ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজু নিখোঁজ, উৎকণ্ঠায় পরিবার

বরগুনা সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২১, ৫ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১০:২৭, ৫ জুলাই ২০২১
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজু নিখোঁজ, উৎকণ্ঠায় পরিবার

ঢাকার মিরপুর থেকে নিখোঁজের ১২ দিনেও সন্ধান মেলেনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান রাজুর (২৬)।

রাজু বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার গোলবুনিয়া গ্রামের হুমায়ুন কবিরের ছেলে। সন্ধান না পেয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন তার মা-বাবা। রাজুর ফেরার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্ত্রী ও শিশু সন্তান।

রাজুর পরিবার জানায়, ঢাকার মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশনের ডি ব্লকের ১৯ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলায় ভাড়া নিয়ে থাকতেন রাজু। রসায়ন বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র তিনি। ম্যাচে থেকে টিউশনি ও চাকরির সন্ধান করছিলেন। গত ২৪ জুন সন্ধ্যায় নামাযের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। এরপর আর রুমে ফেরেননি রাজু।

২৫ জুন (শুক্রবার) রাজুর নিখোঁজের খবর আসে তার গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায়। নিখোঁজের খবর শুনেই স্ট্রোক করে মারা যান রাজুর দাদী ফাতেমা বেগম।

নিখোঁজ রাজুর সন্ধান পেতে দু’দিন পরে রাজুর রুমমেট মিজানুর রহমান (২৬) ঢাকার পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন (ডায়েরি নম্বর- ২৩৯২)। ২৬ জুন (সোমবার) রাজুর মোবাইল ফোন নম্বর (০১৭০১-৮৭০১৯৬) থেকে ফোন করে রাজুর মায়ের কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করলে একই থানায় রাজুর দুলাভাই বাদী হয়ে ২৮ জুন একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

রাজুর রুমমেট মিজানুর রহমান মুঠোফোনে রাইজিংবিডিকে বলেন, রাজু নিখোঁজ হওয়ার রাতে ৯টার দিকে অজ্ঞাত দু’জন ব্যক্তি রাজুর চাবি দিয়ে তালা খুলে রুমে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ পরে তারা চলে যায়। আমি রুমে ফিরলে পাশের রুমে থাকা ভাড়াটিয়ারা আমাকে এ কথা বলার পর আমি রাজুর ট্যাব টেবিলের উপরে পাইনি। রাজু বাইরে ট্যাব নিয়ে যেতো না। তবে রুমে বাকি সব ঠিক মতোই পেয়েছি। এরপর আমি খোঁজাখুঁজি করে রাজুকে না পেয়ে পরের দিন পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি।

রাজুর মা আমেনা বেগম রোববার (৪ জুলাই) বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন শেষে বলেন, ২৬ জুন আমার ছেলের ফোন নম্বর থেকে আমাকে ফোন করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। এরপর থেকে ওই নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরের দিন আবারও রাজুর ফোন নাম্বার (০১৭০১-৮৭০১৯৬) থেকে ফোন করে রাজুর মায়ের কাছে আরও ৫০ হাজার টাকা দাবী করে। পরে ১৩ হাজার টাকা তাদের দেওয়া নম্বরে (০১৩১৭-৪৮৭৭৫৭) নগদ লেনদেনের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেই। এর কিছু সময় পরে আবারও একটি রবি নম্বর (০১৮৫৫-১০৭৭৫৫) থেকে ফোন করে এক ব্যক্তি নিজেকে টাঙ্গাইল থানার ওসি দাবী করে বলেন রাজুকে তারা হাত-পা বাঁধা অবস্থায় টাঙ্গাইলের একটি সড়কে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। তার চিকিৎসার জন্য স্থানীয় জনতা ক্লিনিকে ভর্তি করেছেন। দ্রুত ১২ হাজার টাকা দরকার। বলে তারা ফোন কেটে দেয়। এরপর আমি পল্লবী থানায় ওই নম্বর দিলে তারা টাঙ্গাইল থানায় কথা বলে আমাদের জানান ওই নম্বর টাঙ্গাইলের ওসির না।

রাজুর মা বলেন, আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমার ছেলে কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত না। রাজুর কোনো শত্রু নাই। আমি প্রশাসনের সহায়তা চাই। আমার ছেলেকে ফেরত চাই।

রাজুর স্ত্রী হাফসা আক্তার বলেন, তার স্বামী রাজু খুব ভদ্র। তাকে কারা অপহরণ করেছে সে বিষয়ে পল্লবী থানা পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। একাধিক ফোন নম্বর থেকে মুক্তিপণ দাবী করেছে। সব নম্বর পল্লবী থানায় দিয়েছি। মোবাইল ট্রাকিং করে অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ।

তিনি বলেন, আমি আমার স্বামীকে নিয়ে চিন্তায় আছি। আমার ১৪ মাসের একটি কন্যা শিশু আছে। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

রাজুর দিনমজুর বাবা হুমায়ুন কবির বলেন, সারাটা জীবন পরিশ্রম করে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করিয়েছি। একমাত্র ছেলে নিখোঁজের খবরে প্রতি মুহূর্ত উৎকণ্ঠায় কাটে আমাদের। নাতির নিখোঁজের খবর শুনে স্ট্রোক করে মারা যান রাজুর দাদি। আমরা অসহায় হয়ে পরেছি। আমাদের সহায়তা করুন। আমি শেষ বয়সে এসে আমার ছেলেকে হারাতে চাইনা।

এদিকে এ বিষয়ে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. পারভেজ মুঠোফোনে রাইজিংবিডিকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে আমরা রাজুকে উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছি। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা কিছু সূত্র পেয়েছি। আশাকরি রাজুকে উদ্ধার করতে বেশি সময় লাগবে না।

ইমরান হোসেন/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়