ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সংঘর্ষের জের: বাগেরহাটে পুরুষ শূন্য শতাধিক পরিবার

বাগেরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৫, ১৭ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৬:৪২, ১৭ এপ্রিল ২০২১
সংঘর্ষের জের: বাগেরহাটে পুরুষ শূন্য শতাধিক পরিবার

হামলা ও গ্রেপ্তার এড়াতে বাগেরহাটের মোল্লাহাটের শাসন গ্রামের শতাধিক পরিবারের পুরুষ সদস্য এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুরুষদের পাশাপাশি জীবন ও সম্মান বাঁচাতে নারী ও শিশুরাও একধরনের পলাতক জীবন-যাপন করছেন। 

পুরুষ শূন্য পরিবারগুলোর মাঠের ফসলও ঘরে তুলতে পারছেন না প্রতিপক্ষের হুমকি-ধামকি ও হামলার ভয়ে। ফসলের পরিচর্যার জন্য শ্রমিকও যেতে পারছে না মাঠে।

গত ১ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) মোল্লাহাট উপজেলার চুনখোলা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী মামুন শেখ ও কিবরিয়া শরীফের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে মামুন শেখের চাচা শাসন গ্রামের আসাদ শেখ নিহতের জেরে মামুন শেখের সমর্থকদের তাণ্ডবে শাসন গ্রামে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। 

ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, আসাদ শেখ নিহতের পরে মামুন শেখের সমর্থকরা এলাকার শতাধিক বাড়িঘর ভাঙচুর করে। মামুনের সমর্থকদের হামলা থেকে বাঁচতে অন্তত শতাধিক লোক এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। 

পরবর্তীতে শনিবার (৩ এপ্রিল) নিহত আসাদ শেখের মেয়ে মমতাজ বেগম বাদী হয়ে ৮৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসাসি করে মোল্লাহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় চুনখোলা ইউনিয়ন পরিষ চেয়ারম্যান মুন্সি তানজিল হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। 

পরবর্তীতে মামলাটি বাগেরহাট জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলায় এজাহার নামীয় আসামি সাবেক ইউপি সদস্য মিকাইল হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও রক্ষায় পায়নি মিকাইল চৌধুরীর বসবাসের ভবনটিও। 

ইউপি সদস্য প্রার্থী মামুন শেখের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক লোক হাতুড়ি দিয়ে মিকাইলের ভবন ভেঙে দিয়েছে। ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে ভবনের ভেতরেও। এছাড়া ফ্রিজ, টেলিভিশন, খাটসহ মূল্যবান সামগ্রী ভাঙচুর করা হয়েছে। ভয়ে পালিয়ে গেছে মিকাইলের স্ত্রী সন্তান।

শুধু মিকাইল চৌধুরীর বাড়িই নয়। শাসন গ্রামের সালাউদ্দিন চৌধুরী, এনামুল হোক চৌধুরী, একরামুল হোক চৌধুরী, কিবরিয়া শরিফ, ইউসুফ চৌধুরী, রফিক চৌধুরী, নাজমুল চৌধুরী, গাউস চৌধুরী, আমানত চৌধুরী, কালাম চৌধুরী, আবুল হোসেন চৌধুরী, এনামুল হোক চৌধুরী, লায়েব চৌধুরী, হানিফ চৌধুরী, কারিম চৌধুরী, আসাদ আলী সেখ, রজ্জব আলী সেখ, মিজান আলী সেখ, আশরাফ আলী সেখ, সাখাওয়াত ভূইয়া, মওলা সরদার, মর্তুজা সরদার, আইয়ুব আলী শিকদার, উজ্জল শিকদার, বাবু মোল্লা, আবেদ আলী ভূইয়া, ওবায়দুল ভূইয়া, হাসান ভূইয়া, বাচ্চু ফকির, শরিফুল ফকির, হাসান শরিফ, হুমায়ুন শেখ, ছবেদ মোল্লা, মুনসুর শরিফ, পলাশ শেখ, এশারত শেখসহ শতাধিক মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছেন ইউপি সদস্য প্রার্থী মামুন শেখের সমর্থকরা। পুরুষদের না পেয়ে ভাঙচুরের সময় নারীদের মারধর করেছেন। পুরুষ শূন্য পরিবারগুলোর নারীরাও এখন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

মিকাইল চৌধুরীর ছোট ভাইয়ের স্ত্রী রওশন বেগম বলেন, ‘আসাদ শেখ যে রাতে মারা যায়, ওই রাতেই তার ভাইপো মামুনের লোকজন এসে আমাদের অনেকের বাড়িঘর ভাঙচুর করে। তালা ভেঙে ঘরের মধ্যে থাকা মালামাল লুট করে নেয়। যা নিতে পারেনি সেসব ভাঙচুর করে রেখে গেছে। পরবর্তী তিন দিনে তারা আমার ভাসুরের ভবন ভেঙে দিয়ে গেছে। আশপাশের যাকে সামনে পেয়েছে তাকে মারধর করেছে। নারীদেরও বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করতে দেয়নি।’

মাহফুজা বেগম, হালিমা বেগমসহ আরও কয়েকজন বলেন, ‘যেভাবে বাড়িঘর ভেঙেছে তাতে বসবাস করার কোনো অবস্থা নেই। ঘরের মধ্যে থাকা মূল্যবান মালামাল লুট করেছে। যা নিতে পারেননি সেসব ভাঙচুর করেছে। ঘরের চালও কুপিয়েছে। ঘরের মধ্যে লেপ, তোশক, বালিশ ও কাপড় চোপড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। রান্নাঘরের হাড়ি-পাতিলসহ সবকিছু ভাঙচুর করেছে। স্বামী-ছেলে সবইতো পলাতক আছে। কী করব, কীভাবে বাঁচব জানি না।’

পলাতক দিনমজুর নাসির মোল্লার স্ত্রী বেবি বেগম বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমার স্বামী পলাতক রয়েছে। মাঠে কিছু ধান রয়েছে। তাতে পানি দিতে পারছি না। তারা বাড়ি এসে বলে গেছে, পানি দিয়ে হবে কী? ধান তো আমরা নিয়ে যাব।’

মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী গোলাম কবির বলেন, ‘এলাকা এখন শান্ত রয়েছে। যে যার প্রয়োজনীয় কাজ করছেন। প্রতিদিন পুলিশ নিয়মিত টহল দিচ্ছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ হত্যা মামলাটি গ্রহণ করে তদন্ত চালাচ্ছে। এদিকে ভাঙচুরের ঘটনায় হানিফের স্ত্রী হাফিজা বেগম ২৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। ওই মামলাটিও আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে দেখছি।’

টুটুল/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়