ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আলু-পেঁয়াজের দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতা: ফায়দা অসাধু ব‌্যবসায়ীদের

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৮, ২৮ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ২২:১৭, ২৮ নভেম্বর ২০২০
আলু-পেঁয়াজের দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতা: ফায়দা অসাধু ব‌্যবসায়ীদের

ফাইল ছবি

বাজারে পর্যাপ্ত আলু রয়েছে। এর পরও সরকার বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি হচ্ছে না। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেশি দামে (৪৫-৫০ টাকা) বিক্রি করছেন ব‌্যবসায়ীরা। 

এছাড়া প্রচুর সরবরাহ থাকার পরেও ঝাঁঝ কমছে না পেঁয়াজের। বিদেশি ৪০ থেকে ৪৫, দেশি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

ক্রেতারা বলছেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম ঘোষণায় সীমাবদ্ধ, বাজারে তার প্রতিফলন নেই। তাদের অভিযোগ, দুর্বল বাজার মনিটরিংয়ের কারণে ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা’ দাম বাড়িয়ে ফায়দা নিচ্ছেন। 

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- কঠোর মনিটিরিং হচ্ছে। ডিসেম্বরের শুরুতে আলু-পেঁয়াজের দামও কমবে। 

শনিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর মালিবাগ ও শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা যায় সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে সেখানে আলু বিক্রি হচ্ছে না।
বাজারে আসা একাধিক ক্রেতা বলেন, ‘রান্নায় আলু ও পেঁয়াজ অপরিহার্য। গত আড়াই মাস ধরে এ দুটি পণ‌্যের দাম বেশিই রয়েছে। কমছে না।

রাজধানীর মালিবাগ ও শান্তিনগর বাজারে আসা গোফরানুল হক ও হেমায়েত উদ্দীন বলেন, সরকার আলুর দাম খুচরা ৩৫ এবং পাইকারী ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু বাজারে প্রতি কেজি আলু ৪৫-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শান্তিনগর বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী সবুজ বলেন, ‘কৃষক ও কোল্ড স্টোর থেকে ৩৫ টাকায় কিনে ভ্যান লেবার খরচসহ ৩৭ টাকা দাম পড়ে যায়। এক টাকা লাভ করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছি। সরকার দাম বেঁধে দিলে হবে না, আমরা কিনছি ৩৭ টাকায়, ৩৫ টাকায় কীভাবে বিক্রি করব?’

শ্যামবাজারের বাবা-মায়ের দোয়া এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটারের ম্যানেজার রায়হান বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত আলু মজুত আছে। সবজির দাম বাড়ার সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও কোল্ড স্টোরের মালিক সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়িয়েছে। এখন সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে দাম কমবে।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী তিন মাস পর্যন্ত চলার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে আলু দেশে মজুত রয়েছে। ডিসেম্বরে শুরুতে নতুন আলু বাজারে চলে আসবে। আলুর দাম বাড়ার পেছনে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে।’ 

এদিকে, সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হয়নি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিকল্প বাজার থেকে পেঁয়াজ আনতে খরচ বেশি। এ কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়তি।

কাপ্তান বাজারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নুর হোসেন বলেন, ‘পেঁয়াজ দেশি ৭০ থেকে ৮৫ এবং বিদেশি ৪৫ থেকে ৫৮ টাকা দরে বিক্রি করছি। আমদানি করা পেঁয়াজের মান ভাল না হওয়ায় পেঁয়াজের দাম কমছে না।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, ‘আলু- পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে কি না তা মনিটরিং করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে ঢাকাসহ সারাদেশে আলু, চাল, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের পাইকারি ও খুচরা বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে ১০০টি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ নয় হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত আছে।’

বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, ‘আলু-পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে অভিযান চালানোসহ টিসিবি পণ্য বিক্রি করছে। বাজার কারসাজিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশাকরি শিগগিরিই দাম কমবে।’

কৃষি সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ‘কঠোরভাবে আলুর বাজার মনিটরিং করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোল্ড স্টোরেজে অভিযান পরিচালনা করে আলু বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি হবে।’

ঢাকা/আসাদ/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়