ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

অভিযোগের ৫ বছর পর ১৮ মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ৩০ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
অভিযোগের ৫ বছর পর ১৮ মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে চার্জশিট

অভিযোগের পাঁচ বছরের বেশি সময় পর কক্সবাজার থেকে সাগর পথে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া পাচার কালে ১২ ভিকটিমকে উদ্ধার করে ১৮ মানবপাচারকারীকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় চার্জশিট দাখিল করেছে র‌্যাব।

মঙ্গলবার (৩০ জুন) মঙ্গলবার বিকেলে টাঙ্গাইল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই চার্জশিট দাখিল করা হয়।

ঢাকার র‌্যাব-২ এর সিপিসি-২ এর কোম্পানি কমান্ডার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী (তৎকালীন টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২ এর কোম্পানি কমান্ডার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) রাইজিংবিডিকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ২০১৫ সালের ১২ মার্চ টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাতুলী ইউনিয়নের বাগবাড়ী গ্রামের মৃত নাজিম উদ্দিনের ছেলে ফজলু ও মৃত ওয়াজেদ আলীর ছেলে আনিছুর রহমান টাঙ্গাইল র‌্যাবের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।

সেই অভিযোগে ফজলু ও নিছুর রহমান জানান, টাঙ্গাইল মডেল থানাধীন চৌবাড়ীয়া ও ইছাপাড়া গ্রামের রুবেল, শহিদুল, শওকত ও ইউসুফ নামের চার ব্যক্তি চট্টগ্রামের আবু মোহাম্মদ ও পিন্টু, কক্সবাজারের আনোয়ার, মাহমুদুল ও হামিদুল নামের কয়েক ব্যক্তির সহযোগীতায় কাতুলী ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন যুবককে নানা প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাচার করে।

অভিযোগকারীদের দুই ছেলে জাহাঙ্গীর ও সোহেলকেও একইভাবে মাছ ধরার ট্রলারে করে মালয়েশিয়া পাচার করা হয়। পরে সেখানে জাহাঙ্গীর ও সোহেলকে নানাভাবে নির্যাতন করে তাদের পরিবারের কাছে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণ না দিলে তাদের সন্তানদের মেরে সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় পাচারকারীরা।

এমন অভিযোগের পরই অভিযানে নামে র‌্যাব। পরে সে বছরের ২২ মার্চ টাঙ্গাইল থেকে পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম থেকে আরও তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যমতে কক্সবাজারের উখিয়া থানার খনিয়া পালং থেকে আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেসময় তাদের হেফাজত থেকে মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে আটকে রাখা ১২ জন যুবককে উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকা থেকে আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের পর মামলার তদন্তভার পড়ে র‌্যাবের হাতে। তদন্তকর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় সেই সময়ের টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও র‌্যাব-১২ এর সিপিসি-৩ এর কোম্পানি কমান্ডার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকীকে। মামলার তদন্তে বিভিন্ন সময়ে সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্রের ১৮ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযোগপত্রে দাখিলকৃত আসামিরা হলেন- টাঙ্গাইলের চৌবাড়ীয়া গ্রামের মো. আঃ হাই ঠান্ডুর ছেলে মো. রুহুল আমিন ওরফে রুবেল (২৬), মৃত লাল মিয়ার ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম (২৭), চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার বিশ্বব্যাংক আবাসিক এলাকার মৃত জামাদ আলীর ছেলে মো. আবু মোহাম্মদ (৪২), চুয়াডাঙ্গার আলম ডাঙ্গা থানার ভাবাদি গ্রামের শাকেরের ছেলে মো. পিন্টু আলী (২৭), কক্সবাজারের উখিয়া থানার ৬নং ওয়ার্ড গয়ান মারা রতনা পালং গ্রামের মো. রুস্তম আলীর ছেলে মো. আনোয়ার ইসলাম (৩২), একই জেলার রামু থানার দেচুয়া ফালং গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে মো. হামিদুল হক ওরফে কামাল ডাকাত (৩৫), টাঙ্গাইলের ইছাপাশা এলাকার মো. আব্দুল হাকিম মুন্সির ছেলে ইউনুছ আলী (৩৫), জাফর মুন্সীর ছেলে মো. শওকত আলী (৩৬), কক্সবাজারের রামু থানার ধোয়া পালং গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে বাপ্পী বাকুইল্ল্যাহ ওরফে শফি, হোসেন আলী ওরফে লেংড়া আলীর ছেলে মো. আব্দুল করিম (৪৫), আশরাফ মিয়ার ছেলে মনসুর (৫২), টেচার দ্বীপ দক্ষিণপাড়া গ্রামের হাজী কাদের হোসেনের ছেলে আব্দুল কালাম (৩৮), হাজী মাহমুদ হোসেনের ছেলে আব্দুল গফুর (১৯), আব্দুল করিমের ছেলে বেলাল, পতালক আসামী কক্সবাজারের রামু থানার পূর্ব গোয়ালিয়া এলাকার আশরাফ মিয়ার ছেলে মো. সুরুত আলম (৩৮), উখিয়া থানার ছেপদ আলী এলাকার মাহবুব আলমের ছেলে মো. আকবর ওরফে ছৈয়দ আকবর (৩৩), ও একই থানার দোয়াপালং গ্রামের সুলতান আহমেদের ছেলে সাবু।

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী আরও জানান, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করে এই সকল আসামিদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরীহ লোকদের বিনা পয়সায় মালয়েশিয়া পাঠানোর নাম করে দালালদের মাধ্যমে নিয়ে মধ্যসাগরে আটকে রাখতো। পরে তাদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিতো। টাকা না দিলে ভিকটিমদের মেরে সাগরে ভাসিয়েও দিতো।

চার্জশিটভুক্ত ১৮ আসামির মধ্যে তিনজন পলাতক রয়েছেন। কয়েকজন আছেন জামিনে। বাকিরা টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন।


শাহরিয়ার সিফাত/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়