ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে নিহত ১৭ জনের কবর ঢালাই

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০৯, ৮ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ১৪:০৮, ৮ আগস্ট ২০২১
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে নিহত ১৭ জনের কবর ঢালাই

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে নিহতদের মরদেহ বাড়ির উঠানেই দাফন করা হয়েছে। একই সঙ্গে কবরগুলোর ওপরে মজবুত করে ঢালাই দেওয়া হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৬ জন ও শিবগঞ্জ উপজেলার ১ জন আছেন। গত শুক্রবার (৬ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের মৃত ১৬ জনের লাশ ঢালাই করা হয়। এরপর শনিবার (৭ আগস্ট) সকালে ওই নৌকার মাঝির কবর ঢালাই করে দেওয়া হয়েছে। বজ্রপাতে মারা যাওয়ায় মরদেহ কবর থেকে চুরির ভয়ে ঢালাই দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা।

বুধবার (৪ আগস্ট) দুপুরে বজ্রপাতে ১৭ জনের মৃত্যুর পর রাতেই একই পরিবারের ছয় জনকে বাড়ির উঠানে দাফন করা হয়। এই ছয়জন হলেন, বাড়ির মালিক তোবজুল হক, তার স্ত্রী জামিলা বেগম, মেয়ে লাচন, ছেলে বাবুল, সাদিকুল ইসলাম ও সাদিকুলের স্ত্রী টকিয়ারা বেগম। তাদেরকে পাশাপাশি দাফন করা হয়।

বজ্রপাতে মৃত তোবজুলের জামাই মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘এখানে আমার শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের ছয় সদস্যকে দাফন করা হয়েছে। আমরা শুনেছি বজ্রপাতে মৃতদের লাশগুলো কবর থেকে চুরি করে নেওয়া হয়। সে ভয়ে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) বিকেলে সিমেন্টের ঢালাই করেছি। ছয়টি কবর ঘিরে তিন ফুট ইটের গাঁথুনি দিয়ে তার ওপরে ঢালাই করা হয়েছে।’

নিহত তোবজুলের প্রতিবেশী তসিকুল জানান, তাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই মারা গেছে। তাই এলাকার লোকজনই তাদের কবর খনন, দাফন কাজ ও কবরের ওপরে সিমেন্টের ঢালাইয়ের কাজ করেন। লাশগুলো সুরক্ষিত রাখতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় রাজমিস্ত্রি সোহেল রানা ওই ৬ জনের কবর ঢালাই করেছেন। তিনি জানান, দাদা, নানাদের বলতে শুনেছি, বজ্রপাতে মৃত ব্যক্তির লাশ নাকি খুব দামি। এসব দিয়ে নাকি দামি জিনিসপত্র তৈরি হয়। তাই লাশ চুরি করে নেয়। প্রায় ৪ বছর আগে এই গ্রামে বজ্রপাতে মারা যাওয়া একজনের বাড়ির পেছন থেকে লাশ চুরি হয়ে যায়। লাশ যাতে চুরি করতে না পারে তাই মজবুত করে ঢালাই দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৭ আগস্ট) সর্বশেষ নৌকার মাঝি রফিকুল ইসলামের কবর ঢালাই দেন তার জামাই রমিজ আলী। তিনি বলেন, ‘সদর উপজেলার যখন ১৬ জনের কবরে ঢালাই করে দেওয়া হয়েছে। তখন চুরির ভয়ে আমরাও ঢালাই করার সিন্ধান্ত নেই।।স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রিকে নিয়ে এসে কবরে ঢালাই করা হয়।’

এছাড়াও বাকি ১০ জনের লাশ পৃথক ৪টি জায়গাতে দাফন করা হয়। এ বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন নারায়নপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামার উদ্দীন হোদা।

বজ্রপাতে মৃত ১৭ জন হলেন— সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ঘাটাপাড়ার সাত্তার আলীর ছেলে সহবুল (৩০), চর সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের টিপুর স্ত্রী বেলী বেগম (৩২), মহরাজনগর ডানপাড়ার জামালের ছেলে লেচন (৫০), রফিকুল ইসলামের ছেলে বাবলু (২৬), একই গ্রামের মৃত সৈয়ব আলীর ছেলে তোবজুল (৭০), তোবজুলের স্ত্রী জমিলা (৫৮), ছেলে সাদল (৩৫), তেররশিয়া দক্ষিণপাড়ার মৃত মহবুলের ছেলে রফিকুল (৬০), সূর্যনারায়ণপুরের ধুনু মিয়ার ছেলে সজিব (২২), একই গ্রামের সাহালালের স্ত্রী মৌসুমী (২৫), বাবুডাইংয়ের মকবুলের ছেলে টিপু (৪৫), কালুর ছেলে আলম (৪০), মোস্তফার ছেলে পাতু (৪০), সুন্দরপুরের সেরাজুলের ছেলে আতিকুল ইসলাম ডাকু (২৪), ফাটাপাড়ার সাদিকুলের স্ত্রী টকিয়ার বেগম (৩০), জনতার হাট গ্রামের বাবুর ছেলে তামিম (৫) ও নৌকার মাঝি শিবগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ পাঁকা গ্রামের রফিকুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (০৪ আগস্ট) দুপুরে বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাঁকা ঘাটে বজ্রপাতে বরপক্ষের ১৬ জন এবং স্থানীয় এক মাঝি ঘটনাস্থলেই মারা যান। বরপক্ষের মোট ৪৭ জন সদস্য পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে কনের বাড়িতে যাওয়ার পথে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বজ্রপাতের ঘটনায় আরও অন্তত ১২ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।

শিয়াম/বুলাকী

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়