ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ভৈরব খননে শুভঙ্করের ফাঁকি, পাউবো বলছে ৮০ ভাগ শেষ

সাকিরুল কবীর রিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ৬ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১০:৩৫, ৬ নভেম্বর ২০২০
ভৈরব খননে শুভঙ্করের ফাঁকি, পাউবো বলছে ৮০ ভাগ শেষ

যশোরের চৌগাছার তাহেরপুর থেকে যশোর সদরের বসুন্দিয়া পর্যন্ত ভৈরব নদের ৯২ কিলোমিটার খননে ২৭২ কোটি ৮১ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে, বাকি ২০ ভাগের কাজ চলছে। পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন, স্বচ্ছতার সাথে কাজ এগুচ্ছে। চলতি মাস থেকেই আবার চূড়ান্ত খনন শুরু হবে।

অপরদিকে, নদী সংস্কার আন্দোলন কমিটি বলছে, এখনও পর্যন্ত ভৈরব নদ খননের কোনো কাজ ডিজাইন মোতাবেক হয়নি। নদী খনন অংশের সর্বত্রই ব্যাপক ঘাপলাবাজির মধ্যে হয়েছে। শুভঙ্করের ফাঁকি চলছে। 

২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট ‘জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় যশোরের ভৈরব নদ পুণখনন প্রকল্পটি একনেকের সভায় পাস হয়। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে নদী খননের কাজ শুরুর টার্গেট হাতে নেওয়া হয়। খনন কাজ ১ জুলাই ২০১৭ থেকে শুরু হয়ে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়।

২০১৮ সালের মে মাসে ভৈরবের দু’পাড়ের ১১৮টি কাঁচা পাকা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে যশোর শহরতলীর কনেজপুরে প্রথম খনন শুরু হয়। ৯৬ কিলোমিটার নদ খননের জন্য ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। এই ৯৬ কিলোমিটারের যশোর শহরের ৪ কিলোমিটারসহ ১০ কিলোমিটারের কাজ এখনো হয়নি বলে জানা গেছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে- শহরতলীর ডাকাতিয়া বোলপুর বাহাদুরপুর কনেজপুর ও চৌগাছার তাহেরপুর অংশ ও ঝুমঝুমপুর নীলগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে রাজারহাট রুপদিয়া বসুন্দিয়া ঘোড়াগাছি পর্যন্ত খনন কাজ শেষ হয়েছে। তবে ওই সব অংশে কাজ ডিজাইন অনুযায়ী দৃশ্যমান হয়নি। গত বর্ষায় অনেক অংশের কাজ শুধু ড্রেজার মেশিন নির্ভর হওয়ায় পানির নিচে মাপজোকের ব্যাসিসে বুঝে নেওয়া হয়েছে। নদের পাড় কোনো অংশেই দৃশ্যমান না হলেও বিশাল অংকের টাকা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদাররা।

ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির নেতৃবৃন্দের দাবি, এ অঞ্চলের জনগণের দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল ভৈরব নদ খনন প্রকল্প। যশোরের মানুষের স্বপ্ন, নদটি সংস্কার হলে নদের যৌবন ফিরে পাবে। নদটিতে আবরো নৌকা চলবে। কিন্তু সঠিকভাবে কাজ না হওয়ায় নদে নৌকা চলা তো দুরের কথা, সঠিকভাবে পানির প্রবাহও চলবে না। 

আন্দোলন কমিটির নেতৃবৃন্দ বলছেন, পাউবোর প্রত্যক্ষ পরোক্ষ মদদে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নামমাত্র নদ খনন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কাছে খনন কাজটি যথাযথ বুঝে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। 

এ ব্যাপারে ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ইকবাল কবির জাহিদ সাংবাদিকদের বলেন,  এ অঞ্চলের মানুষের কৃষি, মৎস্য, যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ভৈরব নদটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নকে সম্মান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২৭২ কোটি ৮১ লাখ টাকার বড় প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মযজ্ঞ তুলে দেন পাউবোর হাতে। অথচ এখানে শুধু নয় ছয় হচ্ছে। 

নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির নেতৃবৃন্দ খনন হয়ে যাওয়া নদের বিভিন্ন অংশে সরেজমিনে যান। কেনো অংশেই কাজেই তারা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তারা জানিয়েছেন, ঘাপলা ও ফাঁকিবাজির মাধ্যমে কার্যক্রম শেষ হয়েছে। কিছু কিছু খনন হওয়া জায়গায় ভরাট দেখাচ্ছে। ইতোমধ্যে কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে পাউবো যে বাহবা কুড়াচ্ছে তা খাতা কলমে হতে পারে, বাস্তবে নয়।

যশোর/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়