ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

চাঁদপুরের নদীপথে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ বেড়েছে

অমরেশ দত্ত জয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২৪ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
চাঁদপুরের নদীপথে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ বেড়েছে

চাঁদপুরের নদীপথে নৌযানে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ বেড়েছে।  এসব নৌযানের বেশির ভাগই চলাচল করছে অনুমোদনবিহীন। 

নৌযানে নেই ভ্রমণকারীদের জন্য জীবন রক্ষাকারী বয়া, লাইফ জ্যাকেট, দিক-নির্ণায়ক যন্ত্রসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।  ফলে দুর্ঘটনায় পড়লেও রক্ষার উপায় থাকছে না।

ভ্রমণ পিপাসুদের চাহিদাকে পুঁজি করে চাঁদপুরের অনেকস্থানে নদীতীরে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট ট্রলারের ঘাট।  এরা ঘন্টাপ্রতি ভ্রমণ পিপাসুদের থেকে ৫-৬শ টাকা ভাড়া আদায় করছে।  অথচ এর থেকে কোন রাজস্বই পাচ্ছেনা সরকার।  আবার নেই কোন নিয়মকানুন, চলছেও ইচ্ছেমতো। 

এদের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে নামসর্বস্ব কোন সমিতি বা সিন্ডিকেটের কাছে।  যারা এদের থেকে মোটাদাগে মাসোহারা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এসব নৌযানের কোন নকশা অনুমোদনও নেই।  সরকার নির্ধারিত সরঞ্জাম রাখার নিয়ম থাকলেও তা উপেক্ষিত।  নেই কোন নিবন্ধন।  ফলে দুর্ঘটনার শিকার হলেও সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছেনা।

সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, অনুমতি ও লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক কিনা এ বিষয়টি বোট কর্তৃপক্ষের অনেকেই জানেনা।  এসব কাঠ ও স্টিলবডির ট্রলার নদীতে যাওয়ার আগে কতজন ভ্রমণ পিপাসু যাত্রী নিয়েছেন।  নদীতে যাওয়ার সক্ষমতা রাখছে কি না?  এসবেরও খোঁজ রাখছে না সরকারের নদী সংশ্লিষ্ট কোন দপ্তর। 

সোমবার (২৪ আগস্ট)  ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চাঁদপুরের উপ-সহকারী পরিচালক ফরিদ আহমেদ জানান, চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত ২৬টি নৌ দুর্ঘটনার উদ্ধারকাজে তারা অংশ নিয়েছেন।  এসব দুর্ঘটনায় তারা ২০টি মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন।  তবে সব নৌযান দুর্ঘটনার খবর তাদের দপ্তর পর্যন্ত পৌঁছায় না বলেও জানান তিনি।

চাঁদপুর শহরের বড়স্টেশন মোলহেডে ‘মোহনা ডিঙ্গি মাঝি সমিতি' নামের এক সমিতির খোঁজ মিললো।  যারা সংশ্লিষ্টদের থেকে ইজারাবিহীনভাবে জায়গা দখল করে মোলহেডে ট্রলার ভ্রমণ পরিচালনা করছেন।  এই সমিতির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ৭২টি স্টিল বডি ট্রলার।  এই সমিতির সভাপতি মানছুর মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম মোল্লা, কোষাধ্যক্ষ মো. জাকির। 

তারা জানালেন, তারা সরকারি নিয়ম মেনে ট্রলার চালাতে প্রস্তুত।  তবে সে নিয়ম না জানায় দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ এখানে সমিতির মাধ্যমে ট্রলার চালালেও সমিতিটি রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না।  তারা সরকারি সব নিয়ম মানতে তাদের ‘মোহনা ডিঙ্গি মাঝি সমিতি' দ্রুত সংশ্লিষ্টদের নিকট রেজিষ্ট্রেশন করে দেওয়ার দাবিও জানান।

এ রকমভাবে চাঁদপুরের পুরানবাজার, হরিনা, আলু বাজার, মোহনপুরসহ আরো বেশ কিছু স্থানে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্টিল বডি ট্রলার নদীতে চলাচল করছে।

চাঁদপুরের মোলহেডে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের অভিযোগ, স্টিলবডি এসব ট্রলার ঘন্টাপ্রতি মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করেছে।  শুধু তাই নয়, তারা তাদের নড়বড়ে ফিটনেসের ট্রলারে ৩০/৪০ পর্যন্ত যাত্রী নিচ্ছে।  অনেকে ট্রলার নিয়ে চলে যাচ্ছে পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মাঝামাঝি স্রোতেও।  অথচ তাদের ট্রলারে নেই পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, রিং বয়াসহ নিরাপত্তা সরঞ্জাম।  এমনকি নেই ট্রলার চালকদের তেমন কোন প্রশিক্ষণ।  এতে করে ঝুঁকিতে নৌ ভ্রমণে যেতে হচ্ছে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, ‘আমরা স্টিল বডি ট্রলারগুলোকে বার বার সতর্ক করছি মাঝ নদী বা স্রোতময় এলাকায় না যেতে।  আমরা মোলহেডে গতবছরের আগের বার ১শ এবং গত বছর আরো ৫০টি লাইফ জ্যাকেট ওই স্টিলবডি ট্রলার চালকদের দিয়েছি।  এবছরেও দরকার হলে আরো দিবো।  তবে ওরা যদি অতিরিক্ত ভাড়া এবং ট্রলারে অতিরিক্ত যাত্রী নেয় এবং যাত্রীদের সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া ট্রলারে উঠায়।  এ বিষয়ে দিক-নির্দেশনা অমান্য করলে ওদের বিরুদ্ধে ঘন ঘন মোবাইল কোর্ট করে ব্যবস্থা নিবো। '  

চাঁদপুর/জয়/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়