ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

গাছে গাছে বিদ্যুতের তার, বাড়ছে প্রাণহানির ঝুঁকি 

ইমরান হোসেন, বরগুনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৭, ২৩ এপ্রিল ২০২১  
গাছে গাছে বিদ্যুতের তার, বাড়ছে প্রাণহানির ঝুঁকি 

দুই বছর ধরে বরগুনার সদর থানার গৌরিচন্না এলাকায় গাছের সঙ্গে ঝুলছে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ লাইন। এসব সংযোগ লাইনের তার আবরণ বিহীন। কিছু কিছু তার ছিঁড়ে পড়ে আছে বিভিন্ন জায়গায়। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানিও। কেউ হচ্ছেন মারাত্মক আহত। স্থানীয়রা বলছেন, একাধিকবার বিদ্যুৎ অফিসে লিখিত আবেদন করেও ফল পাওয়া যায়নি। বর্ষা মৌসুমের আগে গাছ থেকে সংযোগ লাইন না সরালে বড় ধরনের প্রাণহানি হতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করছেন। 

গৌরিচন্না এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, গৌরিচন্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শানু মিয়ার বাড়ির বাগানের মধ্য দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের লাইনের তার (পাইপ বা প্লাস্টিকের আভরন ছাড়া) নিয়ে বিভিন্ন বাসায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। এর মধ্যে কোনো ধরনের খুঁটি ব্যবহার করা হয়নি। কোথাও মেহগনি গাছে, কোথাও করমচা গাছে, আবার কোথাও রেইনট্রির সঙ্গে তার বেঁধে বাড়িতে বাড়িতে মিটার দিয়ে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় তারের অর্ধেক ছিঁড়ে ঝুলে আছে নিচের দিকে। 

এই প্রসঙ্গে বাগানের মালিক শানু মিয়া বলেন, ‘দুই বছর আগে আমার বাগানের মধ্য দিয়ে যখন কোনো রকম আভরন ছাড়া তার দিয়ে সংযোগ নিচ্ছিল, তখন খুঁটি হিসেবে আমার গাছগুলো ব্যবহার করেছিল তারা। তখন আমি তাদের নিষেধ করেছিলাম। বলেছিলাম,  যেকোনো সময়  দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তবে বিদ্যুৎ বিভাগ তখন বলেছিল, এই সংযোগ জরুরি দিতে হবে। তাই প্রাথমিকভাবে খুঁটির বদলে গাছ ব্যবহার করছে তারা। দ্রুত  মধ্যে খুঁটি দিয়ে দেবে বলেও জানিয়েছিল। কিন্তু ওই ঘটনার পর  দু’বছর পার হলেও খুঁটি বসেনি। ইতোধ্যেই আমার আত্মীয়-স্বজনের মধ‌্যে  ৭ জন জন বিদ‌্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছেন। এরপর থেকেই আমি বিদ্যুৎ অফিসে আবেদন করেছিলাম খুঁটি ব্যবহারের, তবে তারা কেউ গুরুত্বই দেয়নি।’

একই এলাকার, শামিম হাসান, জাবের আলী বলেন, ‘এই বাগানের মধ্য দিয়ে বিদ‌্যুৎ সংযোগ দেয়ার সময়ে আমাদের বাড়ির বাগানের মধ্য দিয়েও গাছে গাছে সংযোগের তার নিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ। আমাদেরও আশ্বাস দিয়েছিল, এক মাসের মধ্যে খুঁটি দিয়ে সংযোগ দেবে। কিন্তু  দুই বছরেও  খুঁটি বসেনি।’

মোবারক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘আমার বাগানের মধ্যেও গাছের সঙ্গে বিদ্যুতের তার বেঁধে সংযোগ দিয়েছে। এখন গাছে গাছে  তার ছিঁড়ে ঝুলছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় এখন।’

স্থানীয়  বাসিন্দা জাকির হাওলাদার বলেন, ‘বাগানের ভেতর বিভিন্ন জায়গায় তার ছিঁড়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে থাকি। গাছ বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। বাগানের মধ্যের অনেক গাছ মরেও গেছে। তবে এর কোনো সমাধান পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘ গত মাসেই এক বৃদ্ধ ফসলের ক্ষেতেই মারা গেছেন বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে।  তারপরও সংযোগগুলো ঠিক করা হয়নি। বৃদ্ধ মারা যাওয়ার বিষয়টি পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে  মীমাংসা করে নিয়েছে তার স্বজনরা।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য টুটল মিয়া বলেন, ‘আমার এলাকার অন্তত ৩০ জন বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছে। মারা গেছে একজন। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজারের কাছে গিয়েছি। তিনি খুঁটি বসানোর আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবায়ন করেননি।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার লাবিবুল বাশার মোহাম্মাদ আলী বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় খুঁটি দিতে পারিনি। আমাদের টেন্ডার হয়েছে খুঁটির। তবে, ঠিকাদার এখনো খুঁটি বসাননি। যদি তিনি জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ না করেন, তবে তার বিল আটকে দিয়ে টেন্ডার বাতিল করবো।’ সংযোগগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে যদি এমন ঝুঁকিপূর্ণ সংযোগের সত্যতা পাই তবে, প্রথমেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবো।’

/এনই/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়