মুন্সীগঞ্জে লোকসানের আশঙ্কায় আলুচাষিরা
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আলু উৎপাদন হয় মুন্সীগঞ্জ জেলায়। এ জেলার দুই-তৃতীয়াংশ আবাদি জমিতে আলু চাষ করা হয়। এ মৌসুমেও বিপুল পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করেছেন মুন্সীগঞ্জে কৃষকরা। ফলন ভালো হলেও লোকসানের আশঙ্কা করছেন আলুচাষিরা।
চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। আলু উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। গত পাঁচ মৌসুমে আলুর ফলন ভালো হলেও লোকসানের শিকার হয়েছিলেন কৃষকরা। সে সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় আলু উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়ায় চাষিরা প্রতি মণ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এবারও লোকসান হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
জেলা সদরের রামশিং গ্রামের চাষি আব্দুর রহমান বলেছেন, আলু তোলা শুরু হয়েছে। এখনই ভালো-মন্দ বলা যাচ্ছে না। লোকসানও হতে পারে।
মার্চ মাস আলু উত্তোলনের মৌসুম। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে কৃষকরা আলু তোলা শুরু করেছেন। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে আলু তোলায় ব্যস্ত কৃষক ও কৃষিশ্রমিকরা। খেত থেকে আলু তোলার পর বস্তাবন্দি করা থেকে শুরু করে কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ ও বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আলুচাষিদের অন্যদিকে তাকানোর ফুরসত নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার মুন্সীগঞ্জে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় আলু উৎপাদনের পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিয়া আল মামুন জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চরাঞ্চলসহ ছয় উপজেলায় ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকরা ৩৭ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণ করেছেন।
মুন্সীগঞ্জে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টন আলু বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। জেলার ৭৪টি হিমাগারের ধারণক্ষমতা ৫ লাখ মেট্রিক টন। বাকি আলু বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ ও বিক্রি করা হয়।
এদিকে, মুন্সীগঞ্জে আলু তুলতে আসা শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে জানা গেছে, অন্যান্য জেলা থেকে আসা নারী-পুরুষ শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হচ্ছে না।
বিভিন্ন জেলা থেকে মুন্সীগঞ্জে আসা কৃষিশ্রমিকরা বলেন, প্রতিদিন আমাদের মজুরি দেওয়া হয় ৩০০-৩৫০ টাকা। কিন্তু স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হয় ৪০০-৬০০ টাকা।
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১ কোটি মেট্রিক টনের বেশি আলু উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জে উৎপাদন হয় প্রায় প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন। বাংলাদেশে ৮০ লাখ টন আলুর চাহিদা আছে। অতিরিক্ত আলু বিদেশে রপ্তানি করা হলে কৃষকরা আরো বেশি লাভবান এবং আলুচাষে আগ্রহী হতেন।
মুন্সীগঞ্জে ডায়মন্ড, কার্ডিনাল, এস্টারিক্স, সাগিতা, প্রেটোনিজ, মুলটা, বেনিলা, গ্রানোলা জাতের আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। মোট উৎপাদিত আলুর মধ্যে ৯০ ভাগই ডায়মন্ড জাতের।
মুন্সীগঞ্জ/রতন/রফিক
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন