ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গরু ফেরত, বিপাকে ব্যবসায়ীরা

কাঞ্চন কুমার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৩ জুলাই ২০২১  
গরু ফেরত, বিপাকে ব্যবসায়ীরা

রফিকুল ইসলাম। একজন গরু ব্যবসায়ী। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় তার বাড়ি। গরু বেচাকেনা তার মূল পেশা।

এবার ঈদে নিজ এলাকা থেকে গরু কিনে ঢাকায় নিয়ে যান ২০টি গরু। লোকসান দিয়ে তিনি ১১টি বিক্রি করেছেন। কিন্তু নয়টি গরু বিক্রি করতে পারেনি। গরুগুলো বিক্রি করতে না পেরে বাড়িতে ফিরিয়ে এনে বিপাকে পড়েছেন তিনি। কারণ, তার গরুগুলো রাখার কোন জায়গা নেই। পাশাপাশি গরুগুলোর খাবারের পেছনে অর্থ খরচ হচ্ছে। একে তো গরু বিক্রি করে লোকসান, তার ওপর আবার গরু বিক্রি করতে না পেরে ফেরত আনতে হয়েছে। সব মিলিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন তিনি।

কোরবানির গরুর ব্যবসায় কখনো লাভ হয়। আবার কখনো লোকসান। করোনার দ্বিতীয় বছরে এবার খামারি আর ব্যাপারীদের মাথায় হাত।

কুষ্টিয়া জেলা থেকে রাজধানীতে নিয়ে এসে বেশিরভাগ গরুই এবার বিক্রি হয়নি। পরিবহন ভাড়া করে ফিরিয়ে এনে বিপাকে পড়েছেন তারা। কোরবানির পরে বাজারে গরুর চাহিদা কমে যায়। ফলে গরুগুলো এখন চাইলেই বিক্রি করা যাবে না। এখন বিক্রি করতে গেলে আরও লোকসান হবে। কারণ, গরুগুলো এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদেরকে আগে সুস্থ করে তুলতে হবে। তারপরে আবার হাটে তুলে বিক্রি করতে হবে। বেশিরভাগ ব্যবসায়ীর ঘরে জায়গা নেই।

কেউ বেঁধে রেখেছেন নিজের বাড়ির বারান্দায়। এখানেও আছে চুরির ভয়। তাই রাত জেগে পাহারায় থাকতে হয়।

আবার গরুগুলো একটি পরিবেশে অভ্যস্ত ছিল। এখন নতুন পরিবেশে লালন পালনে ঝামেলা বেশি। ঢাকায় আনা নেয়ার ঝক্কি-ঝামেলায় প্রতিটি গরুর ওজন কমে গেছে। তাদের স্বাস্থ্য ধরে রাখাও একটি বড় সমস্যা।

রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে গরুর দাম তুলনামুলকভাবে কম হবে। কারণ, মানুষের কাছে কোরবানির মাংস থেকে যাবে। এসময়ে গরু বিক্রি করা কঠিন হবে। এ সব গরুর খাবার কিনতে সব টাকা শেষ হয়ে যাবে।’

মিরপুর উপজেলার সদরপুর গ্রামের কালু শেখ বলেন, ‘৩০টি গরু কিনে ঢাকায় গিয়েছিলাম। ২০টি গরু ফেরত আনতে হয়েছে। এগুলোর রাখার জায়গা নেই। তাই যার যার কাছে থেকে গরু কিনেছিলাম তার তার বাড়িতে রেখে এসেছি। হাট খুললেই বিক্রি করার চেষ্টা করবো।’

কুষ্টিয়া শহরের জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমি তিনটি গরু নিয়ে ঢাকাতে যাই। তিনটি গরুই ফেরত এসেছে। গরুর যে দাম বলেন ক্রেতারা তাতে মাংসের হিসেবে মনপ্রতি ১২ হাজার টাকা পড়ে। কিছুদিন আবার লালন পালন করে বিক্রি করলে মনপ্রতি ২০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। তাতে কিছুটা লোকসান কম হবে।’

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, পাটুরিয়া ঘাটের কাছে যানজট থাকায় তারা ঈদের দিন আসতে পারেনি।’

গরু পালনকারী ও ব্যবসায়ীরা জানান, তিন ভাগের একভাগ গরুও বিক্রি করতে পারেনি তারা। ক্রেতারা দাম কম বলায় পরিবহন খরচের লোকসান মাথায় করেও গরু ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন তারা।

কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এবার করোনা মহামারির কারণে মানুষ কোরবানি কম দিয়েছে। আগের মতো কোরবানির গরু বেশি দামে কেনার মতো মানুষের মানুষিক অবস্থা নেই।’

জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের হিসেব মতে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলায় ১৭ হাজারের বেশি খামারে ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়। এছাড়া জেলা জুড়ে প্রান্তিক কৃষকদের কাছে আরও দেড় লাখের বেশি গরু ছিল। গরুর পাশাপাশি দেড় লাখ ছাগল ও ৪ হাজার ভেড়া লালন পালন করা হয়েছিল।

জেলায় মোট আড়াই লাখ গরু মোটাতাজা করা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় নেয়া হয়েছিল প্রায় দেড় লাখ গরু। তার অর্ধেক গরু এবার ফেরত এসেছে।

ঢাকা/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়