ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কোরবানির মাংস নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ৩ সন্তানসহ বিষপান করে মা

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৩, ২৩ জুলাই ২০২১   আপডেট: ২১:২৭, ২৩ জুলাই ২০২১
কোরবানির মাংস নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ৩ সন্তানসহ বিষপান করে মা

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মুর্শিদা আক্তার

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় ইয়ার মোহাম্মদের বাসায় তার বোন পারভীন আক্তার (২৪) কোরবানির মাংস পাঠালে তা নিতে চাননি ইয়ার মোহাম্মদের স্ত্রী মুর্শিদা আক্তার। সেই মাংস ফেরত পাঠাতে না পারায় স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে তিন সন্তানসহ নিজে বিষপান করে আত্মহত‌্যার চেষ্টা করেন গৃহবধূ মুর্শিদা আক্তার (২৫)। 

বিষপানের ঘটনায় মুর্শিদা আক্তারের ১৪ মাস বয়সী শিশু কন্যা মাইনুর মারা যায়। বুধবার (২১ জুলাই) রাতে মহেশখালীর সিপাহীপাড়া গ্রামে ইয়ার মোহাম্মদের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। মহেশখালীর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশিক ইকবাল এ তথ্য  নিশ্চিত করেন।

সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, ইয়ার মোহাম্মদের বাবা মো. জামাল উদ্দিন বৌমা মুর্শিদা আক্তারকে নিয়মিত নামাজের তাগিদ দিতেন। এ নিয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে মুর্শিদা আক্তারের ঝগড়া হয়। এ সব ঘটনায় ইয়ার মোহাম্মদের ছোট বোন পারভীন আক্তারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিলো না মুর্শিদার। ঈদের দিন পারভীন আক্তার তার ভাই ইয়ার মোহাম্মদের বাড়িতে কোরবানির মাংস পাঠালে ক্ষিপ্ত হন মুর্শিদা। ননদ পারভীনের মাংস নিতে নারাজ তিনি। ঠিক একইভাবে ইয়ার মোহাম্মদও মুর্শিদার বাবার বাড়ি থেকে পাঠানো মাংসের তরকারি খেতে চাননি। এভাবে স্বামী-স্ত্রী মধ্যে কাটাকাটির এক পর্যায়ে ইয়ার মোহাম্মদ বাইরে গেলে স্ত্রী মুর্শিদা রাত ১১টার দিকে ঘরের দরজা বন্ধ করে তিন সন্তান রাকিব (৫), নাফিজা (৩), মাইনুরকে (১৪ মাস) বিষ খাইয়ে নিজেও বিষপান করেন।  

পরে স্থানীয়রা ছেলে-মেয়েদের কান্নাকাটির আওয়াজ শুনে ঘরের দরজা ভেঙে তাদের মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে মহেশখালী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে মাইনুরকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। বাকি তিনজনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

এ ঘটনায় শিশু রাকিব (৫) ও নাফিজা (৩) সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও মা মুর্শিদা এখনও হাসপাতালে। অবস্থার উন্নতি হলেও পুরোপুরি কথা বলতে পারছেন না তিনি। 

মুর্শিদা আক্তারের বোন জান্নাত বেগম (৩৪) রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার বোনকে নির্যাতন করা হয়েছে। যার কারণে তিনি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন। ইয়ার মোহাম্মদের পরিবারের সকলের কাছে আমার বোন ছিলেন অবহেলিত এবং প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হতেন। আমরা এর বিচার চেয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।’ 

ইয়ার মোহাম্মদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মুর্শিদা আমার ১৪ মাসের মেয়েকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে। এখন উল্টো আমার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিচ্ছে মুর্শিদার বাবার বাড়ির লোকজন। ঘটনাস্থলে পুলিশ তদন্তে গিয়েও আমার দোষ পায়নি। এলাকাবাসীও বলছে আমি নির্দোষ।’ 

এ ব্যাপারে মহেশখালীর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশিক ইকবাল রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই ঘটনায় এখনও কোনো পক্ষ থেকে মামলা হয়নি। ঘটনার তদন্ত চলছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

/বকুল/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়