ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

অবৈধ ইটভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ

বান্দরবান সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অবৈধ ইটভাটায় অবাধে পুড়ছে কাঠ

খাগড়াছড়িতে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটাসহ অবৈধ ইটভাটায় অবাধে কাঠ ‍পুড়িয়ে পরিবেশ ধ্বংশের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এছাড়া জেলায় ঠিক কতোটি ইটভাটা আছে, কোন উপজেলায় কয়টি এবং এর মধ্যে কতোটি বৈধ-অবৈধ; তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নাই জেলা প্রশাসন দপ্তরে।

তবে লাইসেন্স পাবার এবং নবায়নের আবেদনের রেজিস্ট্রার থেকে যে তথ্য মেলে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে তার আকাশ-পাতাল তফাৎ। চোখের সীমানায় পড়ে এমন ৩০ অবৈধ ইটভাটায় এখন চলছে সমানে কাঠ পোড়ানো আর পাহাড় কাটার মহোৎসব।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি দল ও বিএনপির প্রভাবশালী এক সিন্ডিকেট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে অবৈধ ইটভাটাগুলোতে আশপাশ থেকে পাহাড় কেটে মাটি মজুতের পাশাপাশি বিভিন্ন পাহাড়ি গ্রাম ও সরকারি অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চলের গাছ নির্বিচারে পোড়াচ্ছে।

পরিবেশকর্মী বিপ্লব সরকার জয় অভিযোগ রাইজিংবিডিকে জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসে জীবন ও সম্পদহানির ঝুঁকি বাড়ছে। সরকারি খাস বনের প্রাকৃতিক গাছ-গাছালি নির্বিচারে ইটভাটায় পোড়ানোর ফলে পাহাড় ন্যাড়া হয়ে যাচ্ছে। তার ওপর পাহাড়ও কাটা চলছে সমানতালে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন চৌধুরী রাইজিংবিডিকে জানান, বিভিন্ন ফলজ বাগানের আশপাশে ইটভাটা গড়ে উঠার কারণে বাগান নষ্ট হচ্ছে। গাছে ভালো মুকুল আসলেও ফলন ভালো হয় না। এছাড়াও উপরিভাগ খনন করে ভাটাগুলোতে মাটি নিয়ে যাওয়ায় উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি। এতে করে প্রতিবছর কমছে ফসল উৎপাদন।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী ও সা. সম্পাদক মুহাম্মদ আবু দাউদ মনে করেন, পার্বত্য এলাকার উন্নয়নের জন্য ইটভাটার

প্রয়োজন আছে। তবে তিন পার্বত্য জেলার ভৌগলিক বাস্তবতায় যথাযথ আইন মেনে ইটভাটা স্থাপন অসম্ভব। আর যদি সেটি সম্ভব না হয় তাহলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পার্বত্যাঞ্চলের জন্য এ সংক্রান্ত আইন শিথিল করার প্রশ্ন উঠতে পারে।

এই সংগঠনের দুই নেতা পার্বত্য এলাকার ইটভাটাগুলোতে কাঠ ও পাহাড়কাটা মাটির অবাধ ব্যবহার বন্ধসহ ইটের আকার-মান-গুণ এবং মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি দাবি করেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)-এর চট্টগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাসান রাইজিংবিডিকে জানান, তিন পার্বত্য এলাকায় ইটভাটা স্থাপন, পাহাড়কাটা, বন উজাড়সহ পরিবেশ-প্রকৃতি সুরক্ষায় উচ্চ আদালতের এক নির্দেশনা রয়েছে। এটির যদি ব্যতয় ঘটে তাহলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

বর্তমান পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে তিনি বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানাবেন বলে নিশ্চিত করেন। তবে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বেশ কয়েকজন ইটভাটা মালিককে মোবাইলে কল দেয়া হলেও তারা কেউই ফোন ধরেননি।

খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উপ-বন সংরক্ষক) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, স্থাপিত ইটভাটাগুলোতে জ্বালানি কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ পেলে বন সংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে প্রশাসনের সহযোগিতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

এবিষয়ে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস রাইজিংবিডিকে জানান, কিভাবে ইটভাটা পরিচালিত হয় সেটির এক আইনি গাইড লাইন আছে। এর ব্যতয় প্রমাণিত হলে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রশাসনের রুটিন ওয়ার্ক।

 

বান্দরবান/বাসু দাশ/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়