ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

দাকোপে হুমকির মুখে মৌসুমি ফসল

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২৩, ১৭ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দাকোপে হুমকির মুখে মৌসুমি ফসল

চলতি বছর খুলনার উপকূলীয় উপজেলা দাকোপে মৌসুমি ফসল হুমকির মুখে পড়ছে।

কৃষি উৎপাদনে সেখানে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দিয়েছে মিঠা পানির সংকট এবং নদীতে লবণাক্ত পানির প্রবাহ বৃদ্ধি।

ফলে ঝুঁকির মুখে পড়েছে তিন হাজার বিঘা জমির বিভিন্ন মৌসুমি ফসল।

এক সময় উপকূলবাসীর বছরে এক ফসল আমন ধানে ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু কৃষিতে উন্নয়নের ফলে সেখানে অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও কৃষকরা ২-৩ ধরনের ফসল ফলাচ্ছিলেন। ফলে এখানকার বাজুয়া ও দাকোপসহ পাঁচ ইউনিয়ন কৃষি ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত পায়। উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নও ধীরে ধীরে কৃষি উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু নদীতে লবণাক্ত পানির প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় থমকে গেছে সেই উৎপাদনের ধারা।

চলতি বছর এসব উপজেলার জমিতে ধান, তরমুজ, আলু, ভুট্টা, ঝিঙে, ঢেড়শ, উচ্ছে, বাঙ্গি, মিষ্টি কুমড়া, গম, তিল, সূর্যমুখী, বাদামসহ বিভিন্ন ধরনের শাক সব্জির চাষাবাদ করা হয়েছে। কিছু দিন আগে রোপণকৃত বীজ থেকে চারাগুলো কেবলই মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে। ঠিক এমনই মুহূর্তে লবণ পানির প্রভাবে চারার অবস্থা নাজুক হয়ে গেছে। অনেক ক্ষেতের চারা লবণের প্রভাবে মরেই গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কালীনগরে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবোর স্লুইজ গেটের অকেজো ঢাকনা দিয়ে দিনরাত নদী থেকে লবণ পানি ওঠা নামা করছে। কিন্তু গেট সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একাধিকবার বলেও সুফল পাননি কৃষকরা।

স্থানীয় সাহারাবাদ গ্রামের কৃষক আশরাফ সানা বলেন, ‘মহাজনি সুদে টাকা নিয়ে দুই বিঘা জমিতে রবি ফসলের চাষ করেছি। কিন্তু জোয়ারের পানিতে তার সেই চারাগাছ এখন মরার পথে।’

সাতঘরিয়া গ্রামের কৃষক বিপুল মণ্ডলের চার বিঘা এবং একই গ্রামের মনোরঞ্জন মণ্ডলের সাড়ে তিন বিঘা জমির তরমুজ ও ধানসহ রবি ফসলও মরার উপক্রম।

ইউনিয়নের সফল চাষি কালীনগর গ্রামের কৃষ্ণপদ ঘোরামী জানান, এবার তিনি ২০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত মিঠা পানির আধার না থাকায় অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও ফসল ফলাতে হচ্ছে। তার মাঝে এভাবে ওয়াপদার গেট দিয়ে লবণ পানি উঠতে ফসল ফলানো অসম্ভব হয়ে যাবে।  

এ ব্যাপারে স্থানীয় কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মণ্ডল জানান, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এ ইউনিয়নের মানুষ কঠোর পরিশ্রম করে এক ফসলি জমিকে ২-৩ ফসল ফলিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু লবণ পানি তাদের ফসল উৎপাদনে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে, কিন্তু কোথাও স্লুইজ গেট নেই। আবার বার বার তাগাদা দিয়েও পুরানো গেটগুলো সংস্কার করানো যাচ্ছে না।’

তিনি কৃষক বাঁচাতে অবিলম্বে গেট সংস্কার এবং কামারগোদা, পাচুরদোয়ানী ও নলিয়ান নদী ইজারামুক্ত রেখে মিঠা পানির আধার সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কৃষি ও ভূমিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এ বিষয়ে দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খাঁন বলেন, ‘উপকূলীয় উপজেলা দাকোপকে মিষ্টি পানির আধার তৈরি করে কৃষিজোনে রূপান্তরের চেষ্টা চলছে। কিন্তু লবণ পানির কারণে সেটি ব্যাহত হচ্ছে। এমনকি লবণ পানির প্রভাবে ফসলও মারা যাচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।’

 

খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়