ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মায়ের স্বপ্ন পূরণে ডায়াবেটিক হাসপাতাল

ফরহাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৮, ১৪ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মায়ের স্বপ্ন পূরণে ডায়াবেটিক হাসপাতাল

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের মা ১৯৮৬ সালে স্ট্রোক করেন। ঢাকার বারডেম হাসপাতালে দেড় মাস চিকিৎসা শেষে মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন দেলোয়ার হোসেন। কয়েক মাস পর পুনরায় অসুস্থ হলে মাকে নিয়ে সেই হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেলোয়ার হোসেনের মা লক্ষ্মীপুরে একটি ডায়াবেটিক হাসপাতাল নির্মাণ করতে বলেন। মায়ের স্বপ্ন পূরণে লক্ষ্মীপুর ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন দেলোয়ার হোসেন।

লক্ষ্মীপুর ডায়াবেটিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, পঁচিশজন শেয়ার হোল্ডার নিয়ে ১৯৮৯ সালে ডায়াবেটিক সমিতি গঠন করা হয়। এই সমিতির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মো. বদিউজ্জামান। সমিতির উদ‌্যোগে লক্ষ্মীপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল স্থাপন করা হয়।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, মায়ের স্বপ্ন পূরণে ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করতে বহু চিকিৎসক ও ধনাঢ্য ব‌্যক্তির শরণাপন্ন হয়েছি। কিন্তু কাউকে পাশে পাইনি। পরে পঁচিশজন আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুকে নিয়ে ১৯৮৯ সালে সমিতি গঠন করি।

তিনি বলেন, এক যুগের বেশি সময় ধরে নিজেই মাকে ইনসুলিন দিয়েছি। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে মায়ের চিকিৎসা করিয়েছি। মা লক্ষ্মীপুরে ডায়াবেটিক সমিতি করার জন্য ওয়াদা করান। এ সময় গরিব-অসহায় মানুষদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করতেও বলেছিলেন। ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মা মারা যান।

 

 

জানা গেছে, ঢাকার বারডেম হাসপাতালের অধীনে পরিচালিত লক্ষ্মীপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে ২৪ হাজার ১১৭ জন তালিকাভুক্ত রোগী আছে। প্রথমে ২ হাজার টাকা ফি দিয়ে এখানে চিকিৎসা নিতে হয়। পরবর্তী সময়ে সুগার ও রক্ত পরীক্ষার জন্য ১০০ টাকা করে ফি নেয়া হয়। এখানে ৩০ শতাংশ রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রাইজিংবিডিকে জানায়, জেলা শহরের গোডাউন ও হাসপাতাল রোডে একটি ভাড়া করা ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৫ সালে পৌরসভার উত্তর মজুপুর এলাকায় ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতালটির স্থায়ী ভবন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে সরকারিভাবে ৭০ শতাংশ ও সমিতির সদস্যরা ৩০ শতাংশ ব্যয় করেছেন। এখনো হাসপাতালটির পুরো কাজ শেষ হয়নি। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।

কার্তিক ও শিখা রাণী নামের দুজন রোগী রাইজিংবিডিকে জানান, কয়েক বছর থেকে লক্ষ্মীপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। স্বল্প খরচে ও হয়রানি ছাড়া চিকিৎসা পেয়ে খুশি তারা।

হাসপাতালটির কনসালট‌্যান্ট ডা. বেলায়েত হোসেন পাটোয়ারী রাইজিংবিডিকে জানান, ডায়াবেটিস কখনো সম্পূর্ণ ভালো না হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এজন্য নিয়মিত চিকিৎসা, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন, শরীরচর্চা ও সঠিক খাবার গ্রহণ জরুরি।

ডায়াবেটিস একটি হরমোন সংশ্লিষ্ট রোগ। অগ্ন্যাশয় যদি যথেষ্ট ইনসুলিন তৈরি করতে না পারে অথবা শরীর যদি উৎপন্ন ইনসুলিন ব্যবহারে ব্যর্থ হয়, তাহলে যে রোগ হয় তা হলো ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। তখন রক্তে চিনি বা শকর্রার উপস্থিতিজনিত অসামঞ্জস্য দেখা দেয়। ইনসুলিনের ঘাটতিই হল এ রোগের মূল কথা। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন ইনসুলিন, যার সহায়তায় দেহের কোষগুলো রক্ত থেকে গ্লুকোজকে নিতে পারে এবং একে শক্তি উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারে। ইনসুলিন উৎপাদন বা ইনসুলিনের কাজ করার ক্ষমতার যেকোনো একটি বা দুটোই যদি না হয়, তাহলে রক্তে বাড়তে থাকে গ্লুকোজ। এটা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে ঘটে নানা রকম জটিলতা।



লক্ষ্মীপুর/ফরহাদ হোসেন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়