ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

লাইফ সাপোর্টে ‘ছাগলমারা খাল’

মাওলা সুজন, নোয়াখালী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৭, ৬ নভেম্বর ২০২০  
লাইফ সাপোর্টে ‘ছাগলমারা খাল’

এক সময় নোয়াখালী জেলার প্রধান শহর মাইজদী ও এর আশেপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম ছিল ‘ছাগলমারা খাল’। কালের বিবর্তনে এই খাল দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ভবন-স্থাপনা। আর এসব ভবন-স্থাপনার বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে খাল। এরফলে বর্ষা মৌসুমে ‘একটুখানি বৃষ্টি হলেই কোমর সমান পানিতে’ ডুবে যায় শহরের প্রধান সড়ক। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এই খাল এখন ‘লাইফ সাপোর্টে’ চলে গেছে। এখনই উদ্যোগ না নিলে একদিন হয়তো এই খালের অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খালপাড় দখল করে তৈরি করা হয়েছে বহুতল মার্কেট, আবাসিক ভবন ও বসতবাড়ি। এসব ভবনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে খালে। এতে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে নোয়াখালী পৌর বাজারের ব্যবসায়ী, হরিনারায়ণপুর, বিশ্বনাথ, ফকিরপুর, সুলতান কলোনিসহ অন্তত ১০ এলাকার বাসিন্দাকে। 

খাল সম্পর্কে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তথ্য দিতে পারেনি নোয়াখালী পৌরসভাও। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার সাবেক এক সার্ভেয়ার বলেন, ‘‘১৯২২ সালের জেলা জরিপের সময় এই খালকে ‘ছাগলমারা খাল’হিসেবে নকশায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। খালটি মাইজদীর বিভিন্ন অংশে আঁকাবাঁকাভাবে খনন করা হয়েছে। ফলে এর প্রস্থ একেক জায়গায় একেক রকম ছিল। তবে, সবচেয়ে কম প্রস্থ ছিল ২৫ ফুট। আর সর্বোচ্চ প্রস্থ ছিল ৪৫ ফুট। বর্ষায় শহরের পানি একদিকে ছাগলমারা খাল হয়ে নোয়াখালী খালে পড়তো। অন্যদিকে মাইজদী বাজার-গাবুয়া খাল হয়ে পড়তো মালেক খালে।’’

এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালের শেষ অংশ দত্তেরহাট হয়ে নোয়াখালী খালে গিয়ে পড়েছে। তাই বর্ষা মৌসুমে শহরের সিংহভাগ পানি নালার মাধ্যমে ছাগলমারা খাল হয়ে নোয়াখালী খালে গিয়ে পড়তো। যত দিন খালের অবস্থা ভালো ছিল, তত দিন শহরে জলাবদ্ধতা ছিল না। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে খালটি এখন মৃতপ্রায়। 

এই প্রবীণরা বলছেন, ‘দখল-দূষণে খালটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে। এজন্য পাউবো ও পৌরসভার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়ী। তাদের অভিযোগ, শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য ছাগলমারা খালের দিকে পৌরসভা যেমন নজর দিচ্ছে না, তেমনি কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পাউবোও।

এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহিদ উল্যাহ খান সোহেল বলেন, ‘পাউবো এখনো ছাগলমারা খালটি পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেয়নি। এরপরও শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খালের পাড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে, পাউবোর নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর খালের কিছু অংশ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দখলমুক্ত করা হয়েছে। খালপাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা যে সব স্থাপনা ও ভবন এখনো সরানো হয়নি, সেগুলো সরাতে অভিযান চালানো হবে।’ 

খাল দখলমুক্ত করে পুনঃখনন করে গভীরতা বাড়িয়ে পানির প্রবাহ ঠিক করা হবে বলেও নির্বাহী প্রকৌশলী জানান। 

নোয়াখালী /এনই 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়