ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

চিকিৎসক-সরঞ্জামসহ ৫ সমস্যায় ময়মনসিংহের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো

মাহমুদুল হাসান মিলন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১৬ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ০৯:২৯, ১৬ অক্টোবর ২০২০
চিকিৎসক-সরঞ্জামসহ ৫ সমস্যায় ময়মনসিংহের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো

কার্যক্রম শুরুর পর এখন পর্যন্ত হয়নি জটিল অস্ত্রোপচার ও প্রসূতিদের সিজারিয়ান অপারেশন। কারণ গাইনী ও অ্যানেসথেসিয়ার জন্য নেই একজন চিকিৎসকও। সীমিত পরিসরে প্যাথলজি ল্যাব চালু থাকলেও নেই অ্যানালাইজার, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন, ল্যাবের জন্য এলইডি মাইক্রোস্কোপ ও ডিজিটাল এক্সরে মেশিন। 

‘না’ থাকার এ চিত্র ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। যা উঠে এসেছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা নুরুল হুদা খানের বক্তব্যে।

অনেকটা অভিন্ন চিত্র ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেরও।  সেখানকার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা বিধান চন্দ্র দেবনাথ রাইজিংবিডিকে জানান, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আর লোকবল সংকটে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ত্রাহী অবস্থা।  এ নিয়ে অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হলেও সমাধান হয়নি।

বিভিন্ন সমস্যা আর সংকটের বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া এ দু’টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মতো একই তথ্য মিলেছে জেলার আরও ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের। দীর্ঘদিনের বিরাজমান এসব সমস্যা সমাধান না হওয়ায় সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বছরের পর বছর। ফলে স্থানীয়রা উন্নত চিকিৎসার জন্য হচ্ছেন রাজধানীমুখী।

জেলার বাকি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ফুলপুর, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, গৌরীপুর, গফরগাঁও, নান্দাইল, ত্রিশাল, ভালুকা, মুক্তাগাছায় অবস্থিত। 

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট পদে প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। ল্যাব অ্যাটেনডেন্টদের পদটিও শূন্য অনেক উপজেলায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবসহ রয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, আবাসন সংকট। একইসঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স সমস্যার চিত্রও পাওয়া গেছে।

ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ কামরুল হাসান ভুঁইয়া রাইজিংবিডিকে জানান, জেলায় ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১১টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। বাকি দুটি তারাকান্দা ও সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণাধীন। 

জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানিয়েছে, বেশিরভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে নেই কনসালটেন্ট, নাক-কান-গলা, চক্ষু, কার্ডিওলজি ও শিশু বিশেষজ্ঞ। মেডিক্যাল অফিসার, আউটডের ও ইনডোর চিকিৎসক মিলিয়ে জেলায় ৩৫৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ২৫৭ জন। অর্থাৎ ১১৬টি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি।

সূত্র মতে, এসব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই। কোথাও অ্যাম্বুলেন্স আছে আবার কোথাও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। 

ফুলপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউল করিম রাসেল রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রতিবার আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিভিন্ন সমস্যার চিত্র তুলে ধরেন। আমরাও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ এসব সমস্যার এখনো সমাধান নেই। 

এদিকে, ময়মনসিংহের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য ১০ শয্যা করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তবে সচেতনতার অভাবে সাধারণ মানুষ হাসপাতালমুখী হন না। যদিও জেলা সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, করোনার শুরুর দিকে দু’একজন করে রোগী কোভিড-১৯ চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।  

অভিযোগ রয়েছে, এসব সংকটের সুযোগ নিচ্ছে দালাল চক্র। তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগী বাগিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। 

ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা হুমায়ুন কবির অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসকদের হাসপাতালে পাওয়া যায় না। তারা ক্লিনিকে রোগী দেখেন। এতে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভাগ পান। কিন্তু আমাদের মতো গরিব রোগীদের সরকারি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। 

সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দালালের মাধ্যমে প্রতারিত মজিবুর রহমান বলেন, ‘চিকিৎসা নিতে আইলাম সরকারি হাসপাতালে। দালাল লইয়া গেলো সামনের ক্লিনিকে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার বড় ফর্দ ধরাইয়া দিলো। পকেট থেইক্ক্যা ২ হাজার শেষ।’ 

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন এ কে এম মসিউল আলম জানান, করোনা মহামারিতে নিরবচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে অনেক চিকিৎসক আক্রান্ত হয়েছেন। অনেককে আবার কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। এমন সংকেটের মধ্যেও চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গেই চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। 

তবে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়গুলো আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দেশের বেশিরভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই এরকম সমস্যা রয়েছে। 

দালালদের রোগী বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই। আর কেউ অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ময়মনসিংহ/জেডআর

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়