ঢাকা     মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

চা শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

মো. মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪১, ৪ জুন ২০২১   আপডেট: ১১:১৩, ৪ জুন ২০২১
চা শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

হবিগঞ্জ জেলায় ছোট ও বড় মিলে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ।  এরমধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৩২ হাজার শ্রমিক চা পাতা উত্তোলনে জড়িত। বাগানে কাজ না পেয়ে বাকীদের জীবিকার জন্য বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে হচ্ছে।   

চা বাগানে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি ১০২ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২০ টাকা। এ মজুরিতেও সংসার চলছে না ওদের। কারণ, প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ছে। শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করতে হবে। মজুরির স্বল্পতায় শ্রমিকদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ। মাঝে-মাঝে এ নিয়ে আন্দোলনেও যাচ্ছে তারা।

চা-বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা-সংসদ ও বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের মধ্যে মজুরি (বেতন) বাড়ানো বিষয়ক দ্বিপক্ষীয় নতুন চুক্তিতে শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানো হয়। আগের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ২১ মাস ১৫ দিন পর ১৫ অক্টোবর (২০২০) চুক্তি সম্পাদন হয়েছে।

জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা-বাগানের বাসিন্দা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল জানান, প্রতি দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করে নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার বিধান রয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ড ও চা-শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সবমিলিয়ে ২৫৬ টি চা-বাগান আছে।  এতে নিবন্ধিত শ্রমিকের সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার। অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩০ হাজার।  দেশে মোট চা শ্রমিক পরিবারের বাসিন্দা প্রায় ৮ লাখ। এরমধ্যে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩৩ হাজার। বাগানে কাজ না পেয়ে হাজার হাজার শ্রমিক বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।  

নৃপেন পাল জানান, চা-শ্রমিকদের বর্তমান মজুরি কাঠামো বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় এখনও চা-শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পাচ্ছেন না। প্রতিদিন একজন শ্রমিককে অবশ্যই ২৩ কেজি চা-পাতা উত্তোলন করতে হয়। তবেই সে পাবে ১২০ টাকা। মজুরি ও রেশন মিলিয়ে একজন শ্রমিক প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পায়- যেখানে একজন খেতমজুরের বর্তমান আয় প্রতিদিন ৫০০ টাকা, একজন রিকশা চালকের প্রতিদিনের আয় প্রায় ৬০০ টাকা।

চা-বাগানগুলো ঘুরে দেখতে পাওয়া যায়- শ্রমিক ও তাদের সন্তানদের রুগ্ন দেহ, ভগ্ন স্বাস্থ্য এবং তারা অপুষ্টির শিকার। পুষ্টিকর খাবার দূরের কথা তারা দু-বেলা পেটভরে খাবার পায় না। চা-শ্রমিকরা নৈমিত্তিক ছুটি পায় না।  চা-শ্রমিকদের বাসস্থানের উন্নতি হয়নি। এটা বাগান মালিকদের দায়িত্ব। ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে মা-বাবা, পুত্র, কন্যা, পুত্রবধূ নিয়ে তারা বাস করে।

চান্দপুর বাগানের শ্রমিক শিলা উড়াং, রুমা উড়াং, সাগরী রায়, সন্ধ্যা মহালী, বিনা সাঁওতাল এরা জানালেন, তাদের দৈনিক বেতন ১২০ টাকা। নুন আনতে যেনো পান্তা ফুরায় তাদের। খেয়ে না খেয়ে কাজে করে যাচ্ছেন তারা।  

চা শ্রমিক অরুন মহালী বলেন, শ্রমিকরা ১৯৬৫ সালে দিনে মজুরি পেতেন এক টাকা। এখন হয়েছে ১২০ টাকা। রেশন আগের মতই আছে। রেশনের আটা ও চালের মান ভালো না। তার আক্ষেপ, চা-বাগান শ্রমিকদের টানাপোড়েনের জীবন শেষ বুঝি হবে না।  

দেউন্দি চা বাগানের প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, চা-পাতা উৎপাদনে পুরুষের পাশাপাশি নারীও কঠোর শ্রম দিচ্ছে। একজন শ্রমিক ৬০ বছর পর্যন্ত বাগানে কর্মরত থাকেন। পরে অবসরে যান।

তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের মূল্য দিন দিন বাড়ছে। এখানে শ্রমিকদের এ বেতনে চলা কঠিন হয়ে পড়েছে।  অচিরেই জনপ্রতি শ্রমিকের বেতন ৩০০ টাকা করা হোক। এছাড়াও শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। 

হবিগঞ্জ/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়