকাচ্ছে না। ফলে নেশা আসক্তি থেকে শুরু করে এরা আবার জড়িয়ে পড়ছে চুরি, ছিনতাইর মত ঘটনায়।

শুধু পথ শিশুই নয় ফেনীর শিশু শ্রমিকের একটি অংশও এই নেশায় আসক্ত হচ্ছে। ফলে সাম্প্রতিক সময় ফেনীতে শিশু কিশোর অপরাধ উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে। এটি ধীরে ধীরে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির কিশোরদের মাঝে ছড়াচ্ছে। এই ড্যান্ডি গাম আসক্ত শিশু-কিশোররা পরবর্তীতে গাজা, ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন নেশায় পা বাড়াচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ড্যান্ডি এক ধরনের নেশা। তীব্র গন্ধ না থাকায় এই শিশু-কিশোররা যে নেশা করছে, তা কেউ ধরতে পারেন না। অল্প খরচে এই নেশা করা যায় বলে পথ শিশু-কিশোররা ঝুঁকে পড়ছে এতে। একজনের কাছ থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে অন্যজনের কাছে। ফেনী শহরতলির বিভিন্ন বস্তি ও কলোনির নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুদের মধ্যে সাধারণত এই আসক্তি দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো শিশু-কিশোররা শপিং মলসহ বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করে কিছু টাকা বাসায় নিয়ে যায়, বাকি টাকা দিয়ে কেনে এই ড্যান্ডি নেশা।

কথা হয় ফেনী শহরের বাহাদুর নামে এক পথশিশুর সঙ্গে। আগে প্রতিদিন সে নেশা করত। এখন ছেড়ে দিয়েছে। তবে তার সঙ্গী ১০-১৫ জন এখনো ড্যান্ডিতে আসক্ত বলে জানিয়েছে সে।

বাহাদুর জানায়, ৩০ থেকে ৪০ টাকায় একধরনের জুতার আঠা, সাইকেলের টায়ারের গাম কিনে শিশুরা। পলিথিনের ব্যাগে আঠালো ওই পদার্থ নিয়ে কিছুক্ষণ ঝাঁকানো হয়। তারপর পলিথিন থেকে নাক বা মুখ দিয়ে বাতাস টেনে নেয়। এতে করে তাদের কোনো ধরনের ক্ষুধা অনুভব হয় না। মনে এক ধরনের আনন্দ অনুভব হয়।

একধরনের অসাধু ব্যবসায়ী জেনে-বুঝেই শিশু-কিশোরদের কাছে এসব উপকরণ তুলে দিচ্ছেন সামান্য কয়েকটি টাকার জন্য।

ফেনীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “সহায়”এর উপদেস্টা মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া বলেন, ‘এসব পথশিশুর কথা ভেবে আমরা “পথশিশু স্কুল”নামে একটি স্কুল তৈরি করেছি। ড্যান্ডি নেশার কারণে পাঠশালায় পথশিশুদের অনেকেই আসছে না। বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষন করা হয়েছে।’

ফেনীর সিভিল সার্জন মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, ‘এই গাম ব্যবহার করলে শরীরের অনেকগুলো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, ব্রেন, কিডনি, লিভার ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’


ফেনী/সৌরভ পাটোয়ারী/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়