ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

দেশের প্রথম ডিপ অ‌্যান্ড গ্রিন পোর্ট হবে মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ৬ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১২:৫৫, ৬ ডিসেম্বর ২০২০

দেশের প্রথম ডিপ অ‌্যান্ড গ্রিন সি পোর্ট হতে যাচ্ছে কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর।

এই বন্দরটি অপারেশনে গেলে দেশের অর্থনীতি বৃহদাকারে সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বিষয়টি জানিয়েছেন।

জাফর আলম জানান, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরত্বে মহেশখালীর মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে নতুন সমুদ্রবন্দর। বর্তমানে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। কিন্তু এই বন্দরে ৯ মিটার গভীরতার চেয়ে বেশি গভীরতার বড় জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারে না। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় বন্দর হিসেবে নির্মিতব্য মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরে সর্বোচ্চ ১৮ মিটার ডেপথ এর বড় জাহাজও ভিড়তে পারবে।

নতুন এই বন্দর নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। আগামী ২০২৬ সালেই দেশের বৃহৎ এই গভীর সমুদ্রবন্দরটি অপারেশনে যাবে বলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করছে। কার্গো এবং কন্টেইনারবাহী জাহাজের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকবে বন্দরে। সর্বোচ্চ ৮ হাজার ২০০ টিইইউ’স কনটেইনার নিয়ে সরাসরি বন্দর জেটিতে জাহাজ ভিড়তে পারবে।

বন্দর সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রীর রোল মডেল অনুসরণ করে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হতে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৮ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা থাকবে এই বন্দরে। যা দেশের অর্থনৈতিক সম্ভবনাকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করবে।

বন্দর সদস্য জাফর আলম আরও জানান, মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণে ২৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে জাপানের নিপ্পন কোয়ে নামক একটি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সাক্ষরিত হয়েছে চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর। গত ১৬ নভেম্বর থেকে তারা আনুষ্ঠানিকভবে কাজ শুরু করেছে। ডিজাইন, সুপারভিশন, মনিটরিং, টেন্ডারে সহায়তা এবং পরবর্তী ওয়ারেন্টি পিরিয়ড মিলিয়ে ২০২৬ সালে বন্দর অপারেশনে যাওয়া পর্যন্ত এই কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানটি কাজ করবে। এর মধ্যে জাপানের অর্থায়নে বন্দরের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সম্পন্ন হয়েছে।

বন্দরের অবকাঠামোর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ২৬ কিলোমিটার সড়ক। সড়ক ব্যতীত মূল বন্দর নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। বাকি অর্থ পাওয়া যাবে শূন‌্য দশমিক এক শতাংশ সুদে জাপানের ঋণ সহায়তা থেকে। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের অধীনেই মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে দেশের অর্থনীতির ইতিবাচক অগ্রগতির সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজ-উল হক শাহ জানান, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য যেভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে তাতে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ছে। আগামীতে আমাদের দেশের আমদানি-রপ্তানিসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক কার্যক্রম আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এতে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ কার্যক্রম প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম জানান, বর্তমানে এই বন্দরের নকশা প্রণয়ন ও পরিকল্পনার কাজ চলছে। এই প্রকল্পে বর্তমানে ৩০ জাপানি বিশেষজ্ঞ, ১৮ বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ কাজ করছেন। তাদের সহকারী হিসেবে রয়েছেন আরও ২১ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। দুই ধাপে এই প্রকল্পটি কাজ সম্পন্ন হবে। ২০২৬ সালে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার সময়কাল ধরা হলেও ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়েও এই বন্দর পুরোপুরি নির্মাণ সম্পন্ন হবে বলে বন্দর চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন।

চট্টগ্রাম/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়