ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গ্রাহকের টাকা উত্তোলন: অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তার নামে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ২৭ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ০০:১৮, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
গ্রাহকের টাকা উত্তোলন: অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তার নামে মামলা

ফাইল ছবি

গ্রাহকের হিসাব থেকে ছয় লাখ টাকা তুলে নেওয়ায় অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের এক কর্মকর্তার নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি দায়ের করা হয়। এই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আল-আমিন মামলাটির বাদী।

মামলার আসামির নাম আহসান হাবীব নয়ন। তিনি অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহীর গোদাগাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন। সাবের আলী নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর ছয় লাখ টাকা ব্যাংক থেকে কৌশলে তুলে নেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এই মামলা করা হয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী শাখা এবং অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের তদন্তে বিষয়টি ইতোমধ্যেই উঠে এসেছে।

দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগের অনুসন্ধান তারাও করেছেন। অভিযোগ সঠিক হওয়ায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলার বিবরণীতে বলা হয়, সাবের আলী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সাবের আলী ট্রেডার্স’ এর অগ্রণী ব্যাংকে অনুকূলে একটি ১০ লাখ টাকার এসএমই সিসি (হাইফো) ঋণ সুবিধা ভোগ করছেন। তার হিসাব নম্বর-০২০০০০৯৫৭৭৫৯৪। 

সাবের আলী ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট নিজে ব্যাংকে গিয়ে ১০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়ে টাকা তোলেন। সেদিন তিনি তার ব্যাংক হিসাবের স্থিতি জানতে চান। ব্যাংক থেকে তার ঋণ হিসাবের স্থিতি জানানো হয়। তখন তিনি ছয় লাখ টাকার গড়মিল দেখতে পান। এরপর তিনি ব্যাংকের ঋণ হিসাব বিবরণী যাচাই করে দেখেন, ২০১৯ সালের ১৬ জুন তার ৪৩০৮১৭২ নম্বরের একটি চেকের মাধ্যমে ছয় লাখ টাকা তোলা হয়েছে।

দুদক অনুসন্ধান করে দেখেছে, ছয় লাখ টাকা উত্তোলনের এক সপ্তাহ আগে তৎকালীন ব্যবস্থাপক আহসান হাবীব নয়ন গ্রাহক সাবের আলীকে অবহিত করেন যে, তার ঋণ হিসাবটি শূন্য করার জন্য একটি ফাঁকা চেক প্রয়োজন। 

এজন্য আহসান হাবীব নয়ন ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী আফজাল হোসেনকে ১৬ জুন সাবের আলীর বাড়িতে পাঠান। সরল বিশ্বাসে ওই চেকটি দিয়েছিলেন। নিরাপত্তা প্রহরী চেকটি এনে শাখা ব্যবস্থাপক নয়নকে দেন।

এরপর নয়ন চেকে নিজ হাতে ছয় লাখ টাকার পরিমাণ লেখেন। ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আবু বকর সিদ্দিক চেকের প্রথম ক্যানসেলেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকলেও তাকে এড়িয়ে নয়ন নিজেই চেক ক্যানসেলেশন করে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কাউন্টারে গিয়ে ক্যাশ কর্মকর্তা আকতারুজ্জামানকে চেকটি দিয়ে টাকা তার কক্ষে আনতে বলেন। আকতারুজ্জামান চেকটি সিডি ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিকের হাতে দেন। এসময় আবু বকর সিদ্দিক চেকটি কম্পিউটারে পোস্টিং করে ক্যানসেলেশন করে পুনরায় আকতারুজ্জামানকে দেন। এরপর আকতারুজ্জামান চেকটি ক্যাশ করে ছয় লাখ টাকা ব্যাংকের তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক নয়নের কক্ষে গিয়ে তাকে বুঝিয়ে দেন।

এভাবে নয়ন গ্রাহকের টাকা আত্মসাত করেন। পরবর্তীতে অগ্রণী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে তার অপরাধ প্রমাণিত হলে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি তিনটি জমা ভাউচারে সাবের আলীর হিসাবে ছয় লাখ টাকা ফেরত দেন। 

ভাউচারগুলো হলো- ০৯৩৬৫১৪, ০৯৩৬৫১৫ ও ০৯৩৬৫১৬। এই টাকা ফেরত দিয়ে তিনি নিজেই তার অপরাধকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলে দুদক মনে করে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে এই নিয়মিত মামলা করা হলো।

জানা গেছে, আসামি আহসান হাবীব নয়ন রাজশাহী মহানগরীর বহরমপুর ব্যাংক কলোনীর বাসিন্দা। তার বাবার নাম হারেজ উদ্দিন। গ্রাহকের টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা প্রমাণিত হলেও তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। তবে বিষয়টি জানাজানির পর তাকে গোদাগাড়ী শাখা থেকে বদলি করা হয়। বর্তমানে রাজশাহীতেই তিনি অগ্রণী ব্যাংকের ডিজিএমের কার্যালয়ে প্রিন্সিপ্যাল অফিসার পদে কর্মরত আছেন। শাখা ব্যবস্থাপক থাকার সময়ও তিনি এই পদে ছিলেন।

তানজিমুল হক/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়