ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খলিলের অন্যরকম জীবন

বেলাল রিজভী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:৪৭, ১ অক্টোবর ২০২০
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খলিলের অন্যরকম জীবন

মাইকিং করে উপার্জিত অর্থ দিয়ে চলছে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খলিলের সংসার।  স্ত্রী আর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে সংসার তার।  দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হলেও ভিক্ষাবৃত্তিকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বেছে নিয়েছেন মাইকে প্রচারণার কাজ।

খলিলুর রহমান (৩৮) মাদারীপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা।  বড় হয়েছেন অভাব-অনটনের সংসারে।  বাবার জায়গা-জমি না থাকায় পৌর শহরের রকেটবিড়ি এলাকায় ঘর ভাড়া করে সেখানেই বাস করছেন তিনি।

আলাপকালে জানান, মাত্র ৪ বছর বয়সে এক দুর্ঘটনায় তিনি দৃষ্টি হারান।  ফলে আর পড়াশোনা করা সম্ভব হয়নি। 

কেমন করে মাইকিংয়ের পেশায়? তিনি জানান, কন্ঠই তাকে এ পেশায় নিয়ে এসেছে।  তিনি খুব ভালো আজান দিতে পারতেন।  এই আজান শুনে একদিন মাদারীপুর পুরান বাজার জামে মসজিদ থেকে প্রস্তাব আসে তার কাছে।  ২ হাজার টাকা বেতনে মুয়াজ্জিন নিযুক্ত হন।  এই মসজিদে তিনি ৩ বছর এ দায়িত্বে ছিলেন।  এরমধ্যেই মাইকিংয়ের কাজ আসতে থাকে।  এখন তার পরিচিতি বেড়েছে।  কারো মাইকে কোনো কিছু প্রচারের দরকার হলেই তাকে ডেকে নেয়।  মাইকিংয়ের উপার্জিত আয়ে তার সংসার চলছে।

খলিল জানান, ভিক্ষা বা কারো বোঝা হয়ে থাকা তার কাছে খুবই অপছন্দের।  আর প্রচারের এই কাজটিও তিনি বেশ উপভোগ করছেন। 

তিনি বলেন, ভিক্ষাবৃত্তিকে আমি ঘৃণা করি।  কষ্ট হলেও সম্মান নিয়েই বেঁচে থাকতে চাই। 

খলিল জানান, প্রচারণার পুরো বিয়ষটি তিনি শুনে মুখস্ত করে ফেলেন।  সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে মাইকিং এর কাজ।  মাইকিং এর কাজে দরকার একটি মাইক ও একটি রিকশা অথবা ভ্যান গাড়ি।  নিজের না থাকায় তাকে প্রচারণার কাজে এসব ভাড়া করতে হচ্ছে।  তাই আয়ের অর্ধেক টাকাই দিয়ে দিতে হচ্ছে ভাড়া বাবদ। 

খলিল বলেন, আমার একটি রিকশা ও মাইক থাকলে কাজে সুবিধা হতো।

এদিকে খলিলের এই উপার্জনকে সমাজের দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন সাধারণ মানুষ।  আর জেলা প্রশাসনও তাকে প্রচারণার কাজে লাগাতে চেয়েছেন।  সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে খলিলকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে।

মাদারীপুরের স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ বলেন, প্রতিবন্ধী খলিল চাইলে ভিক্ষা করতে পারতো। তিনি সেটা না করে সৎভাবে জীবন যাপন করছেন।  তিনি বেকার যুব সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, খলিলুর রহমানকে সরকারি বিভিন্ন প্রচারণায় কাজে লাগানো হবে।  এছাড়াও প্রতিবন্ধী হিসেবে তাকে সরকার প্রদত্ত সব সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে।

মাদারীপুর সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তাপস ফলিয়া বলেন, প্রচারণার প্রয়োজনীয় উপকরণ কেনার জন্য খলিল চাইলে জেলা সমাজসেব অধিদপ্তর তাকে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে।  এছাড়াও সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে তার জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মাদারীপুর/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়