করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু, লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ
লালমনিরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া পোশাক কারখানার শ্রমিক মৌসুমী আক্তারের লাশ তিস্তা নদীতে ফেলে দেওয়া ও দাফনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মৃত্যুর দুইদিন পর ওই নারীর লাশ তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আদিতমারী থানা পুলিশ জানায়, মৌসুমী আক্তারের লাশ রোববার সন্ধ্যায় তিস্তা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়। সোমবার (২৫ মে) বিকেলে জানাজা শেষে নিজ গ্রামে দাফন করে যৌথভাবে আদিতমারী ও পাটগ্রাম থানা পুলিশ।
জানা গেছে, মৌসুমী পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের গোলাম মোস্তফার মেয়ে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, বাউড়া ইউনিয়নের সরকারের হাট এলাকার আবুল কালামের ছেলে মিজানুর রহমানের সঙ্গে ছয় মাস আগে বিয়ে হয় মৌসুমীর। বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে একাই গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন মৌসুমী। বৃহস্পতিবার অসুস্থতা অনুভব করলে একটি ট্রাকে পাটগ্রামে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। পথে রংপুরের তাজহাট এলাকায় পৌঁছালে ট্রাকচালক তাকে মৃত দেখে মরদেহ ফেলে পালিয়ে যান। অজ্ঞাত মরদেহ হিসেবে তাজহাট থানা পুলিশ মৌসুমীর মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান। পরদিন শুক্রবার খবর পেয়ে মৌসুমীর বাবা গোলাম মোস্তফা তাজহাট থানায় গিয়ে মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন।
গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতকে মোবাইলে বিষয়টি অবগত করে নিজ এলাকায় লাশ দাফনের অনুমতি চাই। কিন্তু চেয়ারম্যান করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে তার পরিবার ও মরদেহবাহী গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
পরে গোলাম মোস্তফা মেয়ের লাশ দাফন করতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকার একজন লাশবাহী গাড়ি চালকের সঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা চুক্তি করেন লাশ দাফনের। চালক মরদেহ দাফনের আশ্বাস দিয়ে গোলাম মোস্তফাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে মরদেহটি তিস্তা নদীতে ফেলে দেন। দুই দিন পরে স্থানীয়দের খবরে রোববার রাতে উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধন গ্রামে তিস্তা নদী থেকে লাশ উদ্ধার করে আদিতমারী থানা পুলিশ। সোমবার ঈদের নামাজ শেষে আদিতমারী থানা পুলিশ জানাজা শেষে আদিতমারী কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নেয়। এরই মধ্যে খবর পেয়ে পরিচয় শনাক্ত করেন গোলাম মোস্তফা।
পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় আদিতমারী থানা পুলিশ ও পাটগ্রাম থানা পুলিশের সহায়তায় পাটগ্রামের নিজ গ্রামে সোমবার বিকেলে মৌসুমীকে দাফন করে।
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাতের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ও দুঃখজনক। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। মৃতের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর তার বাবার আকুতি জেনে পুলিশ সুপারের নির্দেশে দুই থানা পুলিশের যৌথ উদ্যোগে মরদেহ তার গ্রামে দাফন করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক পরবতির্তে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
লালমনিরহাট/ফারুক/সাইফ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন