ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বিজয়ের গৌরব, বর্তমানের সংকট ও আগামীর বাংলাদেশ

যবিপ্রবি প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৭, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ২১:২৫, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
বিজয়ের গৌরব, বর্তমানের সংকট ও আগামীর বাংলাদেশ

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য ও গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনীর ৯১ হাজার ৬৩৪ জন সৈন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা ও পাকিস্তানি বাহিনীর প্রধান জেনারেল এ.এ.কে. নিয়াজীর স্বাক্ষরিত আত্মসমর্পণ দলিলের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।

পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বরকে জাতীয় বিজয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রতিবছর এই দিনটিকে ঘিরে সারাদেশে নানা আয়োজন হয়। র‌্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা, চলচ্চিত্র ও কুচকাওয়াজের মাধ্যমে উদযাপিত হয় স্বাধীনতার চেতনা। ২০১৩ সালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বিশ্বের বৃহত্তম মানব পতাকার রেকর্ড স্থাপন এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন বিজয় দিবসের ইতিহাসে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আরো পড়ুন:

শৈশবে বিজয় দিবস ছিল আমার কাছে এক নির্মল আনন্দের উৎসব। হাতে ছোট পতাকা, স্কুলের দেশাত্মবোধক গান, বন্ধুদের সঙ্গে র‌্যালি; সবকিছু মিলিয়ে দিনটি ছিল রঙিন ও আনন্দময়। তখন স্বাধীনতার গভীর অর্থ বোঝার বয়স হয়নি। জানতাম শুধু, বিজয় মানেই আনন্দ।

কিন্তু, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই অনুভূতির রং বদলেছে। ইতিহাস জানা, অভিজ্ঞতা অর্জন এবং বাস্তবতা বোঝার মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর এখন আমার কাছে এক গভীর বেদনাময় গৌরবের দিন। এই বিজয়ের পেছনে লুকিয়ে আছে অসংখ্য শহীদের নামহীন রক্ত, অগণিত মায়ের কান্না আর নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাঙা শরীর, কাঁপা কণ্ঠ আর চোখের জল আমাকে বারবার নতুন করে ভাবতে শেখায় স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য।

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিজয় দিবস উদযাপন করতে গিয়ে মনে হয়, আমি যেন ইতিহাসের ভেতর দিয়ে হাঁটছি। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মুহূর্তে বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শক্তি ও গর্বের অনুভূতি জন্ম নেয়। শহীদদের স্মরণে ফুল দেওয়া, র‌্যালিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটা, সবকিছু মিলিয়ে দিনটি হয়ে ওঠে বিশেষ।
আমাদের গ্রামের এক দুঃসম্পর্কের দাদা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও তার চোখে এখনও দৃঢ়তা। তাঁকে দেখলেই বুঝি স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য কাগজে নয়, মানুষেই লেখা থাকে।

আজকের বাংলাদেশকে ভাবলে এক দ্বৈত বাস্তবতা চোখে পড়ে। একদিকে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সম্ভাবনা; অন্যদিকে দুর্নীতি, সহিংসতা, গণতন্ত্রের সংকট ও ন্যায়বিচারের অভাব। যে দেশের স্বপ্ন বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেখেছিলেন—একটি সুখী, ন্যায়ভিত্তিক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র—তা আজ অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক সহনশীলতা ও সুশাসনের ঘাটতি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে।
তবুও বাংলাদেশকে নিয়ে গর্ব করার মতো অর্জন কম নয়। স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপরিচয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, পোশাকশিল্পের বৈশ্বিক অবস্থান, রেমিট্যান্স, অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রযুক্তি ও শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি—সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।

একজন তরুণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, দেশপ্রেম শুধু আবেগ নয়; এটি দায়িত্ব। সততা, নৈতিকতা, মানবিকতা ও দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠাই দেশের প্রতি সবচেয়ে বড় অবদান। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা, আইন মেনে চলা এবং মানুষের পাশে দাঁড়ানোই স্বাধীনতার চেতনার বাস্তব রূপ।

আমি স্বপ্ন দেখি এমন এক বাংলাদেশের; যেখানে মানুষ মানুষ হিসেবে মূল্যায়িত হবে, তরুণরা যোগ্যতার ভিত্তিতে সুযোগ পাবে, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত থাকবে এবং স্বাধীনতার চেতনা শুধু বইয়ে নয়, মানুষের জীবনে প্রতিফলিত হবে।

সবশেষে বলতে চাই, স্বাধীনতা আমার কাছে শুধু একটি রাজনৈতিক শব্দ নয়। এটি আমার পরিচয়, আমার শ্বাস-প্রশ্বাস, আমার অস্তিত্ব। এই স্বাধীনতা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব; আজ, আগামীকাল এবং ভবিষ্যতের প্রতিটি দিনে।

 ঢাকা/ইমদাদুল/জান্নাত

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়