ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বন্যায় কুড়িগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা

বাদশাহ্ সৈকত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৫, ২৫ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১৫:৩৪, ২৫ আগস্ট ২০২০
বন্যায় কুড়িগ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা

কুড়িগ্রামে দীর্ঘ বন্যায় ব‌্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচা-পাকা সড়ক, বাঁধ ও ব্রিজ-কালভার্ট। এতে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এ অবস্থায় বন্যা পরবর্তী সময়ে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চলসহ বন্যা দুর্গত এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। 

দেড় মাসের দীর্ঘ বন্যায় প্লাবিত ছিলো কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার ৫৬ ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা। এতে সরকারি হিসেবেই সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ১৯১ কিলোমিটার পাকা সড়ক। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ৬৩টি ব্রিজ, ১৮১টি কালভার্ট, ১১৪৫ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক ও ১৩৭ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানিয়েছেন- কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন নয়টি উপজেলায় সবগুলো বিভাগের সমন্বয়ে কাঁচা-পাকা সড়ক, বাঁধ ও ব্রিজ-কালভার্টের ক্ষতি নিরূপণ করে এগুলো নতুন করে তৈরি, মেরামত ও সংস্কারের জন্য তালিকা ও ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে জেলায় সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮.৮০ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ৪০১ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, ২১ কিলোমিটার নদ-নদীর তীর রক্ষা বাঁধ, ছয়টি ব্রিজ ও ১০টি কালভার্ট। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮৩ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ৭৪৪ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক, ১১৬ কিলোমিটার নদ-নদীর তীর রক্ষা বাঁধ, ৫৭টি ব্রিজ ও ১৭১টি কালভার্ট।

নতুন করে এসব সড়ক, বাঁধ ও ব্রিজ-কালভার্ট তৈরি ও সংস্কারে ব্যয় ধরা হয়েছে, সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পাকা সড়কে কিলোমিটার প্রতি ৫০ লাখ টাকা, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পাকা সড়কে কিলোমিটার প্রতি ১০ লাখ টাকা, সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা সড়কে কিলোমিটার প্রতি তিন লাখ টাকা, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা সড়কে এক লাখ টাকা।

এছাড়াও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজে ৩৫ লাখ টাকা, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজে পাঁচ লাখ টাকা, সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত কালভার্টে তিন লাখ টাকা, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত কালভার্টে দুই লাখ টাকা এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণে ১০ লাখ টাকা ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণে পাঁচ লাখ টাকা। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় মোট ব্যায়ের পরিমাণ প্রায় ৬২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

এই তালিকা অনুমোদন দিয়ে অর্থ ছাড় সাপেক্ষে জেলার সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

এদিকে বন্যার সময় চরম দুর্ভোগে দিন পার করা জেলার প্রায় সাড়ে চার শতাধিক চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ বন্যা পরবর্তী সময়েও ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-ঘাটে চরম দুর্ভোগ নিয়ে জীবন-জীবিকার চাহিদা মেটাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সড়কে কোনো যান-বাহন চলাচল করতে না পারায় পায়ে হেঁটে হাট-বাজার, অফিস-আদালতসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিতে উপজেলা বা জেলা শহরের হাসপাতালে আসতে হচ্ছে তাদের। 

এ অবস্থায় কোনো পণ‌্য সামগ্রী বা প্রয়োজনীয় মালপত্র পরিবহন করতে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। এ অবস্থায় স্থানীয় মানুষজন সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো চলাচলের জন্য নিজেরাই বাঁশের সাঁকো বানিয়ে চলাচলের চেষ্টা করছে। 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের গারুহারা গ্রামের আবুল হোসেন জানান, রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় কষ্ট করে পায়ে হেঁটে হাট-বাজারে যেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় কোনো কিছু বাজারে আনা-নেওয়া করতেও কষ্ট। মাথায় করে বহন করে আনা নেওয়া করতে হয়।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার বলেন, ‘আমার পুরো ইউনিয়নই বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছিল। এতে কাঁচা-পাকা সব রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। জরুরি প্রয়োজনে রোগী নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। আমি চাই দ্রুত এসব মেরামতে করে মানুষের দুর্ভোগ কমানো হোক।’

কুড়িগ্রাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ আব্দুল আজিজ বলেন, ‘‘বন্যায় কুড়িগ্রাম জেলায় শুধু এলজিইডি’র ১২৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। 

‘এছাড়াও ৩১টি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে যেগুলো রিপ্লেসমেন্ট করতে হবে। আমরা তালিকা করে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে পাঠিয়েছি পাশাপাশি জেলা প্রশাসকের কাছেও পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ করা হবে।” 

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, জেলার সবগুলো বিভাগের সমন্বয়ে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এবারের বন্যায় কুড়িগ্রাম জেলায় ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪১৮ কোটি টাকা। বরাদ্দ পেলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করা হবে।

কুড়িগ্রাম/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ