ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘ঘরে চাল নেই, খামু কী?’

কাশেম হাওলাদার, বরগুনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৭, ২৪ এপ্রিল ২০২১  
‘ঘরে চাল নেই, খামু কী?’

সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা পাননি রিজিয়া বেগম

‘পুতের (ছেলের) বউর চায়ের দোহানে (দোকান) বসি, হেও করোনার লইগ্গা বন্ধ। নাতি দুগ্গারও (দুজন) কোনো কাম (কাজ) নাই। ঘরে চাল নাই, হাতে পয়সা (টাকা) নেই, খামু কি? কোথায় জামু কইতে পারি না। হাটতে চলতেও পারি না যে কারো কাছে গিয়া কিছু চামু।’

এভাবেই নিজের কষ্টের কথা বলছিলেন বরগুনার তালতলী উপজেলার  রিজিয়া বেগম।

রিজিয়া বেগম বড়বগী ইউনিয়নের মালীপাড়া গ্রামের মৃত হাতেম হাওলাদারের স্ত্রী। স্বামীকে হারিয়েছেন ১৪ বছর আগে। বড় ছেলে মারা গেছেন বছর খানেক হলো। অন্য দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন। স্বামীর স্মৃতি আগলে বড় ছেলের স্ত্রী ও তার তিন সন্তানকে নিয়ে খুপড়ি ঘরে থাকছেন ৮১ বছরের রিজিয়া বেগম। বৃদ্ধ ও বিধবাদের জন্য সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচি থাকলেও রিজিয়া বেগমের ভাগ্যে জোটেনি কোনো সহায়তা।

রিজিয়া বেগম বলেন, ‘এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানদের কত্ত কইলাম। তারা কই দিমুনে। আর দেই না।’ 

স্থানীয়রা জানান, বড় ছেলে মো. হাবিল হাওলাদার মারা যাওয়ার পর  অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটছে রিজিয়া বেগম ও তার পুত্রবধূ জেসমিন এবং তার সন্তানদের। বাকি দুই ছেলে মাইন উদ্দীন ও শহিদুল ইসলাম দিনমজুর। বিয়ের পর তারাও আলাদা হয়ে গেছেন। বড় ছেলে হাবিল মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে ছেলের বউ জেসমিন বেগম একটি চায়ের দোকান দেন। ওই দোকানে সবসময় বসে থাকেন রিজিয়া। কোনো রকমের সংসার চালালেও করোনার কারণে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে তাদের।

রিজিয়া বেগমের বাড়ি গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙাচোরা খুপড়ি ঘরের দরজায় বসে আছেন রিজিয়া বেগম। কথা বলে জানা গেলো, বয়সের ভারে লাঠি ভর দিয়ে কোনো রকম হাঁটাচলা করেন। রোগে আক্রান্ত হয়ে তার দুই হাতের আঙ্গুলগুলোও বাঁকা হয়ে গেছে। যার কারণে খাবারও হাত দিয়ে খেতে পারেন না। কথাও আটকে আসে।

রিজিয়া বেগমের পুত্রবধূ জেসমিন বেগম বলেন, ‘করোনার এই সময়ে দোকানপাট সব বন্ধ। ঋণ নিয়ে ছেলেকে অটো গাড়ি কিনে দিয়েছিলাম কিন্তু এখন ঋণ শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছি। ধার দেনা করে কোনোভাবে সংসার চালাচ্ছি। আমার শাশুড়ির বয়স হয়ছে। তিনি ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। সরকারি বা বেসরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকলেও আমার শাশুড়ি এ পর্যন্ত কিছুই পাইনি। যদি তার একটি বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতা’র ব্যবস্থা হয় তাহলে আমরা অনেক উপকৃত হবো।’

বড়বগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর মিয়া বলেন, ‘রিজিয়ার মতো এমন অনেক নারী আছে যারা বয়স্ক ভাতা পাওয়ার যোগ্য কিন্তু এলাকার মেম্বারদের স্বজনপ্রীতির কারণে এসব অসহায় মানুষরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতা দেওয়া হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে তালতলী উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা শফিকুল আলম বলেন, ‘এখন বিধবা ভাতা বা বয়স্ক ভাতা নেওয়া হচ্ছে না। রিজিয়া বেগমের আইডি কার্ড উপজেলা সমাজসেবা অফিসে দিয়ে গেলে পরবর্তীতে বয়স্ক ভাতা বা বিধবা ভাতার নাম নেওয়া হলে যাচাই-বাছাই করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বরগুনা/ইভা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়