ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে দু’দেশের মানুষের যাতায়াত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১১, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে দু’দেশের মানুষের যাতায়াত

ঢাকা-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এলাকার জাজি নদীর ওপর ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি সেতু দিয়ে চলছে দু’দেশের মানুষের যান চলাচল।

জেলার আখাউড়া উপজেলার আবদুল্লাপুর গাজীরবাজারের এই সেতুটি দীর্ঘ দুই বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে এই সেতু দিয়ে যান চলাচল করলেও এটি মেরামতে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।

আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে টানা বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার দক্ষিণ, মনিয়ন্দ ও মোগড়া ইউনিয়নের প্রায় ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢলে পানির স্রোতে আবদুল্লাহপুর এলাকার জাজি নদীর বেইলি সেতুর মাঝখানের পিলার (নিচের ভিম) সরে যায়।

সেই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে সেতুর ওপর দিয়ে ১০ টনের অধিক যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পরে চলাচলে ভারসাম্য রক্ষা করতে সেতুর মাঝখানের ক্ষতিগ্রস্ত পিলার ও পাঠাতনের মাঝখানে সওজের পক্ষ থেকে কাঠ বসানো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পিলারের দুই থেকে তিন গজ দূরত্বে এক অস্থায়ী স্টিলের পিলার বাসানো হয়। দুই বছর ধরেই এই সেতুতে একই অবস্থা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গাজীরবাজার এলাকার এই বেইলি সেতু অতিক্রম করেই আখাউড়া স্থলবন্দরে যেতে হয়। এই সড়ক ছাড়া আখাউড়া স্থলবন্দরে যাওয়ার আর কোনো বিকল্প সড়ক নেই।

তাই সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এই পথে স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানির পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কোনো কারণে এই সেতু আরো ক্ষতিগ্রস্ত হলে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য সকল কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবুও ঝুঁকি নিয়ে এই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তুলা, ফার্নিচার, প্লাস্টিক, পাথর, সিমেন্ট ও মাছসহ অনেক পণ্য ট্রাকে করে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে আগরতলায় রপ্তানি করা হয়। প্রতিদিন এসব পণ্যবাহী প্রায় ১০-১৫ ট্রাক এই বেইলি সেতুর দিয়ে আগরতলায় যায়। এছাড়া আখাউড়া-আগরতলা বন্দর দিয়ে দুই বাংলার প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৫০০ যাত্রী আসা যাওয়া করে। যাত্রীবাহী বাসও আসা-যাওয়া করে থাকে।

গত শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ‌্যা পর্যন্ত সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গাজীরবাজার আব্দুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণে জাজি নদীর (খাল নামে পরিচিত) ওপর অবস্থিত এই বেইলি সেতু। সেতুর মাঝখানে একটি ইট-সিমেন্টের ঢালাই করা পিলার আর অন্যটি স্টিলের অস্থায়ী পিলার। মাঝের ইট-সিমেন্টের তৈরি পিলারটির নিচের মাটি সরে যাওয়ায় দক্ষিণ দিকে হেলে পড়েছে।

ভারসাম্য ধরে রাখতে দক্ষিণ দিকে সরে পিলারটির ওপর কাঠ ও অনেকগুলো স্টিলের টুকরা রাখা হয়েছে। তবে সেতুর পাটাতন এবং পিলারের ওপর রাখা কাঠ-স্টিলের মাঝে ফাঁক রয়েছে। তবে পিলারটি থেকে দুই-তিন গজ দূরত্বে থাকা অস্থায়ী স্টিলের পিলারটিও পাটাতন সঙ্গে সংযুক্ত নয়। সেখানেও ফাঁক রয়েছে। সেতু সংলগ্ন খালের দক্ষিণ দিকের পাড়ও ভেঙে যাচ্ছে। সেতুর ওপরে ভারী যান ট্রাক্টর, মাইক্রোবাস, সিএনজি, যাত্রীবাহী বাস উঠলেই কম্পন সৃষ্টি হয়। মাঝখানের পাঠাতন দেবে যায়।

সেতু সংলগ্ন উত্তর দিকের আব্দুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, ব্রিজের ওপর প্রাইভেটকার বা ট্রাক্টর উঠলেই বিকট শব্দ হয় তখন ক্লাসের পড়া বন্ধ করে রাখি, কারণ কথা বললে ছাত্ররা বুঝতে পারে না। শিক্ষার্থীদের মনোযোগে অনেক বিঘ্ন ঘটে। সব সময় কথা বন্ধ রাখতে পারি না তখন শিক্ষকদের উচ্চৈস্বরে কথা বলতে হয়। কয়েকজন শিক্ষকের কানে কম শুনারও প্রবণতা দেখা দিচ্ছে।

স্থানীয় দুই যুবক জানান, কয়েক বছর আগে ট্রাকসহ এই বেইলিসেতু একবার ভেঙে পড়েছিল। এখন যে অবস্থা যে কোনো সময় সেতু ভেঙে পড়তে পারে।

প্রাইভেটকার চালক কাউছার ও ট্রাকচালক সুজন মিয়া বলেন, গাড়ি উঠলে সেতু কাপতে থাকে। সেতুর মাঝের পিলারটি যে কোনো সময় সরে পড়লে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (সিএনএফ) সাধারণ সম্পাদক ফোরকান খলিফা রাইজিংবিডিকে জানান, বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ টন ওজনের ট্রাক এপার থেকে ওপারে আসা যাওয়া করে।  এবং প্রায় ৪০০-৫০০ যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। বন্দরে আসার এবং বন্দর থেকে আখাউড়াসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার গাজীরবাজার সেতু এলাকা অতিক্রম করা ছাড়া আর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রোডস অ‌্যান্ড হাইওয়ের কর্মকর্তা মো. শামিম আল মামুন রাইজিংবিডিকে জানান, আখাউড়া উপজেলায় যে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ রয়েছে সেইটির পাশে অস্থায়ী বেইলি ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ তাই চলাচল বন্ধ রেখে কাজ করা যাবেনা। পাশের বিকল্প ব্রিজ তৈরি করে বর্তমান যেইটা আছে সেইটার কাজ শুরু করবো।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া/রুবেল/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ