ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

নিরাপদ সন্তান প্রসবের আপন ঠিকানা দুর্গাপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

মাওলা সুজন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ৩০ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১১:৪৬, ৩০ অক্টোবর ২০২০
নিরাপদ সন্তান প্রসবের আপন ঠিকানা দুর্গাপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র

কয়েক বছর আগেও স্বাস্থ‌্য সেবায় জরাজীর্ণ ছিল নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। নামমাত্র রুটিন কাজ হতো এখানে। অন্য রোগীদের মতো প্রসূতি মায়েরাও ছুটে যেতেন শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে।

কিন্তু এখন বদলে গেছে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সেবার মান। প্রসূতি সেবা দানে এই কেন্দ্রটি আজ অনন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। গর্ভবতী ও প্রসূতিদের কাছে নিরাপদ সন্তান প্রসবের আপন ঠিকানা এটি। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশসহ পাশ্ববর্তী উপজেলাতেও। এখানে নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্য দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিনা খরচে সন্তান প্রসব শেষে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যান মায়েরা।

শুধু দুর্গাপুর ইউনিয়নের প্রসূতিরাই নয়, আশপাশের ইউনিয়ন ও উপজেলার প্রসূতিরাও আসেন এখানে সেবা নিতে। এক মাসে ১৩০ শিশু জন্মগ্রহণের রেকর্ড করেছে এই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি।

হঠাৎ করে এই কেন্দ্রের বদলে যাওয়ার পেছনে রয়েছে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ জলিলের বিশেষ অবদান রয়েছে। তিনি ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি নির্মাণ করেন। এরপর সেভ দ্যা চিলড্রেনের একটি প্রকল্পের অধীনে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগিতায় এটিকে আধুনিক স্বাস্থ‌্য কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন। কেন্দ্রটিতে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ থেকে এক পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, এক উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেন।  তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় এই সেবা কেন্দ্রটি আজ  এতো জনপ্রিয়।

বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানউল্যাপুর ইউনিয়নের আমেনা বেগম জানান, তার ছোট বোন গর্ভবতী। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, গর্ভের বাচ্চা ওপরে উঠে গেছে, দ্রুত অপারেশন করতে হবে। ভয় নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন তারা। পরদিন লোকমুখে এই কেন্দ্রের কথা শুনে এখানে আসেন। পরে এখানে বিনা আপরেশনে তার বোনের একটি ছেলে সন্তান হয়।

পার্শ্ববর্তী উপজেলা সেনবাগ থেকে নাসিমা আক্তার এসেছেন তার মেয়েকে নিয়ে। পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘লোকমুখে এটার কথা শুনে এসেছি। আমাদের গ্রামের কয়েকজন এখানে বিনা পয়সায় চিকিৎসা নিয়েছেন। কোনো সমস্যা হয়নি। এটা শুনে এসেছি।’

শুধু তারা নয়, উপস্থিত বিভিন্ন এলাকার অনেকেই জানিয়েছেন এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রর ভালো চিকিৎসার কথা। এখানে বিনা খরছে যে সেবা পাওয়া যায়,তা বেসরকারি হাসপাতালেও টাকা দিয়ে পাওয়া যায় না বলেও জানান নাসিমা আক্তার।

পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ঝর্ণা বেগম জানান, এখানে যারা আসেন,তাদের সকলকে সাধ‌্যমতো চিকিৎসা দেওয়া হয়। সন্তান হওয়ার পরও নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ পান এখানকার রোগীরা। শুধু প্রসূতি মায়েরা নয়, অনান্য রোগীরা এখান থেকে পরামর্শ ও ওষুধ নেন। অধিক গুরুতর রোগ ও রোগীর ক্ষেত্রে বড় হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন তারা।

প্যারামেডিক দিলরুবা শারমীন জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আশপাশে সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে, এখানে ২৪ ঘণ্টা নরমাল ডেলিভারি করানো হয়। লেখা অনুযায়ী সেবার কোনো হেরফের হয় না। দিন রাতে সেবাতে কোনো ভেদাভেদ নেই। যখনই প্রসূতি আসেন, তখনই সেবা দেওয়া হয়।অনেক সময় গভীর রাতে উঠে সন্তান প্রসব করাতে হয়।

উপ-সহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল মোতলেব জানান, গত তিন মাসে এই কেন্দ্রে ৩৪৯টি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। এর মধ্যে গত জুন মাসেই জন্ম হয়েছে ১৩০ শিশুর। প্রসূতি আসলে তাকে প্রথমে ভালোভাবে দেখা হয়। যদি ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয় তাহলে সরকারি বড় হাসপাতালে রেফার করা হয়।

পরিবার পরিকল্পনা জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) একেএম জহিরুল ইসলাম জানান, দুর্গাপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রটি  সারাদেশের জন্য একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাও এরই মধ্যে এ সফলতা দেখে গেছেন। এই কেন্দ্রটি গত তিন মাসে সারা দেশের মধ্যে প্রসূতি সেবা ও সন্তান প্রসব তালিকায় সেরা দশের মধ্যে অবস্থান করছে। এটির সফলতা দেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গর্ভবতী মায়েদের জন্য নিরাপদ মাতৃত্ব সেবা চালু হয়েছে।

নোয়াখালী/বুলাকী 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়