ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

টিসিবি পণ্য বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ, দুর্ভোগে গ্রাহক

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১০, ২৪ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১২:১৩, ২৪ মার্চ ২০২১
টিসিবি পণ্য বিক্রিতে অনিয়মের অভিযোগ, দুর্ভোগে গ্রাহক

টিসিবি’র পণ‌্য কিনতে নগরীতে দীর্ঘ লাইন

মহামারি করোনার সংক্রমণের পর থেকে সম্প্রতি খুলনায় চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

তাই প্রতিনিয়ত টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য দীর্ঘ লাইনে বাড়ছে দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের ভিড়। প্রতিদিন ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়াতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হচ্ছে গ্রাহকদের।

এদিকে, অভিযোগ উঠেছে, ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইনের ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো আইন শৃঙ্খলার সদস্য থাকে না। ফলে অনেকেই একাধিকবার পণ্য ক্রয় করছে এবং সে সকল পণ্য বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে। যে কারণে সাধারণ ক্রেতাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

খুলনার নতুন বাজার সড়কে ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়েছিলেন ৬৫ বছর বয়সি বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম। সোমবার টিসিবির পণ্য ক্রয়ের জন্য সিরিয়াল দিলেও পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় খালি হাতেই বাড়িতে ফিরতে হয় তাকে। সেজন্য মঙ্গলবার সকাল-সকাল এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। শুধু রোকেয়া বেগমই নন, টিসিবির তেল, ডাল, চিনি কেনার জন্য ব্যাগ হাতে এমনভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকেই।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে খুলনার শিববাড়ী মোড়, খালিশপুর লাল হাসপাতাল, সাত রাস্তার মোড়, নতুন বাজার, ক্রিসেন্ট জুটমিল, হাজী মহাসিন রোড, সার্কিট হাউজ রোড, স্টেশন রোড, জেলা পরিষদের সামনের এই ৯টি স্পটে ট্রাকের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চিনি, মুশুরের ডাল, সয়াবিন তেল এবং পেঁয়াজ।

টিসিবির পণ্য বিক্রয়ের কয়েকটি স্পটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করোনার এই সময়েও টিসিবির ট্রাকের পিছনে লাইনে দাঁড়িয়ে কেউই সামাজিক দূরত্ব মানছে না, অধিকাংশই মাস্কও ব্যবহার করেনি। সেই সঙ্গে লম্বা লাইনের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কোনো শৃঙ্খলাকর্মী না থাকায় অনেক নারীকেই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

টিসিবি পণ্যের নতুন বাজার এলাকার ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের ডিলার সৈকত জানান, করোনার পর থেকেই সরকার টিসিবির পণ্য বিতরণ করছে। পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে পহেলা এপ্রিল থেকেই অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে ছোলা ও খেজুর বিক্রয় শুরু হবে।

নতুন বাজার এলাকার টিসিবির ট্রাকের পাশে শিশু কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আসমা বেগম জানান, করোনার আতঙ্কে শিশু বাচ্চাকে কোলে নিয়ে গাদাগাদি করে লাইনে দাঁড়াতে পারছেন না তিনি। তিনি অভিযোগ করেন, ক্রেতাদের দীর্ঘ লাইনের ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো আইন শৃঙ্খলার সদস্য না থাকায় অনেকেই একাধিকবার পণ্য ক্রয় করছে এবং সে সকল পণ্য বেশি দামে বাজারে বিক্রয় করছে।

টিসিবির বিক্রয়ের স্পটগুলোতে করোনাকালীন সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থবিধির বিষয়টি জানতে খুলনা টিসিবির উপ-ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমানের জানান, একাধিকবার ডিলারদের করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে ও মাস্ক পরার বিষয়টি সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে তিন ফুট দূরে দূরে সাইকেলের টায়ার বা লাল দাগে দিয়ে স্থান চিহ্নিত করে দেওয়ার বিষয়েও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সকলকে। তবে যদি কেউ স্বাস্থ্যবিধি না মানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নতুন বাজারের কয়েকটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, মেসার্স মাহবুব স্টোরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে টিসিবির নামাঙ্কিত সয়াবিন তেলের বোতল, যার প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা দরে। এছাড়াও দেখা যায় ওই বাজারের ৮৪ নম্বর দোকানের মালিক কয়েকজন পুরুষ ও নারীর কাছ থেকে টিসিবির ট্রাক থেকে ক্রয় করা তেল, চিনি ও মশুরের ডাল নিজ দোকানে বিক্রির উদ্দেশ্যে ক্রয় করছেন।

টিসিবির পণ্য খোলা বাজারে বেশি দামে বিক্রি করার বিষয়টি জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ পরিচালক মো. ইব্রাহীম হোসেন জানান, টিসিবির পণ্য বাইরের বাজারে বিক্রয় করা অবৈধ। এ সকল কাজের সঙ্গে যে ব্যবসায়ী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যুক্ত আছে টিসিবির সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর ভ্রাম্যমাণ ট্রাকসেল কার্যক্রমে চিনি প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মশুরির ডাল প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৯০ টাকা ও পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়