ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

নাম রাজবংশী, তবে অবস্থা ‘আসমানী’র

শাহীন আনোয়ার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ২০ জুলাই ২০২১   আপডেট: ১২:১৯, ২০ জুলাই ২০২১

বাড়ি তো নয়, পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।

পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের বিখ্যাত ‘আসমানী’ কবিতার সঙ্গে মিলে যায় মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালী ইউনিয়নের রুইফলশিয়া গ্রামের লক্ষ্মী রানী রাজবংশীর বর্তমান অবস্থা। কবিতায় বর্ণিত ঘরের সঙ্গে লক্ষ্মী রানীর বসত ঘরের অবস্থাও যেনো মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।

শারিরীক প্রতিবন্ধী অসহায় এই নারী বাবার ভিটায় জরাজীর্ণ একটি ঝুপড়ি ঘরে একাকি বসবাস করেন। নির্জন ঘরটিতে নিদারুণ কষ্টে কাটছে তার জীবন।

পৃথিবীতে আপন বলতে কেউ নেই তার। জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী এই নারীর বিয়ে হয় প্রতিবেশী অমর রাজবংশীর সঙ্গে। বিয়ের কিছুদিন পর নিরুদ্দেশ হন অমর। বেঁচে আছেন কি না কেউ জানে না। তবু অমরের স্মৃতি আঁকড়ে ধরে শাখা-সিঁদুর আজও অক্ষুন্ন রেখেছেন লক্ষ্মী।

লতাপাতা গাছ-গাছালি ঘেরা জরাজীর্ণ ঝুপড়ি ঘরে বাস লক্ষ্মীর। ঘরের চাল-বেড়া ভেঙে পড়েছে।  বাড়িটা ঘিরে ধরেছে বুনো লতা-গুল্ম। মাটির ডোয়া খসে পড়ছে। স‌্যাঁতসেতে ঘরের মেঝে। সেখানেই একা একা থাকেন তিনি।

নিঃসন্তান এই নারীর বাবা মুকন্দ সরকার ও মা বিশোকা সরকার বহু দিন আগেই মারা গেছেন। তারা পাঁচ বোন। তবে বাকি বোনেরা কে কোথায় আছেন, কেউ বলতে পারেন না।

বাবার বসতভিটার ৬৫ শতাংশ ছিল। এখন আব্মোত্র ৩০ শতাংশ। এই জমিটুকুও দখলের পথে বলে জানান স্থানীয়রা।

খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। কেউ খাবার দিলে খান, না দিলে উপোষ। শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা অসুখ-বিসুখ। চোখে ভালো দেখেন না। বিকলাঙ্গ তাই চলাফেরাও করতে পারেন না। তার পরও ভিক্ষা করেন না লক্ষ্মী।

দেশব‌্যাপী অসহায়, ঘরহীন মানুষ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ঘর পেয়েছেন। অনেকে পেলেও লক্ষ্মী রানীর কথা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন ঘর প্রদানের তালিকা প্রস্তুতকারীরা।

তবে লক্ষ্মীর কথা জানার পর তার বিষয়ে খোঁজ খবর করা হচ্ছে। তাকে ঘরও তুলে দেওয়া হবে এবং পানির সমস‌্যার সমধান করা হবে বলে আশ্বাস দিলেন ইউনিয়ন পরিষদের  চেয়ারম্যান।

লক্ষ্মী রানীর জন্য টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণসহ সব ব্যবস্থা করা হবে। তার বেহাত হওয়া  পৈত্রিক সম্পত্তিও উদ্ধার করা হবে বলে আশ্বাস দিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

দেশের আনাচে কানাচে এখনও বহু আসমানী রয়েছেন। যারা প্রতিবেশির দয়ায় বা নিদারুন দুঃখ-কষ্টে কোনোরকমে বেঁচে আছেন। কোনো হৃদয়বান মানুষ বা সরকারের সুনজরে পড়লে বাকি জীবনটা হয়তো আর বোঝা মনে হতে না। জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় প্রশাসন এদের খোঁজ নিয়ে সরকারি সহায়তার আওতায় আনবেন এমনটাই প্রত‌্যাশা।

মাগুরা/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়