ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শিয়ালের সঙ্গে বন্ধুত্ব

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০১, ২২ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১০:১৩, ২২ জানুয়ারি ২০২১
শিয়ালের সঙ্গে বন্ধুত্ব

কুষ্টিয়া শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ড। রাত বাড়তে থাকলেই নির্জন এলাকায় যেন ব্যস্ততা বেড়ে যায় বন্য প্রাণী শিয়ালদের। ঝোঁপ ঝাড় থেকে শিয়াল বেরিয়ে আসে লোকালয়ে।

ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দিন মিলনের থানাপাড়ার বাড়ির পাশে ১৫ থেকে ২৫টি শিয়াল জড়ো হয়। অপেক্ষা তাদের মনিবের। রাতে ব্যস্ত শহরের সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়েন তখন দোকান থেকে খাবার কিনে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ান মিলন।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেরু, ভলবো, রাহাজানি, রঙ্গিলা, কাঞ্চি, জেরিসাসহ নানান নামে ডাক দিতেই লাইনধরে জঙ্গলের ঝোঁপ থেকে বেরিয়ে আসে শিয়ালের দল।

সেরু আর রাহাজানির দলকে দুই ভাগে ভাগ করে রাত ৩টা পর্যন্ত মিলন তাদেরকে খাবার খাওয়ান। বন্য শেয়াল আর মানুষের এই ভালোবাসার মিতালী দেখতে তাইতো প্রতিদিন রাতে ভিড় জমে কুষ্টিয়া শহরের পলান বক্স লেনে মিলনের বাড়িতে। বিগত ২০ বছর ধরে প্রতিরাতেই এভাবে তার ডাকে সাড়া দিয়ে অগণিত শেয়াল তার কুষ্টিয়া শহরের বাড়ির সামনে ভিড় করে থাকে।

শাহাবুদ্দিন মিলন বলেন, ‘২০ বছর ধরে তার শিয়ালের সঙ্গে তার গভীর সখ্যতা। প্রতিদিন প্রায় অর্ধশত শিয়ালের সঙ্গে তার এমন মিতালী। রাত যত গভীর হয় শিয়ালের দল ঠিকই চলে আসে তার বাড়ির সামনে। আবার যেদিন আশেপাশে তাদের দেখা মেলে না সেদিন নাম ধরে ডাকলেই শিয়ালের দল ছুটে আসে বাড়ির সামনে।’

শাহাবুদ্দিনের মতে শিয়াল হিংস্র হলেও তার কাছে শেয়ালের হিংস্র আচরণ কখনই চোখে পড়েনি।  ভালোবাসায় সব হিংস্রতা জয় করা সম্ভব বলে মনে করেন এই পশুপ্রেমি।

শাহাবুদ্দিন আরও বলেন, ‘কোনো প্রাণীই হিংস্র নয়। সাপ, বেজি, ইঁদুরসহ সব প্রাণীর সঙ্গেই সখ্যতা করেছি। তাদের কাছে যেতে পারলে, মন বুঝতে পারলে, সবাইকে আপন করে নেওয়া যায়।’

যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন অটুট থাকবে তাদের প্রতি এই ভালোবাসা বলে জানান শাহাবুদ্দিন।

শাহাবুদ্দিনের স্ত্রী লাভলী ইয়াসমিন বলেন, ‘এক সময় আমার স্বামীর এমন শিয়াল প্রীতি দেখে খুবই বিরক্ত হতাম। নোংরা প্রাণী বলে রাগ হতো। অবশ্য এখন বেশ ভালো লাগে। শিয়ালদের জন্য আমারও মহব্বতও হয়ে গেছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা খোকন বলেন, ‘এখানে অনেক শিয়াল, মেছোবাঘ, কুকুর রয়েছে। রাত বাড়লেই এরা খাবারের জন্য এদিকে ও ওদিকে ছুটে বেড়ায়। তখন এদের যে খাবার দেয়, তার কথাই এরা শুনে।’

পাখি ও বন্য প্রাণী পর্যবেক্ষক উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন ভাই যে শিয়ালের সঙ্গে সখ্য গড়েছেন, সেটা দেখে আমি সত্যিই অভিভূত। শিয়াল খুবই ধূর্ত। তবে মানুষ যদি তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করে, তবে তারাও তার সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করে থাকে।’

কুষ্টিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর খন্দকার মাজেদুল হক ধীমান বলেন, ‘বন্য প্রাণীর সঙ্গে মিলন যে গভীর সখ্যতা গড়ে তুলেছেন এক কথায় বলতে গেলে অনবদ্য। শাহাবুদ্দিন সত্যিই পশুপাখি প্রেমী। আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেকেই না বুঝেই বন্যপ্রাণীদের অত্যাচার করে। তাদেরকে আমি সতর্ক করে দিয়েছি। এছাড়াও, প্রাণীদের হত্যা বা নির্যাতন করলে বন্যপ্রাণী আইনের সাজা হতে পারে বলেও সবাইকে সর্তক করা হচ্ছে।’

কুষ্টিয়া/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়