ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

চাপ সামলাতে মমেক হাসপাতালে নানা উদ্যোগ, তারপরও শঙ্কা 

মাহমুদুল হাসান মিলন, ময়মনসিংহ   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৭, ১২ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২১:২৯, ১২ জুলাই ২০২১
চাপ সামলাতে মমেক হাসপাতালে নানা উদ্যোগ, তারপরও শঙ্কা 

ময়মনসিংহে গত দুই সপ্তাহ ধরে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে রোগী ভর্তি দ্বিগুণ বেড়েছে। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষকে নানা উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে। 

করোনা মোকাবিলায় হাসপাতালে নানা সংকট ও সমাধানের প্রস্তুতি নিয়ে কথা হয় করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা. মহীউদ্দিন খান মুনের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। সোমবার (১২ জুলাই) পর্যন্ত হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি রয়েছে সাড়ে চারশত। অনেকে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে অবস্থান করছেন। 

গত বছর মমেক হাসপাতালের নতুন ভবনের ৫ম থেকে ৮ম তলায় করোনা ডেডিকেটেড ইউনিট চালুর সময় ১০টি আইসিইউ শয্যাসহ ২২০ শয্যার ব্যবস্থা ছিল। চালুর পর থেকে কখনও সবকটি শয্যা পূর্ণ হয়নি। সম্প্রতি রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এই পর্যন্ত পাঁচ ধাপে করোনা ইউনিটে শয্যা বাড়িয়ে ৪০০ করা হয়েছে। এখন ৮ তলা ভবনের ৬টি ফ্লোরই ব্যবহৃত হচ্ছে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসায়। পরিস্থিতি সামলাতে এখন নতুন ভবনের পাশাপাশি পুরাতন ভবনও সংযুক্ত করা হয়েছে। পুরাতন ভবনের জরুরিসেবা বিভাগের দুইতলায় অর্থোপেডিকস ওয়ার্ড স্থানান্তর করে করোনা রোগীদের জন্য শয্যা তৈরি করা হচ্ছে। 

এছাড়াও তিনটি বেসরকারি হাসপাতালেও করোনা ইউনিট চালু করার সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। হাসপাতালে যারা বেড পাচ্ছেন না, তাদের মেঝেতে বিছানা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতলে দুই-তিন দিন আগে সিরিয়াল দিয়েও আইসিইউ সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান রোগীর স্বজনরা।

হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ বেড নিয়ে করোনা ইউনিট চালু করা হয়। বর্তমানে সেটি বাড়িয়ে ২০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও কিডনি ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য দুটি আইসিইউ ছিল, সেগুলোও এখন করোনা রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। 

ডা. মহীউদ্দিন খান মুন জানান, সাধারণ শয্যা প্রতিদিন বাড়ানো গেলেও আইসিইউ সেবা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ আইসিইউ সেবা পরিচালনা করতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের প্রয়োজন। যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় আইসিইউ শয্যা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। জনবল পাওয়া গেলে আইসিইউ বাড়ানো যাবে। 

করোনা গাইডলাইন অনুসারে একজন চিকিৎসক ১৫ দিন একটানা কাজ করার পর তিনি ১৫ দিন সঙ্গনিরোধের আওতায় থাকেন। অনেক চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে চিকিৎসক সংকট বেড়ে চলেছে। করোনা ইউনিটে ১৯ জন চিকিৎসক দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক সংকট বাড়তে থাকে। 

সম্প্রতি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের সহযোগিতায় কলেজ ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে এবং হাসপাতালের অন্যান্য ওয়ার্ড থেকে ২১ জন এনে মোট ৪০ জন চিকিৎসক দিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ১৫০ জন সেবিকা কাজ করেন তিন পালায়। তারাও সঙ্গনিরোধ মেনে চলেন। পরিচ্ছন্নকর্মীর সঙ্কট রয়েছে, তাদের সংখ্যা ২৫ জন। 

ডা. মহীউদ্দিন খান মুন জানান, হাসপাতালে ১০ হাজার লিটারের একটি সিলিন্ডারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। এছাড়াও ৬৫০টি সাধারণ সিলিন্ডার রয়েছে। তাই রোগীর চাপ দ্বিগুণ বাড়লেও আপাতত অক্সিজেন সরবরাহে ঘাটতি হবে না। এছাড়াও করোনা ইউনিটে ২৯টি হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, ২০টি ভেন্টিলেটর, ১৩টি অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর রয়েছে। এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। কোনো ঘাটতি নেই।

তবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ময়মনসিংহ শাখার সভাপতি মতিউর রহমান অক্সিজেন সংকট মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে হাসপাতালে খুব দ্রুত আরও একটি সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিলিন্ডার স্থাপনের কাজ শুরু করার দাবি করেন। 

ডা. মহীউদ্দিন খান মুন বলেন, এখন পর্যন্ত হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। তবে যদি রোগী বাড়ার এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে, তাহলে হয়ত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। 

তিনি মনে করেন, করোনা সংক্রমণ রোধ ও আক্রান্তের হার কমানো না গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। তাই তিনি সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান। 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়