ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

এমপিকে ইউপি চেয়ারম্যানের গালমন্দ, প্রতিবাদ করায় গ্রাম পুলিশকে মারধর

চাঁদপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৬ আগস্ট ২০২১   আপডেট: ০৬:৪৫, ১৬ আগস্ট ২০২১
এমপিকে ইউপি চেয়ারম্যানের গালমন্দ, প্রতিবাদ করায় গ্রাম পুলিশকে মারধর

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি আসনের সংসদ সদস্য মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমকে প্রধানমন্ত্রীর গণটিকাদান কার্যক্রম প্রসঙ্গ নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন ৬নং বড়কুল ইউপি চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন মিয়াজী। আর একজন সেক্টর কমান্ডারকে এই গালমন্দ করার বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করেন গ্রাম পুলিশ স্বপন। আর এতেই ক্ষীপ্ত হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান কবির তার সহযোগীদের সাথে নিয়ে গ্রাম পুলিশ স্বপনকে মারধর করেন। চাকরি খেয়ে ফেলে হামলা-মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে স্বপনকে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দেন। অসহায় সংখ্যালঘু স্বপন এখন চাকরি হারানোর ভয় এবং প্রাণনাশের আশঙ্কা নিয়ে দিনাতিপাত করছেন।

স্থানীয় ফরহাদ হোসেন সাদ্দাম, নিত্যনন্দ সূত্রধরসহ একাধিক লোক গণমাধ্যমকর্মীদের জানানা, চেয়ারম্যান কবির প্রভাব বিস্তার করে গ্রাম পুলিশের ওপর প্রায়ই অত্যাচার চালান। তার বিরুদ্ধে নানান দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। এর আগেও এক নারী গ্রাম পুলিশকে তিনি অহেতুক মারধর করেছেন। এবার গণটিকা কর্মসূচিতে অন্যান্য গ্রাম পুলিশের সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করছিলেন স্বপন সাহা। ওই সময় চেয়ারম্যান তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে টিকা নিতে আসা লোকজনের ভীড় দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমসহ উন্নয়ন কমিটির লোকদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। চেয়ারম্যানের গালমন্দের প্রতিবাদ করেন গ্রাম পুলিশ স্বপন সাহা।

তখন চেয়ারম্যান কবির স্বপন সাহাকে বেধরক মারধর করেছেন। চেয়ারম্যানের এরূপ একাধিক ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে এবার সকল গ্রাম পুলিশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। সবাই একজোট হয়ে স্বপন সাহাকে বাদী করে জেলা প্রশাসকের নিকট চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযাগ এবং থানায় মামলা করার ব্যবস্থা করেছেন।

ঘটনা প্রসঙ্গে এই প্রতিবেদককে স্বপন সাহা জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে করোনার গণটিকা কার্যক্রম হাতে নেয়। যা সফল করতে আমাদের সাংসদ মেজর রফিক স্যার ইউপি চেয়ারম্যানদের নানা দিক-নির্দেশনা দেন। গত ৭ আগস্ট সেই নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে টিকাদানকারীদের লাইন বড় হওয়ায় তা ঝামেলা মনে করে এমপি রফিক মহোদয়কে নানান অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। একজন সেক্টর কমান্ডার অর্থাৎ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানকে এভাবে গালাগাল করা আমি মেনে নিতে পারিনি বলে আমি ইউপি চেয়ারম্যানের এ কাণ্ডের প্রতিবাদ করি। আর তাই সকলের সামনে রাষ্ট্রীয় গ্রাম পুলিশের পোষাক পরিহিত অবস্থায় আমাকে ওই ইউপি চেয়ারম্যান কবির তার দলবলসহ বেধরক মারধর করেন। এরপর আমি যদি এই ঘটনা কোথাও বলি বা বিচার দেই। তাহলে আমার গ্রাম পুলিশের চাকরি খেয়ে ফেলে আমাকে নানান হামলা মামলায় ষড়যন্ত্রে হয়রানি করার হুমকি দিচ্ছেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার পেতে জেলার মান্যবর জেলা প্রশাসক বরাবরও লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

এদিকে ঘটনার পর ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন মিয়াজী না এসে গা ঢাকা দেন বলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তবে এই কয়দিন ইউনিয়ন পরিষদে না আসলেও ১৫ আগস্ট পরিষদে এসে জাতীয় শোক দিবসের আয়োজন করতে দেখা গেছে ওই ইউপি চেয়ারম্যান কবিরকে।

এ অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন মিয়াজী গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, শারিরীক সমস্যায় পরিষদে আসি নাই। সামনে নির্বাচন হওয়ায় একটি পক্ষের হয়ে ওই গ্রাম পুলিশ স্বপনসহ আরও কয়েকজন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এমপিকে গালমন্দ এবং রাষ্ট্রীয় পোষাক পড়া অবস্থায় গ্রাম পুলিশ স্বপন সাহাকে মারধরের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, ‘গণটিকা কার্যক্রমে স্বপন তার পছন্দের লোকজনকে সামনে নিয়ে আসছিল বলে অভিযোগ পাওয়ায় আমি শুধু তাকে সামান্য বকাঝকা করেছি। আর ওকে ( স্বপন সাহা) মিথ্যা মামলা ও হয়রানি বা চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি আমি দেইনি। এখন শুনছি বিষয়টি নিয়ে স্বপন প্রশাসনের কাছে গেছে। এখন তদন্তে যদি আমাকে দোষী প্রমাণিত করে। তাহলে যা শাস্তি হবে আমি তা অবশ্যই মাথা পেতে নিবো।’

রোববার এ ব্যপারে হাজীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন সম্পর্কে তার গ্রাম পুলিশের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে সেটি আমরা মামলা নিয়ে নিয়েছি। তাকে জীবনের নিরাপত্তাসহ তাকে সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।

এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি জানান, ঘটনাটি তদন্ত করে জানানোর জন্য হাজীগঞ্জের ইউএনও মোমেনা আক্তারকে নির্দেশনা দিয়েছি।

জয়/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়