ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

খুন হওয়া কালচারাল কর্মকর্তার সন্তানের দায়িত্ব বিষয়ক কমিটি গঠন

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৪, ১ এপ্রিল ২০২১  
খুন হওয়া কালচারাল কর্মকর্তার সন্তানের দায়িত্ব বিষয়ক কমিটি গঠন

১১ দিন আগে টাঙ্গাইলে মির্জাপুরে হাসপাতালের ভিতর খুন হওয়া জেলা কালচারাল কর্মকর্তা রেদোয়ানার শিশু সন্তানের দায়িত্ব দিতে কমিটি গঠন করেছে জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড। 

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) দুপুর পর্যন্ত শিশুটি মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালের শিশু বিভাগের এনআইসিইউর নার্সদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। শিশুটি সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনির সভাপতিত্বে শিশু হস্তান্তরে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

এতে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খানকে আহ্বায়ক এবং জেলা সমাজ সেবার উপপরিচালক মো. শাহআলমকে সদস্য সচিব ও সরকারী কৌঁশুলি (পিপি) অ‌্যাডভোকেট এস আকবর আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিনকে সদস্য করে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এছাড়াও জেলায় আরও পাঁচটি অজ্ঞাতনামা শিশু পাওয়া গেছে। তাদেরকে সরকারি শিশু পরিবারে রাখা হয়েছে। তাদের বাবা-মায়ের নামের জায়গায় অজ্ঞাত রেখে জন্ম নিবন্ধন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া দুটি শিশুকে উপযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে লালন পালনের জন্য প্রদান করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ২২ মার্চ জেলা কালচারাল কর্মকর্তা রেদোয়ানা ইসলাম কুমুদিনী হাসপাতালে কন্যা সন্তান প্রসব করেন। এর পাঁচ দিন পর শনিবার (২৭ মার্চ) বিকেলে তার স্বামী দেলোয়ার হোসেন মিজান হাসপাতালে তাকে দেখতে যান। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা রেদোয়ানার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

এদিকে লাশ উদ্ধারের আগে থেকে তার স্বামী দেলোয়ার হোসেন মিজান পলাতক ছিলেন। রেদোয়ানার পরিবারের অভিযোগ, তার স্বামী তাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেছে। 

পরদিন রোববার (২৮ মার্চ) ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রোববার বিকেলে রেদওয়ানার ভাই খন্দকার আসাদুল আবিদ বাদি হয়ে স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন মিজানকে আসামি করে মির্জাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

খন্দকার আসাদুল আবিদ ব‌লেন, ‘‘বিয়ের পর থেকেই তার বোনের উপর অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন করে আসছিল মিজান ও তার পরিবার। নিজের পরিবার ও সংসারের দিকে চেয়ে আমার বোন সব অন্যায় অত্যাচার সহ্য করে গেছে। দেলোয়ার হোসেন মিজান টাঙ্গাইল থেকে সম্প্রতি ভোলা জেলায় বদলি হয়ে যান। 

‘গত ২২ মার্চ প্রসব ব্যাথা নিয়ে কুমু‌দিনী হাসপাতালে ভর্তি হয় আমার বোন। সেদিনই একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেয় সে। তিন দিন আগে ছুটি হলেও শিশুকন্যা অসুস্থ থাকায় কেবিন ভাড়া নিয়ে হাসপাতা‌লেই থে‌কে যায় আমার বোন। গত শনিবার (২৭ মার্চ) দুপুরে মিজান কুমুদিনী হাসপাতালে স্ত্রী-কন্যাকে দেখতে যান। তাকে ওয়ার্ডে রেখে আমার মামি খোদেজা বেগম শিশু কন্যাকে দুধ খাওয়ানের জন্য তিন তলায় যান। ফিরে এসে দেখেন রুমের দরজায় তালা দেওয়া। ঘটনাটি কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকদের জানালে তারা চাবি এনে দরজা খোলেন। সেসময় আমার বোন ইলুকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। সে আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে খুন ক‌রেছে।’’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাজাহান মিয়া ব‌লেন, ‘মামলার প্রধান আসামি মিজানকে গ্রেপ্তার করতে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অভিযান চালানো হচ্ছে।’

মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালের এজিএম (অপারেশন) অনিশেষ ভৌমিক বলেন, ‘হাসপাতালের শিশু বিভাগের এনআইসিইউতে নার্সদের অধীনে শিশুটি চিকিৎসাধীন রয়েছে। শিশুটি সুস্থ আছে। শিশুটিকে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তরে প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বলেন, ‘জেলা কালচারাল কর্মকর্তা রেদোয়ানা ইসলামের শিশু কন্যাটিকে হস্তান্তরের জন্য জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সভা করা হয়েছে। বোর্ডের পক্ষ থেকে রেদোয়ানার ভাই-বোন বা তার আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তারা যদি শিশুটিকে নিতে আগ্রহী হন তাহলে আইনগতভাবে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। যদি তারা নিতে অস্বীকার করেন- তাহলে আমরা আদালতের অনুমতি নিয়ে যিনি উপযুক্ত হবেন তার কাছে শিশুটি হস্তান্তর করব।’

কাওছার/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়