হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে করোনা রোগী নেই, তবে...
মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
হবিগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালের ২৫০ শয্যার মধ্যে ১০০ শয্যাই বরাদ্দ করোনা রোগীদের জন্য। কিন্তু হবিগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি তুলনামূলক ভালো থাকায় হাসপাতালে নেই করোনা রোগী। অন্যদিকে, প্রতিদিন অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ এ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। অবশিষ্ট ১৫০ শয্যা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। এছাড়া, হাসপাতাল থেকে সরকারি ওষুধ পাচ্ছেনা না রোগীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন অসচ্ছল মানুষজন।
২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত হবিগঞ্জে ১ হাজার ৯৭৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬০৬ জন। করোনায় মারা গেছেন ১৬ জন। বর্তমানে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ জন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
আট তলা বিশিষ্ট হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় হয় করোনা রোগীদের চিকিৎসা। বর্তমানে এখানে রোগী ভর্তি নেই। হবিগঞ্জে যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তারা বাড়িতেই চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুখলিছুর রহমান উজ্জ্বল বলেন, ‘সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগী নেই। তবে পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এ ওয়ার্ড চালু রাখতে হবে। বাকি ১৫০ ওয়ার্ডে অন্যান্য রোগীর চিকিৎসা চলছে।’
হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য বরাদ্দ করা সরকারি ওষুধ গরিব রোগীরা পাচ্ছেন না। সেই সঙ্গে অস্ত্রোপচার ও ড্রেসিং করাতেও বকশিসের নামে উৎকোচ দিতে হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে রোগীদের ঠিকভাবে সেবা দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেকের।
অভিযোগ উঠেছে, সরবরাহ না থাকার অজুহাত তুলে ফায়দা লুটছে একটি সিন্ডিকেট। তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে এলেও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত ওষুধ ও সরঞ্জাম মজুদ থাকার কথা বলা হলেও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা তা অস্বীকার করছেন।
সূত্র জানায়, গাইনি ওয়ার্ডে নরমাল ডেলিভারি হলে নেওয়া হয় ২ হাজার থেকে থেকে ৫ হাজার টাকা। সে টাকা নার্স এবং আয়ারা নেন বকশিস হিসেবে। এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও কর্তৃপক্ষ নীরব।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, শিশু ওয়ার্ড ও ওটি রুমে গিয়ে দেখা যায়, জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক রোগী এসেছেন। অবস্থা দেখে ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দিচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ওষুধসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। হাসপাতাল থেকে এসব জিনিসপত্র দেওয়ার কথা থাকলেও সরবরাহ নেই বলে অজুহাত দেখান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রায় সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষদের। অপারেশন থিয়েটারে সব ধরনের অস্ত্রোপচারের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ব্যান্ডেজ, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, স্পিরিট, ব্যথানাশক ইনজেকশন বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয় রোগীদের। ড্রেসিং করিয়ে নিতে নার্সদের উৎকোচ দিতে হয়। বকশিস দিলে দ্রুত ড্রেসিং করা হয়।
সুজন মিয়া নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার ভাইকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছি। মাথা ফেটে গেছে তার। ইনজেকশন, সুতাসহ অন্যান্য মেডিসিন হাসপাতালের বাইরে কিনতে হয়েছে আমাকে। হাসপাতাল থেকে দেওয়ার কথা বললে ব্রাদার জানান, হাসপাতালে সাপ্লাই কম।’
শিশু ওয়ার্ডে রোগী নিয়ে বিড়ম্বনায় শিকার হওয়া নাসিমা আক্তার বলেন, ‘এখানে এলে ভালো মানুষ রোগী হবে। আর রোগী হবে গুরুতর রোগী।’
হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীমা আক্তার বলেন, ‘হাসপাতালে সব ধরনের ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুদ আছে। রোগীরা যাতে সেবা থেকে বঞ্চিত না হন, সেজন্য কর্তৃপক্ষ খুবই আন্তরিক।’
মামুন/রফিক
আরো পড়ুন