ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনা চিকিৎসার খরচ রোগের মাত্রা অনুযায়ী 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২৫ জুলাই ২০২১  
করোনা চিকিৎসার খরচ রোগের মাত্রা অনুযায়ী 

‘আক্রান্তের মাত্রা, ধরণ অনুযায়ী খরচ হয় করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায়। আক্রান্তের মাত্রা কম হলে সরকারি হাসপাতালের দেওয়া চিকিৎসাতেই বেশিরভাগ রোগী ভালো হয়ে যায়। এতে তেমন খরচ হয় না। আমি ২০ দিন আক্রান্ত ছিলাম। আক্রান্ত হয়ে বুঝেছি কতটা কষ্ট হয়।’ 

করোনায় আক্রান্ত থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মরিয়ম বেগম এমনটাই বলছিলেন। 

মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আমি করোনা আক্রান্ত হয়ে ২০ দিন বাড়িতেই চিকিৎসা নিয়েছি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে সরকারি ওষুধ পেয়েছি। সেইসঙ্গে বিভিন্ন পরীক্ষা, অন্যান্য ওষুধ কিনতে হয়েছে। ফলমুল ও পুষ্টিকর খাবার বেশি খেতে হয়েছে। চিকিৎসা বাবদ ২০ দিনে আমার ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে যাদের শ্বাসকষ্ট একটু বেশি, তাদের ৪০-৫০ হাজার টাকা কিংবা তারও বেশি খরচ হচ্ছে।’ 

মরিয়ম বেগম জানান, তার পরিবারে তিনজন করোনা আক্রান্ত হন। বাবা, মা এবং বাবা-মাকে দেখাশোনা করা খালা। তার মা আগের চেয়ে সুস্থ। মার চিকিৎসা খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকার মতো। বাবার বিভিন্ন পরীক্ষা করতে গিয়ে এবং ওষুধ বাবদ ৫০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়ে গেছে। যদিও তিনি এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি।

করোনা আক্রান্ত হয়ে মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৮ দিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন অঞ্জনগাছী গ্রামের বাবুল হোসেন (৮৫)। বাবুল হোসেনের মেয়ে লাকী খাতুন বলেন, বাবাকে সিরিয়াস অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৮ দিন এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আগের চাইতে এখন বেশ ভালো। সরকারিভাবে ওষুধ ও সেবা পাওয়ায় খরচ অনেক কম হয়েছে। তারপরও বাইরে থেকে টেস্ট করা এবং সব ওষুধ হাসপাতালে না পাওয়ায় একটু খরচ হয়েছে। 

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সরূপদহ গ্রামের মনসুর আলী (৬০)। তার ছেলে সুজন আলী বলেন, কয়েক দিন থেকে জ্বর-ঠাণ্ডা তাই বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে করোনা টেস্ট করে পজেটিভ আসে। প্রায় সুস্থ হয়ে গেছেন। খরচ বলতে খুব একটা হয়নি। বাইরে থেকে ৫০০-৭০০ টাকার ওষুধ কেনা লেগেছে। বাকি সবই হাসপাতাল থেকে দিয়েছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক করোনা রোগীর স্বজন কালাম হোসেন জানান, হাসপাতাল থেকে সব ওষুধ দেয় না। প্রতিদিন হাসপাতালে ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। রোগীর সব সময় অক্সিজেন দিতে হয়েছে। সিটি স্ক্যান এবং পরীক্ষা করতে হয়েছে হাসপাতালের বাইরে। এতে খরচ আরও বেড়েছে। 

করোনা আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন এমন কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেলে করোনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিব ইবনে জুবায়ের জানান, করোনায় আক্রান্ত হলে সবচেয়ে জরুরি হলো ভয় না পাওয়া। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, সেই সঙ্গে বাড়িতে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে। যদি আক্রান্তের মাত্রা কম হয় এবং রোগী বাড়িতে চিকিৎসা নেন তাহলে তেমন খরচ হচ্ছে না। আর যদি অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হয় এবং আইসিইউ বা সিসিইউতে ভর্তি করতে হয়, তাহলে খরচটা অনেক বেশি হয়, যা বহন করা নিম্নবিত্ত মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। 

করোনা আক্রান্ত রোগীদের তারা সর্বোচ্চ সেবা দিতে চেষ্টা করছেন বলে জানান মেডিকেল অফিসার ডা. রাকিব ইবনে জুবায়ের। 

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এম এ মোমেন বলেন, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চারটি আইসিইউ বেড রয়েছে। তবে আইসিইউ বেড রয়েছে নামমাত্র। যে সব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন, তা নেই।

কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, করোনা সংক্রমণ রোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। করোনা আক্রান্ত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কাঞ্চন/বকুল

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়