ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গোপালগঞ্জে মানবপাচারে সক্রিয় শক্তিশালী দালাল চক্র

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
গোপালগঞ্জে মানবপাচারে সক্রিয় শক্তিশালী দালাল চক্র

লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের গুলিতে নিহত সুজন মৃধার বাড়িতে আহাজারি

লিবিয়ায় মানব পাচারকারীদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির একজন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বামনডাঙ্গা গ্রামের সুজন মৃধা (২০)।

সুজন মৃধার বাবা কাবুল মৃধা জানান, মুকসুদপুরের গোহালা ইউনিয়নের যাত্রাবাড়ী গ্রামের রব মোড়লের মাধ্যমে তিনি ছেলেকে লিবিয়া পাঠান।  আর এর জন্য তাকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেন।

একই সময়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে লিবিয়ার ত্রিপলি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন মুকসুদপুরের সুন্দরদী গ্রামের আরেক যুবক ওমর শেখ (২২)।

ওমর শেখের বাবা কালাম শেখ জানান, মুকসুদপুরের রাঘদী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লিয়াকত মোল্লার মাধ্যমে ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা দিয়ে তিনি ছেলেকে লিবিয়া পাঠান।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মানব পাচারকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে সক্রিয় রয়েছে শক্তিশালী দালাল চক্র।  এই চক্র টার্গেট করে গ্রামের সহজ সরল মানুষদের।  এরা বিভিন্ন দেশে মোটা বেতনে চাকরির দেয়ার প্রলোভন দিয়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করছে।  এতে স্বপ্ন পূরণের আশায় বিদেশে পাড়ি জমানো অনেক যুবকের স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে।  অনেক যুবককে জীবন দিতে হচ্ছে অথৈ সমুদ্রে অথবা মরুভূমিতে বুলেটের আঘাতে।

মুকসুদপুরে নিহত ও আহত যুবকদের পরিবার জানায়, এই অঞ্চলের প্রধান দালাল মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের জুলহাস শেখ।  স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য লোক ও টাকা সংগ্রহ করেন।  এর মাধ্যমে স্থানীয় দালালরাও পান লোভনীয় হারের কমিশন।

মুকসুদপুরের বামনডাঙ্গা গ্রামের জয়নাল সরদার (৬৫) ও আকিজুল ইসলাম বাবুল (৬৮) জানান, এই দালাল চক্র মুকসুদপুরই নয় গোপালগঞ্জের আরো অনেক এলাকা থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানুষ পাঠানোর নামে টাকা নিচ্ছে।  মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ৪ থেকে ৮ লাখ এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ১২ থেকে ১৪ লাখ করে টাকা নিচ্ছে।  পরে দালালদের মাধ্যমে সমুদ্র পথে ইউরোপে ও সড়ক পথে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হচ্ছে।  ওই সব দালালরা আবার বিদেশগামী সদস্যদের পরিবারগুলোর কাছে বিভিন্ন পন্থায় মুক্তিপণও দাবী করছে।  

রাঘদী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি লিয়াকত মোল্লা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি ওমর শেখকে লিবিয়া পাঠাইনি।  আমার মামাতো ভাই নুর আলম লিবিয়া থাকে।  তার মাধ্যমে আমার আপন চাচাতো ভাই ইমন মোল্লাকে লিবিয়া পাঠিয়েছি। '

তিনি জানান, এরা লিবিয়া যাওয়ার জন্য ঢাকার আবুল হোসেন নামে এক লোকের কাছে টাকা দেন।  টাকা দেয়ার সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।  আর লিবিয়ায় তার চাচাতো ভাই ভাল আছেন বলেও তিনি জানান।

ওই ইউপি সদস্য আরো জানান, তিনি ৬ মাস মালয়েশিয়া থাকেন আর ৬ মাস বাংলাদেশে থাকেন।  সেখানে তার ব্যবসা আছে।  

এ ব্যাপারে বর মোড়লের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে (০১৭১২৩৬০৯১৪) ফোন দিলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, ‘দালাল চক্রের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আমরা কোন অভিযোগ পাইনি।  এখন মনে হচ্ছে, আমাদের এখানে একটি সক্রিয় দালাল চক্র রয়েছে।  যারা মানব পাচারের কাজ করছে। কোন অভিযোগ পেলে দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।‘


বাদল/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়