ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ভুট্টার আবাদে হাসছে হাওর দিগন্ত

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৫:৪৯, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
ভুট্টার আবাদে হাসছে হাওর দিগন্ত

এখন হাওরে গেলেই চোখে পড়ে মাঠের পর মাঠ ভুট্টার আবাদ। বাতাসে ভুট্টার সবুজ গাছের দোল দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। যেন হেসে হেসে দুলছে কৃষকের একরাশ স্বপ্ন। অপেক্ষা শুধু ফসল ঘরে তোলার।

ভুট্টা চাষ করে লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই। ভুট্টা চাষে খরচ কম, পরিচর্যাও তেমন লাগে না, কিন্তু লাভ প্রায় তিনগুণ। এজন্য কিশোরগঞ্জের হাওরে ভুট্টা চাষে কৃষকদের উৎসাহ বাড়ছে। ফসল সংগ্রহ শেষে গাছগুলো লাকড়ি জ্বালানি হিসেবেও ব‌্যবহার করা হয়।  

অন‌্যদিকে, বোরো মৌসুমে ধান আবাদে খরচ এবং ঝুঁকি দু’টোই বেশি।   

গত বছরের তুলনায় এবার হাওরাঞ্চলসহ পুরো জেলায়ই ভুট্টার আবাদ বেড়েছে। কিশোরগঞ্জের কৃষকরা এখন ভুট্টা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গতবার ভুট্টা চাষে লাভের মুখ দেখায় এবার তাঁরা ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষ শুরু করেছেন। 

প্রতিবছরই অকাল বন‌্যায় হাওরাঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। মহাজনের পাওনা পরিশোধে কৃষক হয়ে পড়েন দিশেহারা। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে পাল্টে যাচ্ছে কৃষকের জীবন-জীবিকা ও চাষাবাদের ধরন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণের তথ‌্য মতে, গত বছর পুরো জেলায় ৬ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। কিন্তু এ বছর নির্ধারিত ৭ হাজার ৪৬৫ হেক্টর লক্ষ‌্যমাত্রাও অতিক্রম করেছে। ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছেই মোচা ধরতে শুরু ধরেছে। ভুট্টা চাষে দরিদ্র কৃষকেরা আর্থিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অফিস।

ভুট্টা চাষে সফল কৃষকদের হিসেব মতে, এক একর জমিতে ভুট্টার চাষ করতে প্রায় ছয় হাজার টাকার বীজ লাগে। জমি চাষ, সেচ ও সার-কীটনাশক বাবদ খরচ হয় আরও ১৮ হাজার টাকা। খেতের আগাছা পরিষ্কার, জমি কোপানো, সার-ওষুধ দেওয়া, ভুট্টা কাটা, বাড়িতে নিয়ে আসা, মাড়াই ও বিক্রি উপযোগী করার শ্রমিক বাবদ খরচ হয় প্রায় নয় হাজার টাকা। সব মিলিয়ে এক একর জমিতে ভুট্টার চাষে খরচ প্রায় ৩৩ হাজার টাকা। ভুট্টা পাওয়া যায় ৯০ থেকে ৯৫ মন। গত বছর ভুট্টা বিক্রি হয়েছিল গড় ৭০০ টাকা মণ দরে। সেই হিসাবে এক একর জমির ভুট্টায় পাওয়া যাচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি একরে লাভ ২৭ থেকে ৩২ হাজার টাকা।

মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের কৃষক নিখিল দেব, সোহাগ, মুস্তাকিম ও জহির উদ্দিন এরা জানালেন, ভুট্টা চার মাসের ফসল।  ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ভুট্টার বীজ বপন করতে হয়। মার্চ-এপ্রিল মাসের মধ্যেই ফসল ঘরে চলে আসে। এখন ভুট্টা গাছে মোচা ধরতে শুরু করেছে। অল্প সময়ে অধিক ফলন আর লাভজনক হওয়ায় প্রায় তিন বছর ধরে তারা ভুট্টা চাষ করছেন।

মিঠামইন উপজেলার একই ইউনিয়নের প্রাইমারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কাদির ভূইয়া চাকরি জীবন শেষ করে নিজের ১০ একর জমিতে শুরু করেছেন ভুট্টা চাষ। তিনি বলেন, অন্যান্যবার ভুট্টার মণ থাকে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এবার বাজারের উপর নির্ভর করবে তাদের লাভের পরিমাণটা কেমন হবে। তারপরও অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে লাভ বেশি। ফলে ধীরে ধীরে এলাকার সব কৃষকই ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ‌্যান) কৃষিবিদ মুহাম্মদ মতিয়ার রহমান জানান, কয়েক বছর আগেও মাত্র ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ ছিল। অথচ এ বছর প্রায় সাড়ে সাত হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। তাতেই বুঝা যায় ভুট্টা চাষে কৃষকের আর্থিক সচ্ছলতা আসছে। 

কিশোরগঞ্জ/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়