ঢাকা     শনিবার   ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বঙ্গভ্যাক্স টিকা পরীক্ষার জন্য বানর ধরতে গিয়ে ৫ জন লাঞ্ছিত

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) সংবাদদাতা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ৪ জুলাই ২০২১   আপডেট: ০৯:১১, ৫ জুলাই ২০২১
বঙ্গভ্যাক্স টিকা পরীক্ষার জন্য বানর ধরতে গিয়ে ৫ জন লাঞ্ছিত

গ্লোব বায়েটেক লিমিটেডের তৈরি করোনার টিকা বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে পুশ করার আগে বানরের দেহে পুশ করে এর কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য বানর ধরতে গিয়ে পাঁচজন লাঞ্ছিত হয়েছেন।

রোববার (০৪ জুলাই) সকালে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী বাজার গ্রামে বানর ধরতে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের পাঁচজনকে হেনস্তা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

আরো পড়ুন:

লাঞ্ছিতরা হলেন, গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেডের মিডিয়া কনসালটেন্ট ও গ্লোবাল টেলিভিশনের এসাইনমেন্ট কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, ক্যামেরা পার্সন ফাহাদ আল কাদরি ও তাদের দুইজন গাড়িচালক।

আনিসুর রহমান বলেন, ‘সরকারি অনুমতি নিয়ে আমরা বানর ধরতে যাই। এলাকা থেকে ১০টি বানর ধরেও ফেলি। কিন্তু স্থানীয় কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ বানরের জন্য টাকা দাবি করে এবং টাকা না দেওয়ায় তারা আমাদের শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে এবং সঙ্গে থাকা টাকাসহ বানরগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’

ঘটনার ভিডিও ফুটেজ তাদের কাছে আছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান আনিসুর রহমান।

বরমী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আবুল হাশেম বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে বাজারের ব্যবসায়ীসহ বরমী এলাকার স্থানীয় জনগণ বানর ধরার খবরটি আমাকে জানায়। পরে আমি সেখানে গিয়ে কয়েকটি বানর খাঁচায় আবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই এবং এসব বানর ধরার কারণ জানতে চাই। পরে তারা গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেডের তৈরি করা করোনার টিকা বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহে পুশ করার আগে প্রাণির দেহে পুশ করে এর কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য বানর ধরার কথা জানান। বানর ধরার জন্য বনবিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি থাকার কথাও জানান তারা। কিন্তু স্থানীয়রা বানর ধরতে বারন করার পরও ধরা অব্যাহত রাখায় তারা উত্তেজিত হয়। স্থানীয়দের শান্ত করে বানর ধরতে আসা লোকজনদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখান থেকে শ্রীপুর থানা পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়।’

বানরের জন্য টাকা দাবি ও লুটের কথা অস্বীকার করেছেন আবুল হাশেম। 

আবুল হাশেম আরও বলেন, ‘বহু বছরের ঐতিহ্যবাহী বরমীর বানর। আমরা তাদের খাবার দেই, যত্ন করি। লকডাউনে দোকানপাট বন্ধ থাকার পরও প্রত্যেক বাড়ি থেকে খাবার যোগাড় করে দেই। বানরগুলো বরমী বাজারকে মাতিয়ে রাখে। বানরগুলোকে খাঁচায় বন্দি করে অজ্ঞান করায় স্থানীয়রা উত্তেজিত ও মারমুখী হয়ে ওঠে।’

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গভ্যাক্স টিকা মানবদেহে প্রয়োগের আগে বানরের দেহে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ জন্য গত ২৬ জুন গ্লোব বায়েটেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে ৫৬টি বানরের প্রয়োজন বলে আবেদন করেন। পরদিন প্রধান বনসংরক্ষক বরাবার প্রয়োজনীয় সংরক্ষক বানর ধরা ও ব্যবহারের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে এক পত্র পাঠানো হয়। পরে প্রধান বন সংরক্ষক এ সংক্রান্ত একটি চিঠি আমাকেও দেন।’

মো. তবিবুর রহমান বলেন, বঙ্গভ্যাক্সের টিকা এর আগে গিনিপিগ ও খরগোশের দেহে প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে আরও নিশ্চিত হতে বানরের দেহে প্রয়োগ করা প্রয়োজন। গ্লোব বায়েটেক গত ২৯ জুন থেকে তিন দিনে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও সাফারি পার্ক থেকে ৩০টি বানর সংগ্রহ করেছে। বাকি বানর ধরার জন্য সকালে স্থানীয় প্রশাসন ও বনকর্মকর্তাদের অবগত না করে তারা শ্রীপুরের বরমী বাজারে গেলে জনরোষে পড়েন।

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, উত্তেজিত জনতার রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। পরে বানর ধরার জন্য তাদের সঙ্গে থাকা মন্ত্রণালয় ও বনবিভাগের অনাপত্তিপত্র তথা কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। 
 

রফিক/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়