ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শীতে কালাই রুটির ব‌্যবসা জমজমাট

মহাসিন আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ৩ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০৯:৫৮, ৩ জানুয়ারি ২০২১
শীতে কালাই রুটির ব‌্যবসা জমজমাট

কালাই রুটি তৈরি ও বিক্রিতে ব্যস্ত আলমগীর হোসেন

মেহেরপুর শহরের হঠাৎপড়ার কেরামত আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেহেরপুর পৌরসভার সামনে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রবেশ দ্বারের পাশে কালাই রুটি বানিয়ে বিক্রি করেন তিনি।

তার কালাই রুটির দোকানের পাশে বসে রুটি খেতে দেখা যায় ছেলে-বুড়োসহ সব বয়সের মানুষকে। বিভিন্ন অফিস ও ক্লাবের পিয়নকে দেখা যায় দাঁড়িয়ে থেকে কালাই-রুটি কিনতে।

শুধু আলমগীর হোসেনের দোকান না, মেহেরপুরে তার মতো আরও অনেকেই কালাই রুটি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এদের মধ‌্যে অনেকেই আবার মৌসুমি বিক্রেতা।

তবে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মেহেরপুরে কলাইয়ের রুটির চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেহেরপুর শহরের শিল্পকলার মোড়, পৌরসভার সামনে ও হাসপাতাল এলাকায় বিক্রি হচ্ছে কলাইয়ের রুটি। কেউ দোকানের পাশের জায়গায় বসে খেয়ে গরম গরম রুটি খান। আবার কেউ কেউ পরিজন নিয়ে খাওয়ার জন‌্য রুটি বাড়ি নিয়ে যান।আবার কেউ অফিস কিংবা ক্লাবে। আবার না পেয়ে অনেকেই ফিরে যান। 

 কালাই রুটি তৈরি করছেন মর্জিনা খাতুন

শহরের বোসপাড়া এলাকার আব্দুর রাজ্জাক জানান, কনকনে শীতে কালাই রুটি খেতে খুবই ভাল লাগে। বেগুন ভর্তা, কাঁচা মরিচ ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা কিংবা ছোট মাছের শুটকি ভর্তা দিয়ে কলাই রুটি খেতে খুবই মজা। মাঝে মাঝে আলমগীর হোসেনের দোকানের পাশে বসে গরম গরম এ রুটি খান তি। আবার মাঝে মাঝে বাড়িতে নিয়ে সবাই মিলে খান।

অফিস পিয়ন তুহিন বলেন, ‘মাঝে মাঝে সন্ধ্যার পরে অফিসের স্যারদের জন্য পৌরসভার সামনের দোকানগুলোতে কলাই-রুটি কিনতে যাই। বিক্রেতারা একসঙ্গে ১৫-২০টি কলাই রুটি দিতে চায় না। দোকানের পাশে বসে থেকে খাওয়া লোকগুলোকে খাওয়ায়ে উঠতে পারে না তাই অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ওই রুটি পাওয়া যায়।’

একই রকম ভিড় লেগে থাকে পৌরসভার সামনের কালাই রুটি বিক্রেতা জিয়ার দোকান ও মর্জিনা খাতুনের দোকানেও।
শহরের মল্লিকপাড়ার কালাই-রুটি বিক্রেতা মর্জিনা খাতুন জানান, তিনি শীতের শুরু থেকে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মল্লিকপাড়ার নিজের একটি দোকানে কলা-রুটি বানিয়ে বিক্রি করেন। সেখানে কম-বেশি বেচা-কেনা হয়। তারপরও এ শীতে এ পিঠার ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধিতে তিনি পৌরসভার সামনের এলাকায় বসেন এবং এ রুটি বানিয়ে বিক্রি করছেন। তিনি জানান, এতে তার ভাল লাভ হচ্ছে।

আলমগীর হোসেন জানান, তার বয়স প্রায় ৩২ বছর। এ বয়সে এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে তার। সংসার চালাতে হয় মা-বাবা ও শাশুড়িসহ ৮ জন লোকের। ২০২০ সালে বড় মেয়ে আয়েশা ৮ম, ছোট মেয়ে মেঘলা ৪র্থ ও একমাত্র ছেলে সোহাগ প্রথম শ্রেণিতে পড়তো। ২০২১ সালে তারা পরবর্তী শ্রেণিতে উঠবে। তিনি বিগত ৪ বছর ধরে কলাই রুটি বানিয়ে বিক্রি করেন। কালাই-রুটির ব্যবসা তিনি শীতের ৩-৪ মাস করে থাকেন। এতে তার পুঁজি মাত্র দুই হাজার টাকা। অল্প সময়ের এ রুটি ব্যবসায় প্রতি রাত্রে তিনি এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয়। জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘গ্রীষ্মের সময় তিনি দিনের বেলায় একই স্থানে বসে লেবু-চিনির ঠাণ্ডা শরবত বানিয়ে বিক্রি করেন।’

মেহেরপুরের উপশহর যাদবপুরের রামিজ আহসান বলেন, ‘শীত আসলে কালাই-রুটি খাওয়া হয়। কিন্তু একেবারে রাস্তার ওপরে এ রুটি তৈরি এবং রাস্তার পাশে বসে খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। গাড়ি-ঘোড়ার চলাচলে সর্বদা ধুলা-ময়লা ওড়ছে। এরমধ্যে কলাই-রুটি তৈরি ও খোলা জায়গায় বসে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’

মেহেরপুর/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়